E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভ্যানের চাকায় স্বপ্ন বুনছেন প্রতিবন্ধী মাসুদ!

২০২১ জানুয়ারি ০৭ ১৭:৪১:১১
ভ্যানের চাকায় স্বপ্ন বুনছেন প্রতিবন্ধী মাসুদ!

রূপক মুখার্জি, লোহাগড়া (নড়াইল) : দিনের শুরুতে ভ্যানের চাকা না ঘুরলে পেটে ভাত জোটে না প্রতিবিন্ধ মাসুদের পরিবারের। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে প্রতিবন্ধি মাসুদসহ তার পরিবারের। নিজের ভ্যান নেই, ভাড়া করা ভ্যান চালিয়ে অনেক কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন প্রতিবন্ধি মাসুদসহ তার পরিবার। একটি মোটর চালিত ভ্যানই তার সংসারের চিত্র বদলে দিতে পারে- এমন স্বপ্ন মাসুদের।

নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার চাচই গ্রামের মধ্যপাড়ায় ৪ শতক জমির ওপর পাটখড়ি ও পলিথিনে মোড়ানো ছোট ঘরে বসবাস করেন প্রতিবন্ধি মাসুদসহ তার পরিবার। তার পিতা বাকা মোল্যা ও মাতা মনোয়ারা বেগম মারা গেছেন অনেক আগেই। প্রতিদিন সকালে না খেয়ে তিন চাকার একটি ভাড়ায় চালিত মোটর ভ্যান নিয়ে যাত্রীর খোঁজে বেড়িয়ে পড়েন মাসুদ। অনেক সময় যাত্রীরা তাকে দেখে তার ভ্যানে উঠতে চায় না কারন, মাসুদের দুটি পা বিকলাঙ্গ।

সারাদিন ভ্যান চালিয়ে মাসুদ তিন থেকে চারশ টাকা উপার্জন করে তার তিন সদস্যের সংসারের খরচ এবং একমাত্র ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে আসছেন। দিন শেষে ভ্যান মালিককে ভাড়া বাবদ গুনতে হয় ১৬০ টাকা। প্রতিবন্ধি মাসুদ শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও একমাত্র ছেলে রাজু মোল্যার পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। তার ছেলে বর্তমানে লোহাগড়া সরকারি কলেজে এইচএসসি ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত। প্রতিবন্ধি মাসুদের স্বপ্ন তার ছেলে লেখাপড়া শিখে একদিন অনেক বড় হবে। উপার্জন করবে টাকা। সংসারের হাল ধরবে তার সন্তান। এ রকম স্বপ্ন নিয়েই প্রতিবন্ধি মাসুদের দিনচলা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাসুদের ঘরটি পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের আসামানি কবিতার সেই আসমানিদের ঘরের মতো। কালের বিবর্তনে বেন্না পাতা হাঁরিয়ে যাওয়ায় পাটখড়ি ও পলিথিন দিয়ে একটি ঘর তৈরি করে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন মাসুদসহ তার পরিবার।

এ ব্যাপারে কথা হয় প্রতিবন্ধি মাসুদের সাথে। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার ছেলে যখন আমার কাছে লেখাপড়ার খরচের টাকা চায়, তখন নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। মনে হয় আমি যেন জগতের একমাত্র ব্যর্থ পিতা। যতদিন আমার দেহে প্রাণ আছে ততদিন আমি যে কোন কর্ম করেই হোক সংসারের খরচ জোগাড় করবো কিন্তু ভিক্ষাবৃত্তি করবো না’।

তিনি আরো জানান, আমার বয়স যখন চার বছর তখন আমার কালো জ্বর হয়েছিল। আমার বাবা মায়ের চিকিৎসার টাকা না থাকায় আমাকে চিকিৎসা না দেওয়ার কারনে আমার পা দুটি বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। চার বছর বয়স থেকেই প্রতিবন্ধি খোঁড়া মাসুদ নামে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মাঝে জীবনের ছত্রিশটি বছর পার করেছি। ছত্রিশটি বছর পায়নি কারো দয়া- দাক্ষিণ্য । সমাজের কোন বিত্তবান লোক তথা জনপ্রতিনিধিরা আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায়নি।

প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে বর্তমান সরকারের নানা সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আফসোস করে বলেন, ছত্রিশ বছর ধরে আমি প্রতিবন্ধি অথচ মাত্র আড়াই বছর পূর্বে ২০১৭ সালে জয়পুর ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় একটি প্রতিবন্ধি কার্ড পেয়েছি এবং তাতে যে ভাতার টাকা পাই তা আমার চাহিদার তুলনায় খুবই নগন্য। আমি হালাল উপার্জন করে আমার সংসার চালাই।

তিনি জানান, ভাড়ার ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন করি তাতে সংসার ও ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালানো খুবই কষ্টসাধ্য। আবার আমার নিজেরও সামর্থ্য নেই যে, একটি ব্যাটারী চালিত ভ্যান কিনবো। সমাজের কেউ আমাকে একটি ব্যাটারী চালিত ভ্যান কিনে দিত তাহলে হয়তো আমার সংসার আরেকটু ভালো ভাবে চলতো।

প্রতিবন্ধী মাসুদ সরকার ও সমাজের ধনার্ঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে একটি ব্যাটারী চালিত ভ্যান পেলে তিনি একটু স্বচ্ছলভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করতে পারবেন- এমন প্রত্যাশা মাসুদের।

এ ব্যাপারে জয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকতার ফকির বলেন, ২০১৭ সালে প্রতিবন্ধি মাসুদকে একটি প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। মোটর চালিত ভ্যান পাওয়ার ব্যাপারে তিনি সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন।

মাসুদের স্বপ্ন পূরণে সরকার ও ধণাঢ্য ব্যক্তিবর্গ এগিয়ে আসবেন এমন প্রত্যাশা এলাকার সচেতন মহলের।

(আরএম/এসপি/জানুয়ারি ০৭, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test