E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুর পৌর নির্বাচনে আ. লীগের মনোনয়ন পেলেন পারভেজ 

২০২০ ডিসেম্বর ১৯ ১৫:৩৪:৪৬
শরীয়তপুর পৌর নির্বাচনে আ. লীগের মনোনয়ন পেলেন পারভেজ 

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : পৌরসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে শরীয়তপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন লাভ করেছেন এ্যাডভোকেট পারভেজ রহমান জন (৩২)। শুক্রবার রাত সাড়ে ন'টা নাগাদ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের প্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে পারভেজ রহমানের নাম শরীয়তপুর পৌরসভার অাওয়ামী লীগের দলীয় মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। পারভেজ রহমান এর মনোনয়ন প্রাপ্তির সংবাদ মুহুর্তেই রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে শরীয়তপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

মরহুম আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র জন মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছে এমন খবরে বাধ ভাঙ্গা আনন্দে উচ্ছোসিত হয়েছেন দলীয় সকল স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। শুক্রবার রাতেই জন'র মনোনয়ন প্রাপ্তির আনন্দে শরীয়তপুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ মিছিল বের করে মিষ্টি বিতরন করেছেন দলীয় সমর্থকরা।

এবারের পৌরসভা নির্বাচনে শরীয়তপুর সদর পৌরসভা থেকে পৌরসভা আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগ যৌথভাবে ৫ জন প্রার্থীর নাম কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের নিকট প্রেরণ করেন। এরা হলেন বর্তমান মেয়র রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর মৃধা, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ্যাডভোকেট আলমগীর মুন্সী, শরীয়তপুর পৌরসভার ১নং প্যানেল মেয়র মোঃ বাচ্চু বেপারী এবং শরীয়তপুর জজ কোর্টের এপিপি পারভেজ রহমান জন। এছাড়াও নিজস্ব মাধ্যমে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমীন কোতোয়াল ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাহাড়। মনোনয়ন প্রত্যাশি সাতজন প্রার্থী থাকলেও ১৮ ডিসেম্বর রাতে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে, কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তের দিকে না তাকিয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা পারভেজ রহমান জন এর নাম নিজের পছন্দের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। জানা গেছে, আগামীকাল ২০ ডিসেম্বর পারভেজ রহমান জন জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে তার মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন। আগামী ১৬ জানুয়ারী ২০২১ তারিখে পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহনের কথা রয়েছে।

শরীয়তপুর জেলা শহরের পালং বাজার এলাকার এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান ও জিনাত রহমান দম্পতির প্রথম সন্তান পারভেজ রহমান জন। ১৯৮৮ সালের ১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন জন। তিনি ঢাকাস্থ স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন জন। তিনি বর্তমানে শরীয়তপুর জজ কোর্টের একজন সুনামধন্য তরুন আইনজীবী ও সহকারি পাবলিক প্রোসিকিউটর। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টেরও তালিকাভূক্ত একজন আইনজীবী জন।

পারভেজ রহমান জনের পরিবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিতে একটি ত্যাগী ও সমৃদ্ধ পরিবার। জন'র পিতা মরহুম এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান ১৯৭৭ সালে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের প্রথম আহ্বায়ক এবং ১৯৭৯ সালে জেলা যুবলীগের প্রথম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন কালিন সময়ে সাংবাদিকতা পেশার সাথে জরিত ছিলেন জন'র পিতা হাবিবুর রহমান। ৮০'র দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে শরীয়তপুরে আইন ব্যবসা শুরু করেন জনের প্রয়াত পিতা এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান। তিনি দুই বার শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। একাধিকবার তিনি শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে অনেক বড় ত্যাগ শিকার করে গেছেন এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান।

২০০১ সালের ৫ অক্টোবর ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দলীয় প্রার্থীর পক্ষ্যে কাজ করতে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সশস্ত্র হামলা ও সহিংসতায় নিজ বাড়িতে, স্ত্রী-সন্তানদের চোখের সামনে আপন ছোট ভাই মনির হোসেন মুন্সীসহ গুলিবিদ্ধ হয়ে নির্মমভাবে নিহত হন জনের পিতা হাবিবুর রহমান। হাবিবুর রহমান তখন একাধারে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, জজ কোর্টের পিপি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জন'র বয়স তখন মাত্র ১২ বছর। জন'র মা জিনাত রহমান ২০০৩ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদিকা পদপ্রাপ্ত হন। ২০০৮ সালে তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জিনাত হাবিব শরীয়তপুর সদর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালে জেলা আওয়মী লীগের সম্মেলনে জিনাত হাবিবুর রহমানকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। নানা রোগ ভোগের পর ২০১৮ সালের ১৯ আগষ্ট জন'র মমতাময়ী মা জিনাত হাবিব দুই পুত্র এবং এক কন্যা সন্তানকে এতিম করে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মৃত্যুবরণ করেন।

এ্যাডভোকেট পারভেজ রহমান জন বলেন, ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গের নির্দেশে আমার বাবা এবং চাচাকে আমাদের বসত ঘরের মধ্য, প্রকাশ্য দিবালোকে, আমাদের চোখের সামনে, নিমর্মভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পালন করতে গিয়ে, নৌকার প্রার্থীর পক্ষ্যে নির্বাচন করার অপরাধে আমার বাবা ও চাচাকে জীবন দিতে হয়েছিল। তখন আমার বয়স মাত্র ১২ বছর। আমার ছোট দু'জন ভাই বোন এবং আমার চাচার পরিবার নিয়ে আমরা ঘোর অন্ধকারে নিপতিত হই। ২০০১ সালে ১ নভেম্বর তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বাড়িতে আসেন। আমার মাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন তিনি। সেদিন থেকে তিনি আমাদের পরিবারের, আমাদের ভরণ-পোষণ ও লেখা পড়ার দায়িত্ব গ্রহন করেন। আমার বাবা ও চাচা হত্যা মামলা পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন করেন। আমার মায়ের চিকিৎসার ব্যয় ভারও মমতাময়ী নেত্রী বহন করেন। তিনি আমাকে নিজের সন্তানের মত মানুষ করেছেন। এখন তিনি আমাকে শরীয়তপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি এবং পরিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

আমি শরীয়তপুর পৌরবাসী সকলের কাছে দোয়া ও সমর্থন প্রার্থনা করছি। আমাকে সবাই ভোট দিবেন এবং দোয়া করবেন, আমি যেন নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়ন ও জনসেবা করতে পারি এবং মাননীয়া সভানেত্রীর মুখ উজ্জল করতে পারি।

শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু বলেন, আমরা শরীয়তপুরবাসী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি শরীয়তপুর পৌরসভায় একজন দেশপ্রেমিক শহীদের এতিম সন্তানকে মনোনয়ন দিয়েছেন। মনোনয়নপ্রাপ্ত পারভেজ রহমান জনের পিতা এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমানকে ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে সেদিন আওয়ামী লীগের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। তিনি বলেন, জনকে মনোনয়ন দেয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অপর চারজন প্রার্থীও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে পারভেজ রহমানের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়েছন। আমরা সবাই মিলে জনকে নির্বাচিত করে তার পিতার রক্তের ঋন কিছুটা হলেও শোধ করতে চাই।

(কেএন/এসপি/ডিসেম্বর ১৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test