E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সন্তান চায় বাবার পরিচয়, মা চান স্বামীর অধিকার

২০২১ জানুয়ারি ২৭ ১৫:৩৪:১৮
সন্তান চায় বাবার পরিচয়, মা চান স্বামীর অধিকার

নওগাঁ প্রতিনিধি : চার বছরের অবুঝ শিশু। আর কিছুদিন পর সে স্কুলে যাবে। পরিচয় হিসেবে মায়ের নামের সঙ্গে জুড়ে দিতে হবে বাবারটাও। শিশুটি বড় হচ্ছে। কিন্ত জানে না কে তার বাবা। ধীর গতির কারণে থমকে আছে মামলার রায়ও। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হয়ে শিশুটি তার বাবার পরিচয় এবং মা তার স্বামীর অধিকার ফিরে পাক।

ভুক্তভোগীর পরিবার আদিবাসী সম্প্রদায়ের এবং ছেলের পরিবার সাধারন হিন্দু ধর্মের হওয়ায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। অসহায় আদিবাসী পরিবারটি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বাসিন্দা। আর ওই যুবক চন্দন কুমার হিরো (২৬) একই উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীকোলা গ্রামের পরিতোষ চন্দ্র মন্ডলের পুত্র।

ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০১৬ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় আদিবাসী সম্প্রদায়ের কিশোরী মেয়েকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করতো চন্দন কুমার হিরো। এক সময় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর তা গড়ায় শারীরিক সম্পর্কে।

বিয়ের প্রলোভনে একাধিকবার তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়। এক পর্যায়ে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। মেয়েটি বার বার হিরোকে বিয়ের জন্য বললেও সে আর কোনো কর্ণপাত করেননি। এক সময় দূরত্ব বাড়তে থাকে। মেয়েটি যখন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন বিষয়টি তার পরিবারকে জানায়। এরপরই হিরো বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
২০১৬ সালে ১২ এপ্রিল স্থানীয়ভাবে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গ্রামের মাতবররা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু হিরো বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ায় সালিশে তার বাবা পরিতোষ চন্দ্র মন্ডল উপস্থিত ছিলেন এবং মেয়েটিকে পুত্রবধূর স্বীকৃতি দেবেন বলে অঙ্গীকার করে বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তার ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু হয়। থানা পুলিশের সহযোগিতায় ১২ দিন পর মেয়েকে উদ্ধার করেন তারা বাবা-মা। পরে মেয়ের বাবা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে চন্দন কুমার হিরোর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।
মামলায় পুলিশ তাকে আটক করে জেলহাজতে পাঠায়। প্রায় তিনমাস কারাভোগ করে হিরো। আদালতে সেই মামলা এখনও চলমান।

এদিকে ওই কিশোরী এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়। বর্তমানে ছেলের বয়স চার বছর। কিশোরী থেকে মেয়েটি এখন তরুণী। শিশুটি তার পিতৃপরিচয় ও মেয়েটি স্বামীর অধিকার পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে। দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তি করে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হোক এমন প্রত্যাশা তাদের।

ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, হিরো তাদের মেয়েকে প্রলোভন দিয়ে সর্বনাশ করেছে। যে শিশুটির জন্ম হয়েছে তার পিতৃপরিচয় প্রয়োজন। কয়েকদিন পর জন্ম নিবন্ধনে বাবার নাম দিতে হবে। তাদের মেয়ের স্বামী এবং শিশুটিকে তার বাবার অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হোক।

গ্রামের মোড়ল আব্দুর রশিদ বলেন, আদিবাসী মেয়ের পরিবারটি নিতান্ত অসহায়। আর ছেলের পরিবার স্বচ্ছল। প্রায় চার বছর আগে সালিশে ছেলের বাবা মেয়েকে পুত্রবধূর স্বীকৃতি দেবেন বলে বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু তার ওপর চলে অমানবিক নির্যাতন। যে শিশুটি জন্ম নিয়েছে বর্তমান সমাজে তার একটা পরিচয় দরকার।

ওই তরুণীর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করে চন্দন কুমার হিরো বলে, ওই বাচ্চার বাবা আমি না। তার সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও কোনো ধরনের শারীরিক সম্পর্ক হয়নি। যদি তারা প্রমাণ করতে পারে ওই ছেলে আমার সন্তান তাহলে বাবার স্বীকৃতি দেব। মামলা চলমান, আদালতে বোঝাপড়া হবে।

ছেলের বাবা পরিতোষ চন্দ্র মন্ডল বলেন, আমাদের ফাঁসানোর জন্য মেয়েটিকে আমার ছেলের পেছনে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। সালিশে জোর করে মেয়েটিকে আমার বাড়িতে উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। ওই সময় ছেলে বাড়ি ছিল না। আর মেয়েকে নির্যাতনও করা হয়নি।

নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর স্পেশাল এ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন গনমাধ্যমকে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ওই আদালতে বিচারক না থাকায় মামলা ঝুলে আছে। স্যার যোগদান করলে এবং সাক্ষী পেলে মামলাটি দ্রুত শেষ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

(বিএস/এসপি/জানুয়ারি ২৭, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test