E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তালতলীতে মাদ্রাসায় ভুয়া স্বাক্ষরে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ

২০২০ ডিসেম্বর ৩১ ১৫:৪৮:৪৭
তালতলীতে মাদ্রাসায় ভুয়া স্বাক্ষরে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি : বরগুনার তালতলী উপজেলার কড়াইবাড়িয়া এতিম মঞ্জিল বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় সহ-সুপার মোঃ আলা-উদ্দিন জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদনই করেননি এমন দুইজনকে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন বলে দেখানো হয়েছে। 

অভিযোগ রয়েছে মাদ্রাসার সহ-সুপার মাওলানা মোঃ আলা-উদ্দিন নিজেই জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে এ নিয়োগ নিয়েছেন। এমন অভিযোগ এনে মাদ্রাসার জমিদাতা মোঃ ইউসুফ আকন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গত চার মাস অতিবাহিত হলেও এ অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোন প্রতিকার পাচ্ছে না এমন অভিযোগ জমিদাতা ইউসুফ আকনের।

জানাগেছে, ২০০০ সালে উপজেলার কড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নের গেন্ডামারা গ্রামে ইউসুফ আকন কড়াইবাড়িয়া এতিম মঞ্জিল বালিকা দাখিল মাদ্রাসার নামে ১০০ শতাংশ জমি দান করেন। ওই জমিতে মোফাজ্জেল হোসেন ইউনুস মাষ্টার মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার করেন। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠাতা ইউনুস সহ-সুপার পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেন। ওই বিজ্ঞাপন নিয়ে গোপনে মাওলানা আলাউদ্দিন নিজেই ভুয়া নিয়োগ বোর্ড গঠন করেন। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারী ওই নিয়োগ পরীক্ষায় মাওলানা মোঃ আলা-উদ্দিন তার প্রতিদ্বন্ধি হিসেবে মাওলানা মোঃ ওবায়দুল্লাহ ও মাওলানা মোঃ মানজুরুল হককে দেখান। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ও মাওলানা মানজুরুল হক ওই পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেনি এবং আবেদনও করেনি।

ওই সময় থেকেই মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ছোটবগী গাবতলী দাখিল মাদ্রাসার সুপার পদে কর্মরত। ওই দুই জনকে ভুয়া প্রার্থী দেখিয়ে তাদের স্বাক্ষর জাল করে আলাউদ্দিন সহ-সুপার পদে নিয়োগ নিয়েছেন। ওই ভুয়া নিয়োগ বোর্ডের রেজুলেশন ও শিক্ষক নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল সিটে নিয়োগ কমিটির স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে এমন অভিযোগ প্রতিষ্ঠাতা ইউনুস মাষ্টার ও জমিদাতা মোঃ ইউসুফ আকনের।

অভিযোগ রয়েছে সুপার হিসেবে মাওলানা আবদুল কুদ্দুস নামে ওই নিয়োগ বোর্ডে যার স্বাক্ষর দেখানো হয়েছে ওই নামে কোন সুপার মাদ্রাসায় কোন দিনই ছিল না। এমনকি ওই নিয়োগ বোর্ড সম্পর্কে প্রতিষ্ঠাতা, জমিদাতা কেই অবগত নন। ২০১৯ সালের পয়েলা জুলাই ওই মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হয়। ওই সময়ে সহ-সুপার পদে মাওলানা আলাউদ্দিন তার কাগজপত্র দাখিল করেন। এমন খবরে মাদ্রাসাসহ এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। কিন্তু তিনি তার এ ভুয়া নিয়োগের কাগজপত্র গোপন করে উপজেলা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের যোগসাজসে এমপিওভুক্ত হন। বর্তমানে তার ইনডেক্স নম্বর গ-০০০১৬৩৯।

এই ভুয়া নিয়োগের মাধ্যমে তিনি গত দের বছর ধরে সরকারী অন্তত পাঁচ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন। তার এমন অনিয়মের অভিযোগ এনে মাদ্রাসার জমিদাতা মোঃ ইউসুফ আকন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েছেন কিন্তু গত চার মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও তিনি এর কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। অভিযোগ রয়েছে সহ-সুপার মোঃ আলা-উদ্দিন বিভিন্ন দপ্তর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এ বিষয়ে মাওলানা মোঃ মানজুরুল হক বলেন, ওই মাদ্রাসায় সহ-সুপার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহন তো দুরের কথা ওই পদে আমি আবেদনই করিনি।

মাওলানা মোঃ ওবায়দুল্লাহ বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল সিটে আমার নাম ব্যবহার এবং আমার স্বাক্ষর দেয়া হয়েছে। আমি কোনদিনই ওই মাদ্রাসায় সহ-সুপার পদে আবেদন এবং নিয়োগ পরীক্ষা দেইনি। ভুয়া নিয়োগ পত্রে আমার নাম ব্যবহার করায় আমার মান ক্ষুন্ন হয়েছে। আমি এ ঘটনার তদন্তপূর্বক শাস্তি দাবী করছি।

এ বিষয়ে মাদ্রাসার সহ-সুপার মাওলানা মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা। যথা নিয়মেই নিয়োগ হয়েছে। কিন্তু প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ও নিয়োগ বোর্ড সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর না দিয়ে দ্রুত ফোন কেটে দেন।

কড়াইবাড়িয়া এতিম মঞ্জিল বালিকা দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন ইউনুস মাস্টার বলেন, সহ-সুপার পদে যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি তা ঠিক। কিন্তু ওই বিজ্ঞপ্তিকে কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে আলাউদ্দিন ভুয়া নিয়োগ নিয়েছেন।

মাদ্রাসার বর্তমান সুপার মোঃ মাহবুব আলম নাশির বলেন, আমার আমলে সহ-সুপার পদে আলাউদ্দিন নিয়োগ নেননি। কিভাবে নিয়োগ নিয়েছেন তা আমার জানা নেই। তিনি আরো বলেন, তার নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের স্বাক্ষর সঠিক কিনা তাও আমি জানিনা।

বরগুনা জেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহদাত হোসেন বলেন, এভাবে নিয়োগ পরীক্ষা ও বোর্ড গঠন বে-আইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এন/এসপি/ডিসেম্বর ৩১, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test