E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বদনা বাজিয়ে সংসার চালায় অন্ধ আসাদুল

২০২১ মার্চ ১৩ ১৬:৫৪:২৬
বদনা বাজিয়ে সংসার চালায় অন্ধ আসাদুল

খুরশিদ আলম শাওন, রাণীশংকৈল : হাতে নীল রঙের বদনা, একটি রডে হ্যান্ড মাইক দাড়ানো অবস্থায়, নিজেও দাড়িয়ে বিভিন্ন ছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে গান শোনাচ্ছেন অন্ধ আসাদুল। চারপাশে বেশ ভিড় জমিয়েছে বাজারের লোকজন শ্রোতা হিসাবে। মনযোগ ভরে শুনছে তার গান।

গান শুনে মুগ্ধ হয়ে কেউ ২ টাকা, কেউ ৫ টাকা কেউবা ১০ টাকা দিচ্ছেন অতি আনন্দে। প্রায় ঘন্টা খানেক গান শোনাবার পর। সে স্থান ত্যাগ করে অন্যস্থানে একই কায়দায় গান শোনানোই এখন তার নেশা- পেশা। জন্মের পর থেকে অন্ধ হলেও ভিক্ষাবৃত্তি পেশাকে বেছে নেননি আসাদুল।

সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ বাজারে গান শোনানোর সময় তার সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের তিনি জানান, জন্মের পর থেকে তিনি অন্ধ। বর্তমানে বদনা বাজিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। অনেকে ভিক্ষাবৃত্তি পেশা নিতে বলেছেন,তবে সেটি নিতে তিনি ইচ্ছুক নই।

আগ্রহ ভরে আসাদুল জানান, তার বাড়ীতে দুটো কন্যা সন্তান ও আনোয়ারা নামে স্ত্রী রয়েছে। অভাবের সংসারের ভার তার ঘাড়ে। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়ের বিভিন্ন হাট-বাজারে বদনা বাজিয়ে গান শুনিয়ে চলে তার সংসার।

তিনি আরো জানান,উপজেলার নেকমরদ ইউনিয়নের বগলাডাঙ্গী বাজারে তার দুই শতক জমির উপরে বাড়ী। বাড়ীর জমিটি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। এবং বাড়ী করতেও উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতা করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আসাদুলের ইচ্ছা তার দু-মেয়েকে পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ বানাবে। পাত্রস্থ করবে সুপাত্রের হাতে। এছাড়াও নিজের স্ত্রী'র বেশ কিছু স্বপ্ন পুরণ করতে পারেননি অভাবের তাড়নায়। সেগুলো বাস্তবায়ন করার ইচ্ছাও রয়েছে তার।

আসাদুল জানান, তার প্রতিদিন হাজারখানেব টাকা আয় হয় গান শুনিয়ে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনাকালীন সময়ে খুব খারাপ সময় কেটেছে তার।

বাজারের গান শোনার পর অনেকেই তার প্রশংসা করেছেন। তারা জানান, মানুষ এমনিতেই ভিক্ষাবৃত্তির আশ্রয় নেয়। যাদের শরীর ভালো আছে, কাজ করতে পারবে তারাও এখন ভিক্ষা করছে। অথচ আসাদুল অন্ধ হওয়া স্বত্ত্বেও ভিক্ষা করেননি। এতে বোঝা যায় ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ মানুষ সে। তার মধ্যে অনেক প্রতিভা রয়েছে।

রাণীশংকৈল প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আকাশ বলেন, আমরা আসাদুলের খোঁজ খবর নিচ্ছি। তাকে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

রাঙ্গাটুঙ্গি ইউনাইটেড নারী ফুটবল দলের পরিচালক সাবেক অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম বলেন, যে কোন ব্যক্তির মনের শক্তিই হচ্ছে জীবন চলার অন্যতম হাতিয়ার। আসাদুলদের মত ব্যক্তি আমাদের সমাজের আইকন। কারণ অনেক সুস্থ সবল মানুষগুলো কর্ম করে চলতে চাই না বা পারে না। অথচ আসাদুল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি হয়েও সে নিজের কণ্ঠে গান শুনিয়ে মানুষের মন জয় করে পারিশ্রমিক নিয়ে সংসার চালায়। এটি অব্যশই সমাজের জন্য অনুকরণীয়।

(কেএস/এসপি/মার্চ ১৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test