E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

উচ্ছেদ করা অবৈধ ইটভাটা সোনালী ব্রিক্স আবারো কিভাবে গড়ে উঠছে?

২০২০ ডিসেম্বর ৩১ ১৫:০৫:১৫
উচ্ছেদ করা অবৈধ ইটভাটা সোনালী ব্রিক্স আবারো কিভাবে গড়ে উঠছে?

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : দিনাজপুরে ইট ভাটার আগ্রাসনে ফসলী জমি যেমন বিনষ্ট হচ্ছে,তেমনি উজার হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বিপর্যস্ত হচ্ছে, পরিবেশ।ফসলি জমি ধ্বংস করে ইটভাটায় ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলি জমির উর্বর ও সারযুক্ত উপরিভাগের মাটি। এতে করে জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। জমি হারিয়ে ফেলছে ফসল উৎপাদন ক্ষমতা। তেমনি যত্রতত্র গড়ে উঠা এসব ইট ভাটায় সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটার কালো বিষাক্ত ধোয়ায় এলাকার ফসল,গাছ-গাছালি বিনষ্টের পাশাপাশি পরিবেশের চরম ক্ষতি করছে। ফসলি জমি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর সম্প্রতি ১৪টি অবৈধ ইট ভাটা উচ্ছেদ করলেও সেগুলোর অধিকাংশ আবারো নতুন করে গড়ে উঠছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই উচ্ছেদ করা অবৈধ ইট ভাটাগুলো আবারো নতুন করে কিভাবে গড়ে উঠছে,তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে,পরিবেশ প্রেমিরা।

দিনাজপুরে আবাদি জমি,আবাসিক এলাকা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঝে গড়ে উঠেছে ছোট বড় প্রায় তিন শতাধিক ইটভাটা। আর এসব ইটভাটায় ইট তৈরীর জন্য কাটা হচ্ছে, জমির উপরিভাগের মাটি। শ্রমিকেরা এসব মাটি কেটে ট্রাক্টরে করে ইট ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। এই মাটি পুড়িয়ে তৈরী করা হচেছ ইট। আর জমির উপরিভাগের মাটি কাটার ফলে জমির উপরিভাগে ৪ থেকে ৬ ইঞ্চির মধ্যে থাকা জমির খাদ্যকণা ও জৈব উপাদান নষ্ট হচ্ছে। ফলে ওইসব জমিতে যে ফসল আবাদ হয় তার উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এছাড়াও জমির উপরিভাগ কাটার ফলে জমি নিচু হয়ে যাচ্ছে। এসব ইট ভাটার ফলে এক দিকে যেমন আবাদি জমির উর্বরা শক্তি হাারাচ্ছে অপরদিকে উজার হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল।

ইট ভাটার বিষাক্ত কালো ধোয়ায় ফসল ও গাছ-গাছালি বিনষ্ট হচ্ছে। ইটভাটার বিরূপ প্রভাবে বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের। বিগত বছরে সদর, বিরল, বোচাগঞ্জ, কাহারোল, বীরগঞ্জ, পার্বতীপুর, চিরিরবন্দও, বিরামপুর ও নবাবগঞ্জে অবৈধ ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোয়ায় বিস্তৃর্ণ ফসলী জমি ও গাছ-পালা পুড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।এতে অনেকেই হয়েছে,ক্ষতিগ্রস্থ।

বেসরকারী এক হিসেব অনুযায়ী গড়ে ্প্রতিটি ইটভাটা এক মৌসুমে ৩০ লাখ ইট উৎপাদন করে থাকে। গড়ে ১ ফুট গভীরতায় মাটি কাটা হলে একটি ভাটার জন্য বছরে মাটির প্রয়োজন হয় ১৫ থেকে ১২ একর জমির। সেই হিসেবে অনুযায়ী দিনাজপুরে ১৬০টি ইটভাটার কাজে ব্যবহারের জন্য বছরে প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার একর জমির মাটি কাটা হয়।

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. শাহাদৎ হোসেন খান লিখন এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট-ব্রী ্এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.আবু বকর সিদ্দিক সরকার জানান, মাটির উপরিভাগে যে গুরুত্বপূর্ণ জৈব পদার্থ থাকে তা নীচের মাটিতে থাকে না। জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ফেলা হলে আগামী ২০ বছরেও সেই জমির প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থের ঘাটতি পুরন হবে না।

কোন নিয়ম-নিতির তোয়াক্কা না করে ৩ ফসলী জমি,সংরক্ষিত বনাঞ্চল,আবাসিক এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাঝেই গড়ে উঠেছে ইট ভাটা। এসব ইট ভাটার নেই কোন পরিবেশের ছাড়পত্র বা লাইসেন্স। তার পরও বিভিন্ন কৌশলে তা চলছে। উচ্চ আদালতের মিথ্যা আদেশ দেখিয়ে ইটভাটা চালানোর অভিযোগে প্রায় অর্ধশত ইটভাটার মালিক জেল-হাজতও খেটেছেন। মামলারও চলছে বেশকয়েকজন ইট ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে। বীরদর্পে এর সত্যতাও স্বীকার করছেন,অবৈধ ইটভাটার মালিকরা।

ফসলি জমি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সম্প্রতি অবৈধ ইট ভাটা উচ্ছেদে মাঠে নামে পরিবেশ অধিদপ্তর। অভিযান চালিয়ে ১৪টি অবৈধ ইটভাটা ভেঙ্গে উচ্ছেদসহ ১০ টি ইট ভাটায় জরিমানা করা হয়েছে,৪৩ লাখ টাকা। কিন্তু, উচ্ছেদ করা ১৪টি অবৈধ ইট ভাটার মধ্যে কয়েকটি ইটভাটা আবারো নতুন করে গড়ে উঠছে।বিরল উপজেলার কাঞ্চনঘাট মহাদেবপুরের এমনি একটি উচ্ছেদ করা অবৈধ ভাটা সোনালী বিক্স ম্যানুফ্যাকচারার্স।

বুধবার বিকেলে সরজমিনে দেখা গেছে,ওই ইটভাটা নতুন করে তৈরিতে ব্যস্ত শ্রমিকরা। ইট ভাটার পাশে পড়ে আছে, জ্বালানী কাঠ ও খড়ির স্তুপ। ভাটার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক সচীন চন্দ্র রায় জানান,১০/১২ দিন আগে ওই ইটভাটা ভেঙ্গে দিয়ে গেছে,পরিবেশ অধিদপ্তর।তাই,ইট তৈরিতে তারা আবারো নতুন করে গড়ছেন ইটভাটা। এজন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করেই তা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

মুঠোফোনে সোনালী ব্রিক্স ম্যানুফ্যাকচারার্স এবং শীষ মহল জুয়েলার্স এর স্বত্বাধিকারী মো.আকরাম আলী জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর ভেঙ্গে দেয়ার পর তারা এবার পরিবেশ সম্মত ইট ভাটা তৈরি করছেন। সবকিছু ম্যানেজ করেই এবার তৈরি হচ্ছে,ইটভাটা।

এ বিষয়ে দিনাজপুর পরিবেশ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে সিনিয়র কিমিস্ট এ.কে.এম.ছামিউল আলম কুরসি জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া উচ্ছেদকৃত ইটভাটাগুলো কোনক্রমেই নতুন করে অবারো গড়ে তোলা যাবেনা। তারা কেউ নতুনভাবে পরিবেশ সম্মত ইটভাটা গড়ে তুলতে চাইলে আবারো পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করতে হবে। যাচাই-বাচাই এবং তদন্ত করে ছাড়পত্র দিতে গেলেও তা সময়ের ব্যাপার। উচ্ছেদকৃত ১৪ টি ইট ভাটার কোনটিকেই নতুন করে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। তাই,তা নতুন করে আবারো গড়ে তোলা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। কেউ তা করলে,দন্ডনীয় অপরাধ। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই উচ্ছেদ করা অবৈধ ইট ভাটাগুলো আবারো নতুন করে কিভাবে গড়ে উঠছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে,পরিবেশ প্রেমিরা। তবে, কি এর আগের অভিযান ছিলো নাজরানা পাড়াতে লোক দেখােেনা ? এমনি নানান প্রশ্নের সম্মুখিন এখন দিনাজপুর পরিবেশ অধিদপ্তর।

সরজমিনে দেখা গেছে, এসব অবৈধ ইট ভাটার কড়াল গ্রাসে একদিকে যেমন ফসলী জমি বিনষ্ট হচ্ছে, তেমনি বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ। তাই, এসব অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদেও অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর। ইটভাটাতুলো ভেঙ্গে-গুড়িয়ে দেয়। কিন্তু অদৃশ্য শক্তিতে আাবারো ইটভাটাগুলো গড়ে উঠছে কোন অনুমোদন ছাড়াই। শুধু লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান এবং জরিমানা নয়, ফসলী জমি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভাটাগুলো উচ্ছেদের দাবী জানিয়েছে, পরিবেশবিদ ও প্রকৃতিপ্রেমিরা।

(এস/এসপি/ডিসেম্বর ৩১, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test