E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘ভুয়া মন্দির দেখিয়ে চাল আত্নসাতের বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’

২০২০ ডিসেম্বর ০৫ ১৭:০৬:২৭
‘ভুয়া মন্দির দেখিয়ে চাল আত্নসাতের বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : ভুয়া মন্দির দেখিয়ে কেউ চাল আত্নসাৎ করেছে এমন কোন অভিযোগ পায়নি। কেউ আমাকে অবগত করেনি। যদি কেউ আবেদন করে, তাহলে অবশ্যই তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে শনিবার বিকালে মুঠোফোনে এ কথা জানিয়েছেন উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি, জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিনয় কুমার চক্রবর্তী। 

জানা গেছে, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলাতে শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে আগত ভক্তদের আপ্যায়নের লক্ষে ২১টি মন্দিরে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করা হয়। অনেক মন্দির না থাকলেও সে নামে বরাদ্দ গ্রহণ করে। এ বিষয়ে উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নের সাধুখালী গ্রামবাসীর পক্ষে বিভিন্ন শ্রেণীর ১৬জন স্বাক্ষরিত অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট প্রদান করেন।

অভিযোগে বলেন, জঙ্গল ইউনিয়নের সাধুখালী গ্রামের নিশিকান্ত মন্ডলের ছেলে ও উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিতিশ চন্দ্র মন্ডল শ্রী শ্রী যুগোল কিশোর অঙ্গণ ও সাধুখালী সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরের নামে গত দূর্গা পূজার পরে সরকারী বরাদ্দের অর্থ গ্রহণ করেছে। ওই নামে কোন পূজা পার্বন বা মন্দিরের অস্তিত্ব নেই। দূর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্নসাৎ করেছে। একই ভাবে জঙ্গল ইউনিয়ন ও উপজেলার বিভিন্ন মন্দিরের নামে অর্থ আত্নসাৎ করেছে। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান।

বালিয়াকান্দি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাম গোপাল চট্রোপাধ্যায় ও সাধারণ সম্পাদক নিতিশ চন্দ্র মন্ডল স্বাক্ষরিত ২৫টি মন্দিরে বিশেষ অনুদানের জন্য আবেদন করেন। শারদীয় দুর্গাপূজা-২০২০ উদযাপন উপলক্ষে ২১টি মন্দিরের অনুকুলে প্রতিটি মন্দিরে ৫শত কেজি করে জিআর চাল মন্দিরে আগত ভক্তবৃন্দের খাওয়ানোর জন্য বরাদ্দ প্রদান করা হয়। রাজবাড়ী জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা (চ.দা.) সৈয়দ আরিফুল হক স্বাক্ষরিত গত ২১ অক্টোবর তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুকুলে উপ-বরাদ্দ প্রদান করেন।

অনুদানপ্রাপ্ত ২১টি মন্দির হলো, শ্রী শ্রী রাধানাথ অঙ্গণ, জামালপুর সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, তুলশীবরাট বলাই মাষ্টারের বাড়ী দুর্গা মন্দির, রায়পুর সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, ইলিশকোল-রায়পুর সার্বজনীন শ্মশান মন্দির, সাধুখালী শ্রী শ্রী যুগল কিশোর অঙ্গণ, পুরাতন ঘুরঘুরিয়া বলরাম মন্ডলের বাড়ী সার্বজনীন পুজা মন্দির, তালতলা সার্বজনীন পূজা মন্দির, সোনাপুর বাজার সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, আলোকদিয়া সাহাপাড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, বেতেঙ্গা সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, বালিয়াকান্দি শ্মশান মন্দির, সাধুখালী সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, সমাধিনগর আর্য্য সংঘ সার্বজনীন নাট মন্দির, বহরপুর সাহাপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, সোনাপুর দক্ষিণপাড়া চন্দনা সার্বজনীন পুজা মন্দির, বন্যতৈল কাত্যায়নী মন্দির, সাধুখালী সরকার বাড়ী সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, রায়পুর উত্তরপাড়া দুর্গা মন্দির, ইলিশকোল কলেজপাড়া দুর্গা মন্দির, নতুন ঘুরঘুরিয়া রাজন সরকারের বাড়ী দুর্গা মন্দির।

তবে এ মন্দিরের তালিকার মধ্যে নারুয়া ও ইসলামপুর ইউনিয়নে বিশেষ বরাদ্দ থেকে তাদের কোন মন্দিরে বরাদ্দ প্রদান করা হয়নি। অথচ সভাপতি ও সেক্রেটারীর বসতবাড়ীতে অনুদান নিয়েছেন বলে দুই ইউনিয়নের পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বালিয়াকান্দি ইউনিয়নের তালতলা সার্বজনীন পূজা মন্দিরের সভাপতি বিকাশ রায় বলেন, আমি অনুদানের ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর গত রবিবার (২৯ নভেম্বর) উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি-সেক্রটারীসহ এসে ১৩ হাজার টাকা প্রদান করেছেন।

এদিকে শুক্রবার বিকালে উপজেলা পূজা পরিষদের সভাপতি রাম গোপাল চট্রপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিতিশ চন্দ্র মন্ডলের সঞ্চালনায় বালিয়াকান্দি উপজেলা কেন্দ্রীয় মহাশ্মশান ও মন্দিরে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নারুয়া ও ইসলামপুর ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দসহ উপজেলা পুজা পরিষদের কোষাধ্যক্ষ, প্রচার সস্পাদকসহ বেশির ভাগ সদস্যদের জানানো হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের কোষাধ্যক্ষ উত্তম কুমার দাস, প্রচার সম্পাদক নিভাষ মজুমদার বলেন, দুর্গাপূজার পর কোন ধরনের সভা পূজা উদযাপন কমিটি করেনি। শুক্রবার মিটিং আহবান করা হলেও আমাদেরকে ডাকা হয়নি। এ কমিটি মনে হচ্ছে নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি।

উপজেলা পূজা পরিষদের সহ-সভাপতি কমল কান্তি সাহা ও সহ-সভাপতি সুজয় কুমার পাল, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক অটল কুমার সাহা বলেন, কমিটির সভা প্রত্যাখ্যান করেছি।

উপজেলা পূজা পরিষদের সহ-সভাপতি বিধান চন্দ্র ঘোষ, যুগ্ন সম্পাদক ও জঙ্গল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি কল্লোল কুমার বসু, মহিলা সম্পাদিকা ও উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী বাসন্তি স্যানাল বলেন, সভায় কারো বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিভিন্ন সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা চাই সংগঠন মজবুত হোক। কেউ যদি অনিয়ম দুর্নীতি করে থাকে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

উপজেলা দুর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বালিয়াকান্দি সরকারী কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, দুর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির কাজ হলো, সমাজের যুব সমাজ, ছাত্র সমাজসহ সকল শ্রেণীর মানুষকে দুর্ণীতি প্রতিরোধের লক্ষে সচেতন করে তোলা। সমাজকে দুর্ণীতির বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে সোচ্চার করা। কোন দুর্ণীতিবাজের পক্ষে কাজ করা নয়।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৫, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test