E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় সিরিজ বোমা হামলায় ১৪ জনের কারাদণ্ড

২০২১ ফেব্রুয়ারি ১০ ১৬:২৯:০৬
সাতক্ষীরায় সিরিজ বোমা হামলায় ১৪ জনের কারাদণ্ড

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ২০০৫ সালের ১৭ আগষ্ট দেশব্যাপি মুন্সিগঞ্জ ব্যতীত ৬৩ জেলার মধ্যে জেএমবির সাতক্ষীরার পাঁচটি স্থানে বোমা হামলার ঘটনায় পুলিশের দায়েরকৃত ছয়টি মামলার মধ্যে পাঁচটি মামলায় ১৪ জনকে তিন বছর থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সাথে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদ এর দায়েরকৃত মামলার সকল আসামীকে (২৫) খালাস দেওয়া হয়েছে। 

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক শরিফুল ইসলাম বুধবার দুপুর ১২টায় এ রায় দেন।

এদের মেেধ্য নাঈমউদ্দিন ওরফে নাঈম (পলাতক), ফকরুদ্দিন আল রাজী(পলাতক), মোঃ মনিরুজ্জামান মুন্না, ভারতীয় নাগরিক গিয়াসউদ্দিন সরদার, বেল্লাল হোসেন ওরফে আব্দুল্লাহ, হাবিবুর রহমান ওরফে ইসমাইল ও মাহাবুবর রহমানকে ১৯০৮ সালের বিষ্পোরক দ্রব্য আইনের ৩ ও ৪ ধারায় ১৩ বছর করে, নূর আলী মেম্বর ও মনোয়র হোসেন উজ্জলকে ১০ বছর করে, মোঃ মন্তাজ ওরফে মমতাজ, মোঃ রাকিব হাসান ওরফে রাসেলকে নয় বছর করে, আসাদুল হক, আনিছুর রহমান খোকন, আসাদুজ্জামান ওরফে সাঈদ ওরফে হাজারীকে তিন বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে হাজত বাসের মেয়াদ মূল সাজা থেকে বাদ যাবে।

সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের জেএমবি’র মামলা পরিচালনাকারি অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. আব্দুস সামাদ বলেন,২০০৫ এর ১৭ আগস্ট শহরের শহীদ রাজ্জাক পার্ক , জেলা জজ আদালত চত্বর, পুরাতন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত চত্বর, বাস টার্মিনাল ও খুলনা রোডের মোড়ে একযোগে এই বোমা হামলা ও নিষিদ্ধ লিফলেট ছড়ানোর ঘটনা ঘটে । ঘটনার দিনই সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বোমা হামলাকারী শহরতলীর বাকালের দলিলউদ্দিন দফাদারের ছেলে নাসিরুদ্দিন দফাদার প্রত্যক্ষদর্শী বাকাল ইসলামপুর চরের পকেটমার রওশানের বিবরন মতে ধরা পড়ে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সাতক্ষীরার রসুলপুরে জেএমবির ঘাটি চিহ্নিত করা হয়।

এই সূত্র ধরে ভারতীয় নাগরিক গিয়াসউদ্দিনসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সব ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক হযরত আলী, উপপরিদর্শক জসীমউদ্দিন, উপপরিদর্শক শফিকুল ইসলাস, উপপরিদর্শক আবু তাহের ও উপপরিদর্শক একেএম নজিবুল্লাহ বাদি হয়ে ওই দিন ১৯০৮ সালের বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩,৪ ও ৬ ধারায় পৃথক পাঁচটি মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষনা করার পরও দেশজুড়ে বোমা হামলা চালানোর অভিযোগে তৎকালিন সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদ বাদি হয়ে ২০০৫ সালের পহেলা অক্টোবর ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৯(৮) ও ২০(৩) ধারায় সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। বাংলাদেশের অন্য জেলে থাকা শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানিসহ কয়েকজনকে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় ।

সাতক্ষীরায় গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজনকে ঢাকায় জেআইসিতে ( জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল ) এ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঠানো হয় । সেখানে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেওয়া ছাড়াও জেএমবির বহু গোপন তথ্য জানায় তারা । পরে তাদের ফিরিয়ে আনা হয় সাতক্ষীরায় ।

২০০৬ সালের ১৩ মার্চ সিআইডি পাঁচটি মামলায় ১৯ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয় । একইভাবে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়েরকৃত মামলায় ২৮ জনের নামে আদালতে চার্জশীট দেওয়া হয়। সে বছরই মামলাগুলি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে পাঠানো হয় । যথা সময়ে নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০০৭ এর ২৫ জুন মামলাগুলি খুলনা থেকে ফেরত আসে সাতক্ষীরায় । ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতে মামলাগুলির বিচার কাজ শুরু করেন। এ সব মামলায় ১৪ জনের সাক্ষী গ্রহণ করা হয়। তবে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফার দায়েরকৃত মামলায় কেবলমাত্র দু’জন সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

মামলার নথি ও সাক্ষীদের জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে বিচারক ১৪ জন আসামীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। একই সাথে পলাতক আসামী আবুল খায়েরকে বেকসুর খালাস দেন।

আসামিদের মধ্যে শায়খ রহমান, বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানির মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে এসব মামলার আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় । গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বাকাল ইসলামপুরের নাসিরুদ্দিন দফাদার ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর মস্তিস্কের রক্ষক্ষরণজনিত কারণে সাতক্ষীরা কারাগারে মারা যান। আসামীরা দেশের বিভিন্ন কারাগারে অবস্থান করায় মামলার রায় হতে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর লেগে যায়। সাজাপ্রাপ্ত ১৪ জনসহ খালাস মামলার আরো ৫ জনকেসহ মোট ১৯ জনকে আদালতে হাজির করা হয়।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুস সামাদ জানান, দেশব্যাপি বোমা হামলার মধ্যে সাতক্ষীরার ৫টি স্থানে হামলার ঘটনায় ছয়টি মামলা হয়। এদের মধ্যে ১৪ জনের সাজা ও এক জন খালাস পায়। আমরা আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি।

আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামীদের বিরুদ্ধে অভিআেগ প্রমান করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ রায় ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।

তবে মামলার রায় সম্পর্কে অনুভুতি জানাতে যেয়ে দেশব্যাপি বোমা হামলা মামলার সাতক্ষীরায় প্রথম আসামী সনাক্তকারি বাঁকাল ইসলামপুর চরের রওশান আলী বলেন, এ রায়ে তিনি খুশী। তবে যেভাবে সাজা হয়েছে তাতে কয়েকজন আসামীর সাজার চেয়ে হাজতবাসের মেয়াদ অনেক বেশি হয়ে গেছে। দ্রুত বিচার শেষ হলে তাদেরকে বেশি সাজা খাটতে হতো না।

আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আবু আহম্মেদ, অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক আনিছুর রহিম ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ফাহিমুল তক কিসলু বলেন, দেরীতে হলেও ১৫ বছর পর এসব মামলার সাজা হওয়ায় জঙ্গীবাদ মাথা চাড়া দিতে পারবে না। তবে তারা সাতক্ষীরার গুড়পুকুরের বোম হামলা মামলা দু’টির দ্রুত বিচার শেষ করার দাবি জানান।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. আব্দুস সামাদ। আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সাবেক পিপি অ্যাড. আবু বক্কর ছিদ্দিক ও অ্যাড. আজিবর রহমান।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test