E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা : সাবেক এমপিসহ ৫০ আসামির সাজা

২০২১ ফেব্রুয়ারি ০৪ ১৩:৫০:৩৪
শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা : সাবেক এমপিসহ ৫০ আসামির সাজা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ তিনজনের ১০বছর ও সাবেক যুবদল নেতা আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ তিন জনের ৯ বছর ও বাকী আসামিদের সর্বনি¤œ  সাড়ে ৪ থেকে বিভিন্ন মেয়াাদে সাজা প্রদান করেছে আদালত। বৃহষ্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ হুমায়ুন কবির জনাকীর্ণ আদালতে চাঞ্চল্যকর এ মামলার মোট ৫০ আসামীর বিভিন্ন মেয়াদে এ সাজা প্রদান করেন।

এর আগে সকালে এ মামলায় জেল হাজতে থাকা সাবেক সাংসদ হাবিবসহ ৩৪ জন আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। বাকী ১৬ আসামী পলাতক রয়েছেন। তবে হাজত বাসকালিন সময় মূল সাজা থেকে বাদ যাবে বলে আদালত নির্দেশ দিয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলা পরিচালনা করেন, অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জী, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল শাহীন মৃধা ও সাতক্ষীরার পিপি এ্যাড. আব্দুল লতিফ, সাবেক পিপি অ্যাড আব্দুল গণি।

অপরদিকে আসামীপক্ষে ছিলেন এ্যাড. শাহানারা আক্তার বকুল, এ্যাড. আব্দুল মজিদ(২), এ্যাড. মিজানুর রহমান পিন্টু ও এ্যাড. তোজাম্মেল হোসেন প্রমুখ।

কারাগারে পাঠানো আসামীরা হলেন, সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আশরাফ হোসেন, সাবেক পৌর মেয়র আক্তারুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, শেখ তামিম আজাদ মেরিন, আব্দুর রকিব মোল্লা, আব্দুল মজিদ, হাসান আলী, ময়না, আব্দুস সাত্তার, তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, জহুরুল ইসলাম, গোলাম রসুল, অ্যাড. আব্দুস সাত্তার, আব্দুস সামাদ, আলতাফ হোসেন, শাহাবুদ্দিন, সাহেব আলী, সিরাজুল ইসলাম, রকিব, ট্রলি শহীদুল, মনিরুল ইসলাম, শেখ কামরুল ইসলাম, ইয়াছিন আলী, শেলী, শাহিনুর রহমান, দিদার মোড়ল, সোহাগ হোসেন, মাহাফুজুর মোল্লা, আব্দুল গফফার গাজী, রিঙ্কু, অ্যাড. আব্দুস সামাদ, টাইগার খোকন ওরফে বেড়ে খোকন।

পলাতক আসামীরা হলেন, সাবেক যুবদল নেতা আব্দুল কাদের বাচ্চু, মফিজুল ইসলাম, আলাউদ্দিন, খালেদ মঞ্জুর রোমেল, আরিফুর রহমান, রিপন, ইয়াছিন আলী, রবিউল ইসলাম, মাজাহারুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, আব্দুর রব, সঞ্জু , নাজমুল হোসেন, জাবিদ রায়হান লাকী, কণক, মাহাফুজুর রহমানসহ ১৬ জন।

এদিকে সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ বিএনপির নেতা-কর্মীর বিভিন্ন মেয়াাদে সাজা প্রদানের প্রতিবাদে ও এ রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক শেখ তারিকুল হাসানের নেতৃত্বে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা জুডিশিয়াল কোর্ট চত্বর থেকে উক্ত বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে তারা শহরের নিউমার্কেট চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

তবে রায়কে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে সাতক্ষীরায়। জেলা আওয়ামীলীগের আয়োজনে রায় পরবর্তী জজকোর্ট চত্বরে উক্ত আনন্দ মি,ছিল অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উক্ত মিছিলে অংশ গ্রহন করেন। এ সময় আনন্দ মিছিলে নেতৃত্ব দেন, সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও সাতক্ষীরা-৩ আসনের সাংসদ ডা. আফম রুহুল হক। এ সময় সেখানে আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি অধ্যাপক আবু আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক আহম তারেক উদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আক্তার হোসেন, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।

বক্তারা এ সময় এ রায়কে একটি যুগান্তকারী রায় বলে ঘোষনা করেন। তারা বলেন, ভাবিষ্যতে কোন বিরোধী দলীয় নেতা যাতে এভাবে আর কোন হামলার শিকার না হন সেটি এ রায় থেকে সকল রাজনৈতিক দলকে শিক্ষা নিতে হবে।

রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত এটর্ণি জেনারেল এসএম মুনীর বলেন, হাবিব, রিপন ও আরিফের ১০ বছর করে সাজা হয়েছে। সকল আসামীর সাজা হয়েছে । কেউ খালাস পায়নি। এ রায়ে ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গণতন্ত্র সুদৃঢ় হয়েছে। মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর পরবর্তী করনীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. শাহানার আক্তার বকুল বলেন, সাংবাদিকদের প্রকাশিত ছবিতে ও প্রতিবেদনে হাবিবুল ইসলাম হাবিববের ছবি ও নাম ছিল না। রায়ে আমরা খুশী নই। আশা করি উচ্চ আদালতে ন্যয় বিচার পাবো।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরায় মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে হাসপাতালে দেখে মাগুরা ফিরে যাবার পথে কলারোয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলা শিকার হন। এতে শেখ হাসিনা অক্ষত থাকলেও তার সফরসঙ্গী ফাতেমা জাহান সাথী, জোবায়দুল হক রাসেল, ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান, শহিদুল হক জীবন, আবদুল মতিনসহ অনেকেই আহত হন। এ সময় বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও হামলার শিকার হন। এ ঘটনায় কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ মোসলেমউদ্দিন ২৭ জনকে আসামী করে একটি মামলা করেন। এ মামলা থানায় রেকর্ড না হওয়ায় তিনি নালিশী আদালত সাতক্ষীরায় মামলাটি করেন।

পরবর্তীতে এ মামলা খারিজ হয়ে গেলে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর ফের মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। এসময় তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেন। পরবর্তীতে মামলাটি ২০১৭ সালে আবারো উচ্চ আদালতে স্থগিত হয়। ২৭ জানুয়ারি যুক্তি তর্ক অনুষ্ঠিত হয়।২০ জন সাক্ষী, চারজন সাফাই সাক্ষী ও মামলার নথি পর্যালোচনা শেষে বৃহষ্পতিবার এ রায় দেওয়া হয়।

বাকী ১৬ আসামী পলাতক রয়েছেন।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test