প্রচার-প্রচারণায় আ. লীগ মেয়র প্রার্থী এগিয়ে, পিছিয়ে বিএনপি প্রার্থী, মাঠে নেই ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী

দীপক চক্রবর্তী, মাগুরা : আসন্ন মাগুরা পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে মাগুরায় প্রচার-প্রচারণা মুখর হয়ে উঠতে শুরু করেছে । ৩০ ডিসেম্বর এ নির্বাচনে চুড়ান্ত ৩ মেয়র প্রার্থী ও সাধারণ ৪৭ কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে । প্রতীক বরাদ্দের পর পর প্রত্যেক প্রার্থী নিজ নিজ ওয়ার্ডে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন দ্বারে দ্বারে । ইতিমধ্যে পৌরসভার সব ওয়ার্ডে পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে গেছে । হাট-বাজার-চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস আদালত সহ সকল প্রতিষ্ঠানে এখন শুধু নির্বাচনী আলোচনা । এদিকে ,নির্বাচনে জেলা আওয়ামীলীগ প্রার্থী  বর্তমান মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে । দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে শো-ডাউন,গনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ অব্যাহত রখেছেন । প্রতিদিন  দলীয় নেতাকর্মীদের সমর্থন আর ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে চলেছেন মাঠে । অপরদিকে,বিএনপি’র প্রচার-প্রচারনায় চলছে ভাটা । বিএনপি’র পক্ষ থেকে নানা অভিযোগ তুলছেন প্রার্থী ইকবাল আকতার খান কাফুর । অন্যদিকে, নির্বাচনের মাঠে নেই ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী মাওলানা মসিউর রহমান । শুধু শহরে মাইকিং চলছে তার ।  

বর্তমান মেয়র প্রার্থী খুরশিদ হায়দার টুটুল বলেন,চলতি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের আমিসহ ৭ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিল । এদের মধ্যে থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে ভাবে দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়ায় আমি খুবই খুশি ।এ পাঁচ বছরে আমি বর্তমান মেয়র থাকাকালীন মাগুরা পৌরসভাকে আধুনিক মানের উন্নয়ন করার জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি । পৌরসভার রাস্তাঘাট,ড্রেনেজ ব্যবস্থা,হাট-বাজারে স্থাপনা,পানি সরবরাহ,বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্যসেবার যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে । আমি শতভাগ আশাবাদি এবার নির্বাচনে বিজয়ী হবো ।

বিজয়ী হলে মাগুরা পৌরসভাকে আরো আধুনিক,নিট এবং ক্লিন পৌরসভায় রুপান্তরিত করার ইচ্ছা আছে আমার । পৌরসভার নাগরিক সেবার মান বাড়াতে আমি পৌর ট্যাস্ক,ট্রেড লাইন্সেসসহ নানা ধরনের সেবা আরো যাতে ভালো হয় সেদিকে দৃষ্টি থাকবে আমার । আমি পৌরবাসী নিকট দোয়া প্রার্থী এবং তারা আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে বলে আমার প্রত্যাশা ।

অন্যদিকে,পৌর বিএনপির আহবায়ক ইকবাল আতকার খান কাফুর বলেন- দলীয় নেতাকর্মীরা অনেকে মামলার কবলে পড়ে কেউ কারাগারে,কেউ গ্রেপ্তারের ভয়ে এলাকায় নেই । সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দলের দুজন কর্মীর করা দুটি মামলায় বিএনপি ও এর অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আসামী হয়েছেন । এসব মামলায় দলটির এক ডজনের বেশি নেতা ইতিমধ্যে কারাগারে রয়েছেন । আর গ্রেপ্তার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছেন অন্যরা ।

এ অবস্থায় পৌর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা অনেকটা ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার অপেক্ষায় । তিনি বলছেন নির্বাচনের আগেই মাঠছাড়া করতেই তাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে । আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মাগুরা জেলা বিএনপির সব ইউনিটের নেতাবর্মীরা আমার সাথে আছেন । আমি কিছু সংখ্যক নেতাকর্মীকে নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি । পৌর বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা ওয়ার্ড বিএনপির নেতাদের সাথে বৈঠক করে কাজ করার চেষ্টা করছি । যদি সুষ্টু শান্তিপূর্ণ ভোট হয় তবে আমি আশাবাদী জয়ী হবো কারণ আমি পূর্বে ৪ বার এ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি । সৎ,আদর্শ, ন্যায়নীতিও স্বচ্ছ রাজনীতি করি আমি । পৌর এলাকার জনগনের কারো সাথে আমার নেই দ্বন্দ নেই, নেই সংঘাত । জনগন আমাকে চেনে তাই আমাদের ভোটার যদি ঠিক মতো কেন্দ্রে যেতে পারে এবং সঠিক উপায়ে ভোট প্রদান করতে পারে তবে আমি জয়ী হবো আশাবাদী ।

তিনি অভিযোগ করে বরেন,পৌরসভার কিছু কিছু ওয়ার্ডে আমাদের নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে এমনকি ওয়ার্ডে পর্যন্ত প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের প্রচার-প্রচারণা । গত পৌর নির্বাচনে আমি প্রার্থী ছিলাম কিন্তু ভোট কারচুপির অভিযোগ করে আমি নির্বাচন বর্জন করি । আমি মাগুরা পৌরসভা নির্বাচনে ৪ বার বিজয়ী হয়ে অত্যন্ত সফলতার উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছিলাম । যা পৌর এলাকার জনগন আজও মনে রেখেছে । তাই যদি ফেয়ার নির্বাচন হয় তবে আমি জয়ী হবো আশাবাদী ।

অন্যদিকে ,বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী মাওলানা মসিউর রহমান নির্বাচনে মাঠে নেই । শুধু শহরে চলছে তার প্রচার মাইকিং । শহরের কিছু জিছু স্থানে দেখা গেছে তার পাখা মার্কার পোষ্টার । এখনো কোন ওয়ার্ডে তার পক্ষে ভোটের লিফলেট বিতরণ করতে দেখা যায়নি ।

এ নির্বাচনে মাগুরা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডে ৯ হাজার ৫২০ ভোটার,২ নং ওয়ার্ডে ৯ হাজার ১৫৯ ভোটার,৩ নং ওয়ার্ডে ৮ হাজার ৬৬৬ ভোটার,৪ নং ওয়ার্ডে ৯ হাজার ২১ ভোটার,৫ নং ওয়ার্ডে ৫হাজার ৮১৪ ভোটার,৬ নং ওয়ার্ডে ৭ হাজার ৯৯ ভোটার,৭ নং ওয়ার্ডে ১০ হাজার ৪২১ ভোটার,৮ নং ওয়ার্ডে ৯ হাজার ১০১ ভোটার ও ৯ নং ওয়ার্ডে ৮ হাজার ৯২ জন ভোটার ভোটদানে অংশগ্রহন করবে ।

জেলা রির্টানিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসার অলিউল ইসলাম জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে । এবারই প্রথম ইভিএম পদ্ধতিতে মাগুরা পৌরসভায় আগামী ১৬ জানুয়ারি ভোট হবে । এ নির্বাচনে মোট ৭৬ হাজার ৮৭৬ জন ভোটার ৩৫টি কন্দ্রে ২০৮টি কক্ষে ভোট প্রদান করবেন । এখন পযর্ন্ত কোন প্রার্থীর অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি । যদি কোন অসঙ্গতির অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে আমরা উর্ধ্বতন কমকর্তার কাছে অবহিত করবো ।

(ডিসি/এসপি/জানুয়ারি ১২, ২০২১)