E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শাখাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

কলা গাছের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার দিন শেষ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের 

২০২১ ফেব্রুয়ারি ১৬ ১৩:৩৪:৫৬
কলা গাছের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার দিন শেষ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের 

রামকৃষ্ণ সাহা রামা, নাগরপুর (টাঙ্গাইল) : দীর্ঘ ৫২ বছরের চাওয়া পাওয়া ও আকাঙ্খার অবসান ঘটতে চলেছে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শাখাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। গ্রামীণ এলাকার শিশু শিক্ষায় ভূমিকা রাখতে ১৯৬৮ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও এ বিদ্যালয়ে স্থায়ী কোন শহীদ মিনার ছিল না এতদিন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্যপূস্তক থেকে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জেনে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ব্যকুল থাকতো। ১০ কিলোমিটার গ্রামের মেঠোপথ মাড়িয়ে উপজেলা সদরে অবস্থিত শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধা জানানোটাও ছিল কষ্টসাধ্য। তাই এতদিন এলাকার বিভিন্ন বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা কলাগাছ দিয়ে নির্মিত শহীদ মিনারই ছিল ভাষা দিবসের আবেগ অনুভূতি প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম। অবশেষে ৫২ বছরের কষ্টের অবসান ঘটতে চলেছে এবার। স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পেতে যাচ্ছে স্থায়ী শহীদ মিনার। সেইসাথে নতুন দোতলা ভবন।

করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকলেও বিদ্যালয়ের আশপাশের শিক্ষার্থীরা নব নির্মিত শহীদ মিনার দেখতে প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়ে ভীড় করছেন। আর কয়েক দিন পরই ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান। এ অপেক্ষা যেন আর কাটছে না তাদের। এই শহীদ মিনার ঘিরেই তারা স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে। সরেজমিনে গিয়ে উচ্ছস্বিত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা নিজেরাই ভাষা দিবস সামনে রেখে বিদ্যালয় মাঠের এক কোণে কলাগাছ দিয়ে তৈরি করত শহীদ মিনার। আর এতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে নিজের মায়ের ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গকৃত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাত। গত ৫২ বছর ধরে এভাবে অস্থায়ী বেদিতে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছে।

বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জহিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, এ বিদ্যালয়টি উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে অজ পাঁড়া গাঁ এলাকায়। এখানে অধ্যয়নরত রয়েছে ২৭০ শিক্ষার্থী। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে কলাগাছ দিয়ে তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করত। স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপূর্ণতা বিরাজ করত। কিন্তু সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় এতদিন শহীদ মিনার তৈরি করা যায়নি। এ বছর স্লিপ অর্থায়নের কিছু টাকা দিয়ে কাজ শুরু করি। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় শহীদ মিনারটির সম্পূর্ন কাজ সমাপ্ত হয়। এবারের শহীদ দিবসে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমো এর উদ্বোধন করা হবে।

বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আলভী আক্তার বলে, বাস্তবে আমার শহীদ মিনার দেখা হয়নি। এবার আমাদের স্কুলে তা নির্মিত হওয়ায় আমরা সবাই মিলে এবার স্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারবো, শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারবো এটাই আমাদের আনন্দ।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী শামীম হাসান বলে, আমরা বন্ধুরা সময় পেলেই এ শহীদ মিনারটি দেখতে আসি। এবার গড়ে তোলা দৃষ্টিননন্দন এই শহীদ মিনারে আমরা ফুল দিতে পারব, একুশের গান গাইব এটাতেই আনন্দ খুঁজে পাচ্ছি।

নাগরপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আঞ্জুমান আরা বেগম বীথি বলেন, বর্তমানে উপজেলায় ১৫৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও স্থায়ী শহীদ মিনার রয়েছে ৩১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধকরণ, মাতৃভাষার প্রতি গভীর মমত্ববোধ সৃষ্টি ও ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জানানোর জন্য চলতি বছরেই নাগরপুর উপজেলার ১৫৬ টি বিদ্যালয়েই শহীদ মিনার স্থাপনের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করেছে নাগরপুর উপজেলা শিক্ষা অফিস।

(আরএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test