E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

দিনাজপুরে উচ্ছেদ করা ইটভাটা নতুন করে গড়ে তোলায় আবারো ভেঙ্গে দিলো প্রশাসন

২০২১ জানুয়ারি ০১ ১৬:৫৯:১৭
দিনাজপুরে উচ্ছেদ করা ইটভাটা নতুন করে গড়ে তোলায় আবারো ভেঙ্গে দিলো প্রশাসন

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : দিনাজপুরে উচ্ছেদ করা অবৈধ ইটভাটা আবারও নতুন করে গড়ে তোলার সংবাদ চ্যানেল আই সহ গণমাধ্যমে প্রচারের পর জেলা প্রশাসক মো.মাহমুদুল আলম বাবু’র নির্দেশে আবারো তা ভেঙ্গে-গুড়িয়ে দিয়েছে,স্থানীয় প্রশাসন। 

ফসলি জমি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ডিসেম্বরে ১৪টি অবৈধ ইট ভাটা উচ্ছেদ করলেও সেগুলোর অধিকাংশ আবারো নতুন করে গড়ে তোলা শুরু করে অসাদু ইটভাটা মালিকরা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই উচ্ছেদ করা অবৈধ ইট ভাটাগুলো আবারো নতুন করে কিভাবে গড়ে উঠছে,তা নিয়ে চ্যানেল আই সহ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো.মাহমুদুল আলম বাবু’র তা দৃষ্টি গোচর হলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া গড়ে তোলা ওইসব অবৈধ ইটভাটা ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন স্থানীয় প্রশাসনকে।

উচ্ছেদ করা অবৈধ ইটভাটা বিরল উপজেলার কাঞ্চনঘাট মহাদেবপুরের সোনালী বিক্স ম্যানুফ্যাকচারার্স নতুন করে গড়ে তোলায় বিরল উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে তা ভেঙ্গে দিয়েছে। বিরল উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট জাবের মো. সোয়াইবের নেতৃত্বে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের একটি দল অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে নতুন করে গড়ে তোলা সোনালী বিক্স ম্যানুফ্যাকচারার্স ইটভাটা ভেঙ্গে-গুড়িয়ে দেয়।

এ সময় বিরল উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট জাবের মো. সোয়াইব গণমাধ্যমকে জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া উচ্ছেদকৃত ইটভাটাগুলো কোনক্রমেই নতুন করে অবারো গড়ে তোলা যাবেনা। তারা কেউ নতুনভাবে পরিবেশ সম্মত ইটভাটা গড়ে তুলতে চাইলে আবারো পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করতে হবে। যাচাই-বাচাই এবং তদন্ত করে ছাড়পত্র দিতে গেলেও তা সময়ের ব্যাপার। উচ্ছেদকৃত ইটভাটার নতুন করে ছাড়পত্র নেই। তাই,তা নতুন করে আবারো গড়ে তোলা দন্ডনীয় অপরাধ।তাই,তা আবাবাও ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গতঃ দিনাজপুরে ইট ভাটার আগ্রাসনে ফসলী জমি যেমন বিনষ্ট হচ্ছে,তেমনি উজার হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বিপর্যস্ত হচ্ছে,পরিবেশ।ফসলি জমি ধ্বংস করে ইটভাটায় ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলি জমির উর্বর ও সারযুক্ত উপরিভাগের মাটি। এতে করে জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। জমি হারিয়ে ফেলছে ফসল উৎপাদন ক্ষমতা। তেমনি যত্রতত্র গড়ে উঠা এসব ইট ভাটায় সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটার কালো বিষাক্ত ধোয়ায় এলাকার ফসল,গাছ-গাছালি বিনষ্টের পাশাপাশি পরিবেশের চরম ক্ষতি করছে।

দিনাজপুরে আবাদি জমি, আবাসিক এলাকা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঝে গড়ে উঠেছে ছোট বড় প্রায় তিন শতাধিক ইটভাটা। আর এসব ইটভাটায় ইট তৈরীর জন্য কাটা হচ্ছে, জমির উপরিভাগের মাটি। শ্রমিকেরা এসব মাটি কেটে ট্রাক্টরে করে ইট ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। এই মাটি পুড়িয়ে তৈরী করা হচেছ ইট। আর জমির উপরিভাগের মাটি কাটার ফলে জমির উপরিভাগে ৪ থেকে ৬ ইঞ্চির মধ্যে থাকা জমির খাদ্যকণা ও জৈব উপাদান নষ্ট হচ্ছে। ফলে ওইসব জমিতে যে ফসল আবাদ হয় তার উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

এছাড়াও জমির উপরিভাগ কাটার ফলে জমি নিচু হয়ে যাচ্ছে। এসব ইট ভাটার ফলে এক দিকে যেমন আবাদি জমির উর্বরা শক্তি হাারাচ্ছে অপরদিকে উজার হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। ইট ভাটার বিষাক্ত কালো ধোয়ায় ফসল ও গাছ-গাছালি বিনষ্ট হচ্ছে। ইটভাটার বিরূপ প্রভাবে বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের। বিগত বছরে সদর, বিরল, বোচাগঞ্জ, কাহারোল, বীরগঞ্জ,পার্বতীপুর, চিরিরবন্দও, বিরামপুর ও নবাবগঞ্জে অবৈধ ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোয়ায় বিস্তৃর্ণ ফসলী জমি ও গাছ-পালা পুড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে অনেকেই হয়েছ ,ক্ষতিগ্রস্থ।

বেসরকারী এক হিসেব অনুযায়ী গড়ে ্প্রতিটি ইটভাটা এক মৌসুমে ৩০ লাখ ইট উৎপাদন করে থাকে। গড়ে ১ ফুট গভীরতায় মাটি কাটা হলে একটি ভাটার জন্য বছরে মাটির প্রয়োজন হয় ১৫ থেকে ১২ একর জমির। সেই হিসেবে অনুযায়ী দিনাজপুরে সরকারি হিসেবের ১৬০টি ইটভাটার কাজে ব্যবহারের জন্য বছরে প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার একর জমির মাটি কাটা হয়।

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. শাহাদৎ হোসেন খান লিখন এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট-ব্রী ্এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.আবু বকর সিদ্দিক সরকার জানান, মাটির উপরিভাগে যে গুরুত্বপূর্ণ জৈব পদার্থ থাকে তা নীচের মাটিতে থাকে না। জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ফেলা হলে আগামী ২০ বছরেও সেই জমির প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থের ঘাটতি পুরন হবে না।

কোন নিয়ম-নিতির তোয়াক্কা না করে ৩ ফসলী জমি,সংরক্ষিত বনাঞ্চল,আবাসিক এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাঝেই গড়ে উঠেছে ইট ভাটা। এসব ইট ভাটার নেই কোন পরিবেশের ছাড়পত্র বা লাইসেন্স। তার পরও বিভিন্ন কৌশলে তা চলছে। উচ্চ আদালতের মিথ্যা আদেশ দেখিয়ে ইটভাটা চালানোর অভিযোগে প্রায় অর্ধশত ইটভাটার মালিক জেল-হাজতও খেটেছেন। মামলারও চলছে বেশকয়েকজন ইট ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে। বীরদর্পে এর সত্যতাও স্বীকার করছেন,অবৈধ ইটভাটার মালিকরা।

ফসলি জমি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর গেল বছরের ডিসেম্বরে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ১৪টি অবৈধ ইট ভাটা উচ্ছে এবং ১০টি ইটভাটাকে ৪৩ লাখ টাকা জরিমানা করে।

(এস/এসপি/জানুয়ারি ০১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test