E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বালুমহাল ইজারা দেওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে সরকার ও জনগণের, লাভবান প্রভাবশালী মহল

২০২১ ফেব্রুয়ারি ২৬ ১৭:৫৮:১০
বালুমহাল ইজারা দেওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে সরকার ও জনগণের, লাভবান প্রভাবশালী মহল

স্টাফ রিপোর্টার : রাজবাড়ী জেলার ৫ টি উপজেলার পাশ দিয়ে নদী বয়ে চলায় এই জেলা কৃষিতে সমৃদ্ধ তবে এই জেলায় বালু মহাল দেখিয়ে বছর চুক্তিতে নাম মাত্র টাকায় ইজারা নিয়ে দিন রাত ড্রেজার দিয়ে পদ্মার তলদেশ ও ভেকু দিয়ে গড়াই নদীর বুকে পড়া চর থেকে অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা বিক্রি করে নিচ্ছে প্রভাবশালী মহল। প্রতি বছর বালু মহল ইজারা দিয়ে থাকে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে।         

রাজবাড়ী সদর উপজেলার অধীনে থাকা জৌকুড়া-দাওয়াপাড়া এলাকার পদ্মা নদীর “চর নরসিংহদিয়া” বালু মহল, “চর জাজিরা” বালু মহল ও “চর পদ্মা” বালু মহল থেকে সরকার আয় করে নাম মাত্র অর্থ। কিন্তু প্রতি বছর এই এলাকায় বালির বস্তা ফেলে ও সিসি ব্লক দিয়ে নদীর পাড় ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য সরকার ১১/১২ বছরে ব্যয় করেছে অন্তত ৭/৮শ কোটি টকা। পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বালু মহল ইজারা দেওয়াতে ক্ষতি হচ্ছে সরকারের ও জনসাধারণের, আর লাভবান হচ্ছে হাতে গোনা মাত্র দু/তিন জন ব্যক্তির।

অনুসন্ধান সুত্রে জানা গেছে, স্থানীয় এক প্রভাবশালী মহলের নেতৃত্বে দীর্ঘ ১১/১২ বছর ধরে বালু মহলগুলো ইজারা নিয়ে অপরিকল্পিত ভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। ২২/২৪ টি ভাসমান ড্রেজার দিয়ে বালি তুলে বলগেট নামক জাহাজে ও ট্রলারে করে বালি পাচার করছে আশপাশের বিভিন্ন জেলায়। এছাড়াও ৪০/৪৫ কিলোমিটার এলাকায় নদী পাড়ের বিভিন্ন ঘাটে স্তুপ করা হচ্ছে বালু। সেই স্তুপ থেকে ট্রাকে করেও সরবরাহ করা হচ্ছে পাশ্ববর্তী জেলা/উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। এভাবে দিনে অন্তত ১২/১৫ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে তা বিক্রি করে চলছে।

রাজবাড়ী জেলা সদরের জৌকুড়া-দাওয়াপাড়া এলাকার পদ্মা নদী থেকে এভাবে বালু উত্তোলন করতে থাকলে রাজবাড়ী জেলা শহর রক্ষা বাধ বিলুপ্ত হতে চলছে।

এভাবে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলনের ফলে সাধারন মানুষ রয়েছে নির্বিকার। এতে নদী তীরবর্তী বসতি এবং হাজার হাজার একর ফসলি জমি হুমকিতে আবার রাজবাড়ীর শহর রক্ষা বাঁধও রয়েছে হুমকির মুখে। বালু তোলার কাজে এখন অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসিন দলের এক নেতার যোগসাজশের একটি ভয়ংকর প্রভাবশালী গ্রুপ। এদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করেনা। কেউ প্রতিবাদ করলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয় অথবা সন্ত্রাসী দ্বারা লাঞ্চিত হতে হয়, আবার কখনো হত্যা করে নদীতে ফেলা দেওয়া হয়।

নদীর বুক থেকে এভাবে বালি উত্তোলন করায় নদী তীরবর্তী বসতি ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে। রাজবাড়ীর শহর রক্ষা বাঁধও রয়েছে হুমকির মুখে। বালু তোলার কাজে এখন অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বহিরাগত ও স্থানীয় যোগসাজশের একটি ভয়ংকর প্রভাবশালী গ্রুপ। এদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার বা কোন সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশেরও সাহস করেননা। কেউ প্রতিবাদ করা বা সংবাদ প্রকাশের চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা হয় অথবা সন্ত্রাসী দ্বারা লাঞ্চিত হতে হয়। আবার এদের উপেক্ষা করে কেউ যদি বেশি দূর্সাহসীক দেখানোর চেষ্টা করে, তাহলে তাকে যে কোন ভাবে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে বলেও অনেকে মনে করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নদীর পানি কমার সাথে সাথেই প্রতি বছরের ৯ মাস যাবৎ এ চক্রটি নদীর বুক থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে থাকে। লুটের বালু কোটি কোটি টাকা বিক্রি করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা হচ্ছে বালু বালিখেকোদের। দীর্ঘদিন ধরে নদী থেকে বালু তোলার কারণে নদীর সর্বনাশ করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এলাকার বসত বাড়ি ও অবাদি জমি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

রাজবাড়ীবাসীর ক্ষতি সাধন করে, দীর্ঘদিন ধরে যারা এই বালি ব্যাবসা ও চাঁদাবাজির সাথে জড়িত অনুসন্ধানে ইতিমধ্যে স্থানীয় আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতার নাম জানা গেছে।

(একে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test