E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দাদন ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে দিশেহারা নিয়ামতপুরের সাধারণ মানুষ 

২০২০ ডিসেম্বর ০৫ ১৬:৩১:২২
দাদন ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে দিশেহারা নিয়ামতপুরের সাধারণ মানুষ 

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলাসহ জেলাজুড়ে সাধারণ মানুষ দাদন ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দাদন ব্যবসায়ীদের কব্জা থেকে বের হতে না পেরে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে তাদের জীবন। ফলে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অপর দিকে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া ভোক্তভোগী এক মাদ্রাসার শিক্ষককে সুুুদের টাকা দিতে না পারায় তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, নিয়ামতপুর উপজেলায় কিছু ভদ্র শ্রেণির নামধারী লোক অবৈধভাবে পুঁজি গড়ে তুলে দাদন ব্যবসা শুরু করেছে। আবার অনেকে এনজিও ও সমিতি থেকে স্বল্প পরিমাণ সুদে ঋণ নিয়ে দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে অসহায় মানুষদের কাছে সেটা বেশি লাভে দাদন দিচ্ছে। এক হাজার টাকা নিলে প্রতিমাসে দাদন ব্যবসায়ীকে ১শ’ থেকে ৩শ’ টাকা সুদ দিতে হয়। আবার কেউবা জমি, মেশিন, বসতবাড়ি, বাড়ির প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র বন্ধক রেখে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করছে। কেউ কেউ বাড়ির দলিল এবং ব্যাংকের চেক রেখে চড়া সুদে টাকা দিচ্ছে। চক্রবৃদ্ধিহারে সুদাসল দিতে দেরী হলে সুদারুরা চেকে মোটা অংক বসিয়ে আদালতে মামলা করে হয়রানী করছে। অনেকেই ইতোমধ্যেই গৃহহারা হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

নিয়ামতপুর উপজেলার কন্যাপাড়া গ্রামের মৃত আজিমুদ্দিনের ছেলে আশেকপুর মাদ্রাসার শিক্ষক ভুক্তভোগী মোঃ আনিছার রহমান অভিযোগ করে বলেন, তিনি উপজেলার গরাই গ্রামের নরেশ চন্দ্র বর্মনের ছেলে রামনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ভিম চন্দ্র বর্মনের কাছে ব্যবসায়িক কারণে ২৭ জুলাই ২০১৭ তারিখে ১ লাখ ৫০হাজার টাকা গ্রহন করি। পরে আরো ১ লাখ টাকাসহ মোট ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা গ্রহন করি। বিনিময়ে তাকে দিতে হয় ব্যাংকের ফাঁকা চেক, তিন টাকার নন জুড়িশিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর। সে টাকার ওপর প্রতিমাসে প্রথম ৫ মাস ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার জন্য ৭ হাজার টাকা তার পর থেকে ২ লাখ ৫ হাজার টাকার জন্য সুদ দিতে হয় ১২ হাজার টাকা। এভাবে ৩ বছরে ৪ লাখ ৭ হাজার সুদের টাকা নিয়মিত পরিশাধ করে আসছি। কিন্তু করোনা মহামারীর জন্য গত জুন মাস থেকে কোন সুদের টাকা দিতে পারি নি। আমি ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় চেয়েছি তার আসল টাকা পরিশোধ করার জন্য। তার পরেও টাকা না দিলে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। বর্তমানে আমি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি।

শুধু আনিছুর রহমান নয় উপজেলার বিভিন্ন মহল্লা থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন নিরীহ মানুষগুলো।
আইন সম্মত বা বৈধ না হওয়া সত্বেও এই ব্যবসার সাথে জড়িতদেরও নানা কুট কৌশলের কারণে সমাজের বিরুদ্ধে ‘টু’ শব্দটি পর্যন্ত করা হচ্ছে না। কিন্তু দিনে দিনে এর ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এলাকার কতিপয় লোকের সাথে এই ব্যাপারে আলাপ করলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সুদের ব্যবসা এই এলাকায় ভয়াবহ বিষের ন্যায় ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা যদি সুদ ব্যবসায়ীদের ব্যবস্থা না নেয় তাহলে ভবিষ্যতে এই অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে। এই ব্যাপারে থানা-পুলিশেরও এগিয়ে আসা উচিৎ।

দাদন ব্যবসায়ীরা টাকা দেয়ার সময় জমির দলিল, ব্যাংকের ফাঁকা চেক ও সাদা ষ্ট্যাম্পে সাক্ষর নেয়। যখন কেউ টাকা ফেরত দিতে পারেনা তখন ওই চেক ষ্ট্যাম্পে ইচ্ছেমত টাকা বসিয়ে পাওনাদারের নিকট দাবি করে। এমনকি প্রশাসনিক সাহায্য নিয়েও তারা ওই টাকা আদায় করে।

অনেক দাদন ব্যবসায়ীরা অন্য ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে রাতা রাতি লাখ লাখ টাকার মালিক বনে যাওয়ার আশায় এই দাদন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের বেড়া জালে বন্দী হয়ে অনেক সহজ সরল সাধারণ মানুষ জমি, ঘড়-বাড়ি থেকে শুরু করে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে।

অনেক এলাকায় দাদন ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে মানুষ ঘড়-বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে তাদের অত্যাচারে বাড়ি ফিরতে পারছেনা। আসল টাকার সুদ দিতে দিতে চক্রবৃদ্ধি হার ছাড়িয়ে দ্বিগুণ টাকা দিয়েছে। কিন্তু এর পরেও দাদন ব্যবসায়ীর পাওনা এখনও রয়েছে।

এ রকম দাদন ব্যবসায়ী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে রয়েছে। এসব দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া দরকার এবং গ্রামের সাধারণ মানুষদের সচেতন করে তুলে তাদের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করা দরকার বলে দাবি করেন সুধী সমাজ।

(বিএম/এসপি/ডিসেম্বর ০৫, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test