E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সফলতা

২০২১ মার্চ ০৮ ১৮:৩০:২৫
মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সফলতা

স্টাফ রিপোর্টার : বিগত ২০২০ সাল প্রাণঘাতী করোনা মহামারির বছর। বছরের শুরুতেই বাংলাদেশে হানা দেয় করোনা। শুরু হয় দেশজুড়ে রকডাউন। এতে করে বিঘ্নিত হয় বিভিন্ন সেক্টরের স্বাভাবিক কার্যক্রম। দেশের অন্যান্য দপ্তরের মতো বিচারাঙ্গনেও দেখা দেয় চরম স্থবিরতা। সে সময় বাংলাদেশ সরকারের সময়োপযুগী সিদ্ধান্তে দ্রুত অগ্রসরমান তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে চালু করা হয় ভার্চুয়াল আদালত। বিচারপ্রার্থী জনসাধারণের দূর্ভোগ লাঘবে শুরু হয় ভার্চুয়াল আদালতের কর্মপ্রচেষ্টা।

মৌলভীবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজস্ট্রেট আদালত সূত্রে জানা যায়, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে জি.আর ৮৯/২০২০(কুলা)মামলায় ভার্চুয়াল শুনানীর মাধ্যমে মৌলভীবাজার জেলায় প্রথম ভার্চুয়াল আদালতের সূচনা করেন মৌলভীবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান। যাতে আসামী পক্ষে শুনানীতে অংশগ্রহণ করেন বিজ্ঞ আইনজীবী মোঃ মাহবুবুল আলম আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সি.এস.আই।

মহামারীর এই সময়েও মৌলভীবাজার জেলার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আলী আহসান বিচারপ্রার্থী জনসাধারণের দূর্ভোগ লাঘবে কার্যকরী বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে তাঁর প্রচেষ্টায় বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে আদালতের সম্মুখে ও বিভিন্ন ফ্লোরে হাত-মুখ ধোয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং বার বার পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়, যার ফলে উক্ত ম্যাজিস্ট্রেসীতে কেউই করোনা আক্রান্ত হয় নাই।

আদালতে আগত বিচারপ্রার্থী জনসাধারণ, আইনজীবী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পানি পানের জন্য গভীর নলকূপ স্থাপন করে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য আদালতের দর্শনীয় স্থানসমূহে নির্দেশনামূলক পোস্টার সাঁটানো হয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে প্রতিপালন হচ্ছে কি না তা তদারকির জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়।

অত্র ম্যাজিস্ট্রেসীতে ২০২০ সালে মোট ৭৭০৫টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়, তন্মধ্যে চলমান ১০ বছরের অধিক পুরাতন ১৮টি ও ০৫ বছরের অধিক পুরাতন ১৬৮টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়। সাক্ষী গ্রহণ করা হয় মোট ৬৭২২টি। মোট জামিন শুনানী হয় ৬০০৭টি। মোট জামিন প্রদান করা হয় ৫৭৩২ জন আসামীকে তন্মধ্যে ভার্চুয়াল আদালতে জামিন প্রাপ্ত হন ৮৭৬ জন আসামী। উল্লেখ্য যে, করোনার প্রাদূর্ভাবজনিত কারণে কোর্টের কার্যক্রম বন্ধ না হলে মামলা শুনানি ও নিষ্পত্তির সংখ্যা আরোও অনেক বৃদ্ধি পেতো। ম্যাজিস্ট্রেসীর রেকর্ড রুমে রক্ষিত ২৪২৫টি মেয়াদোত্তীর্ণ নথি বিধিমতোবেক বিনষ্ট করা হয়। ২০২০সালে ১০৩২৯টি নথি বিভিন্ন আদালত হতে প্রাপ্ত হয়ে রেকর্ড রুমে সংরক্ষণ করা হয়। মালখানায় রক্ষিত আলামতের মধ্যে থেকে ৪১০টি মামলার আলামত বিধিমোতাবেক ধ্বংস করা হয়।

করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিয়মিত পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমবারেরমতো মৌলভীবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীর ১০টি আদালত ও বিভাগসমূহ (বড়লেখা চৌকি আদালতসহ) এবং মৌলভীবাজার জেলার ০৭টি থানা ও ০২টি রেলওয়ে থানা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন মাননীয় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মুহম্মদ আলী আহসান মহোদয়। পরিদর্শনকালে প্রাপ্ত ত্রুটি নিরসনে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ আলী আহসান কর্মচারীদের সহায়তায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পুরো ছাদ জুড়ে ছাদ বাগান করেন। এছাড়া উল্লেখ্যযোগ্য কাজের মধ্যে বিচারক ও স্টাফদের বাচ্চাদের জন্য বেবি ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন, সাক্ষীদের জন্য হেল্প ডেস্ক স্থাপন, জি আই জেড এর সহায়তায় তথ্য প্রদান ডেস্ক, মাদক বিরোধী বিভিন্ন নাটিকা প্রদর্শনের জন্য মনিটর স্থাপন, বিল্ডিংয়ের চারপাশের সৌন্দর্যবৃদ্ধি ও পরিবেশ উপকারী বিভিন্ন প্রকার (ফুল ও ফলজ) বৃক্ষ রোপন, মনিটর স্থাপন করে লিগ্যাল এইডের কার্যক্রম সম্পর্কে জনসাধরণকে অবহিতকরণ ইত্যাদি।

এছাড়াও জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের ৩টি কক্ষ হস্থাস্তর করেন যার ফলে উক্ত অফিসের কার্যক্রমে আরো গতিশীলতা এসেছে।

মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য আন্তরিকতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে কাজ করার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত মানুষের কল্যাণে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে বিচারক ও সহায়ক কর্মচারীদের দিক নির্দেশনা প্রদান করছেন। সাধারণ বিচারপ্রার্থী জনগণের দূর্ভোগ লাঘব ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার জন্য চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজস্ট্রেট আদালতের ৮ জন বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট, সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিজ্ঞ আইনজীবীগণ, পুলিশ বিভাগ এবং অন্যান্য এজেন্সিসমূহ সার্বক্ষণিক সহযোগিতা প্রদান করছেন। তাঁর এই কার্যপদ্ধতির মাধ্যমে আগামী দিনগুলোতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর পারষ্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় আরো গতিশীলতা আসবে বলে বিচারপ্রার্থী জনগণ আশা প্রকাশ করেন।

(একে/এসপি/মার্চ ০৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test