E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আদালতের রায় বিপক্ষে যাওয়ায় সংখ্যালঘুর জমি দখলের চেষ্টা, আহত ৪

২০২১ জানুয়ারি ০২ ১৭:২৩:৫৩
আদালতের রায় বিপক্ষে যাওয়ায় সংখ্যালঘুর জমি দখলের চেষ্টা, আহত ৪

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : অতিরিক্ত জেলা ম্যােিজষ্ট্রট আদালতের রায় বিপক্ষে যাওয়ায় জামায়াত শিবিরের সক্রিয় কর্মীরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছয় বিঘা জমি জবরদখলের চেষ্টা করেছে। বাধা দেওয়ায় দু’ নারীসহ চারজনকে মারপিট করা হয়েছে। শনিবার সকাল ৮টার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বিষ্ণুপুর গ্রামের সুনীল সরদারের ছেলে সঞ্জয় সরদার বলেন,পৈতুক সূত্রে প্রাপ্ত হয়ে বিষ্ণুপুর মৌজার দু’ একর ৩১ শতক জমি তারা বংশপরম্পরায় ভোগদখলীকার রয়েছেন। ওই জমি এসএ রেকর্ডে খাস হওয়ায় রামনগর গ্রামের আছিরদ্দিন সরদার ওই জমি ১৯৬৬-১৯৬৭ সালে ২৯৬৭ নং বন্দোবস্ত দলিল করে নেন বলে সম্প্রতি তারা জানতে পারেন।

১৯৯৫ সালে ওই জমি বর্তমানে বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা আজিয়ার শেখের ছেলে আকরাম হোসেন মৌখিকভাবে ওই জমি তাকে দান করেছে মর্মে চলতি মাপ জরিপে রেকর্ড করিয়ে নেন। যদিও দখল স্বত্ব হিসেবে তার(সঞ্জয়) নামে রেকর্ড রয়েছে। ওই জমি আকরাম হোসেনের পক্ষে তার ভাই জামায়াতের সক্রিয় কর্মী আবু আসলাম লাল্টু দখল করার চেষ্টা করলে তিনি বাদি হয়ে বাংলাদেশ সরকার, আকরাম হোসেনসহ ৩২জনকে বিবাদী করে কালিগঞ্জ সহকারি জজ আদালতে দেঃ ৫১/১৭ নং মামলা করেন।

এরপরও আবু আসলাম ও আকরাম ওই জমি জবরদখল করার চেষ্টা করলে তিনি বাদি হয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আকরাম হোসেন ও আবু আসলাম লাল্টুর বিরুদ্ধে মামলা(পিটিশান ১৩২৪/১৮ কালি) করলে তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে চলতি বছরের ৩ নভেম্বর আদালতের রায় তার (সঞ্জয়) পক্ষে যায়। আদালতে হাজির হয়ে আবু আসলাম লাল্টু ও আকরাম হোসেন দোলন বলেন যে ওই জমি আছিরউদ্দিন তাদেরকে মৌখিকভাবে দেওয়ায় রেকর্ড করিয়ে নিয়েছেন।

এদিকে এডিএম কোর্টের রায় বিপক্ষে যাওয়ায় আবু আসলাম লাল্টু গত ১০ নভেম্বর একই আদালতে তাকে বিবাদী করে পিটিশন ৮৪২/২০ নং মামলা করেন। পুলিশ শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য উভয় পক্ষকে নোটিশ জারি করে। কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক রাসেল মাহমুদ ওই জমি তার(সঞ্জয়) দখলে বলে প্রতিবেদন দেন।

সঞ্জয় সরদার অভিযোগ করে বলেন, আকরাম হোসেন দোলন বিষ্ণুপুর মৌজার তাদের (সঞ্জয়) সিএস ১০৭৩ ও ৭৮৭ দাগের জমি দাবি করে ২৫০৪/২০০৪ ও ৪৮৫১/৯৫ নং দলিল মূলে যে ৪৯ শতক জমি দাবি করেন ওই জমি মূলত চান্দুলিয়া মৌজায় ও ব্রজপাটুলি মৌজায়। বাস্তবে জমি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় আবু আসলাম লাল্টু গত ১০ আগষ্ট তাকেসহ নেপাল সরদারের নামে মারপিট , মোবাইল ছিনতাই ও একলাখ টাকা চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা করে। মামলায় পূর্ব পরিকল্পনা হিসেবে বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন, গ্রাম পুলিশ জামায়াত কর্মী আব্দুল্লাহসহ আটজনকে সাক্ষী করা হয়। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কালিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান লাল্টুর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জমিস দখলে বাধা ও মারপিটের ঘটনা সঠিক বলে গত ২৫ নভেম্বর আদালতে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেন।

সঞ্জয় সরদার বলেন, প্রভাব খাটিয়ে কাল্পনিক ঘটনার প্রতিবেদন নিতে সমর্থ হওয়ায় লাল্টু ওই জমি ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিনের সহায়তায় জবরদখলের উদ্যোগ নেয়। একপর্যায়ে শনিবার সকাল ৮টার দিকে আবু আসলাম লাল্টু, আকরাম হোসেন দোলনের নেতৃত্বে জামায়াত কর্মী আতা গাজী, তার ভাই আশারুল গাজী, ওহাব কাগুজী, বাদল সরদার, ছোবহান সরদার, শহীদুল মল্লিক ও তার ছেলে রোকন মল্লিকসহ শতাধিক জামায়াত শিবিরের হাতে দা’ লাঠি, শাবল ও কুড়াল নিয়ে তার জমিতে চাষ করে বেড়ার উপর নেট নিয়ে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। বাধা দেওয়ায় তাকে, তার স্ত্রী সুচিত্রা সরদার, শ্যালকের স্ত্রী কবিতা বসাক ও নেপাল সরদারকে মারপিট করে মাটিতে ফেলে দেয়।

খবর পেয়ে কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক জিয়ারত আলীর নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে হামলাকারিরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ও সাংবাদিকরা চলে যাওয়ার পর তারা আবারো এসে জমিতে বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ এলে তারা আত্মগোপন করে। বিষয়টি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিনের কাছে গেলে তিনিসহ সেখানে উপস্থিত থাকা পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান বসাবসির মাধ্যমে বিষয়টি তাকে মিটিয়ে নেওয়ার জন্য বলেন। মিজানুর রহমান চলে যাওয়ার পরপরই লাল্টুসহ কয়েকজন আবারো জমিতে বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দিলেও তারা মানেনি।

শনিবার বিকেলে আবু আসলাম লাল্টু’র সঙ্গে তার ০১৭৩৮-৮৬৮৮২৭ নং মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে তার স্ত্রী পরিচয়ে দুইবার মোবাইল ফোন রিসিভ করে বাথরুমে আছে বলে কেটে দেন। পরবর্তীতে মুঠোফোনের স্লুইজ বন্ধ পাওয়ায় ক্ষুদে ম্যাসেজ দিলেও জবাব মেলেনি।

স্থানীয় সমীর কুমার মণ্ডল ও সুনীল মণ্ডল বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী ও বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন আওয়ামী লীগের রোক হলেও তাদের মধ্যে বিরোধ চরমে। সঞ্জয় সরদার সাঈদ মেহেদীর সমর্থক হওয়ায় তার জমি বেদখল করাতে শেখ রিয়াজউদ্দিন সার্বিক চেষ্টা চালাচ্ছেন।

বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন সঞ্জয়ের জমি জবরদখল করানোর চেষ্টার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, শান্তি রক্ষায় তিনি উভয়পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসার প্রস্তাব দিয়েছেন।

কালিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমান বলেন, তিনি ঘটনান্থলে এসে সঞ্জয় সরদার ছাড়া কাউকে পাননি। শনিবার সকালে জমি দখল করে চাষ করতে গেলে আদালতের নির্দেশ ছাড়া আবু আসলাম লাল্টুকে বিরোধপূর্ণ জমিতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এ ঘটনায় সঞ্জয় সরদার বাদি হয়ে শনিবার দুপুরে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষকে সন্ধ্যায় থানায় ডেকেছেন।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ০২, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test