E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বগুড়ায় ছুরিকাঘাতে আহত সেই ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু

২০২১ মার্চ ১৬ ১৮:৪০:০৭
বগুড়ায় ছুরিকাঘাতে আহত সেই ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু

বগুড়া প্রতিনিধি : বগুড়ায় ছাত্রলীগের এক পক্ষের ওপর অপর পক্ষের হামলায় ছুরিকাঘাতে আহত জেলা ছাত্রলীগ নেতা তাকবির ইসলাম খান চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) বিকাল তিনটায় মৃত্যুবরণ করেন। 

তিনি বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)এ নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন। বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের উপ—পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন। তাকবির ইসলাম খান ছাত্রলীগের বগুড়া জেলা কমিটির যুগ্ম—সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গুরুতর আহত অবস্থায় ছাত্রলীগ নেতা তাকবিরকে গত ১১ মার্চ রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শরীরে একাধিক আঘাতে সৃষ্ট জখম ছিল। বুকে ও মাথায় আঘাতসহ একাধিক আঘাতে সৃষ্ট জখমের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ভর্তির পর হতে তাকবিরের অবস্থা অবনতির দিকে যেতে থাকে। পরবর্তি সময়ে অবস্থার আরো আবনতি ঘটলে সোমবার(১৫ মার্চ) সন্ধ্যায় তাকবিরকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকাল তিনটায় তার মৃত্যু হয়।

ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত তাকবির ইসলাম খান মৃত্যুর পূর্বে এক ভিডিও বার্তায় জানান, আমার ডান পায়ে হাটুর নিচে ফ্রাক্চার হইছে, এসএস পাইপ ও রড দিয়ে মারছে। চাপাতি দিয়ে আঘাত করছে। বাঁ হাতের কব্জিতে আর কনুইয়ের মাঝখানে মারছে, ওখানেও ফ্রাক্চার হইছে এবং ওখানে দুইটা সেলাই পড়ছে। মাথার পিছনে মারছে এবং চারটা সেলাই পড়ছে। কোমরে পাজরের নিচে দুপাশেই স্টেপ/ছুরিকাঘাত করছে, দুপাশেই প্রায় ৮ ইঞ্চি গভীর ক্ষত হয়েছে এবং চারটা করে আটটা সেলাই পড়ছে। স্টেপ/ছুরিকাঘাত রউফ নিজেই করছে। পুরা শরীর পিটাইছে যার কারণে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত হইছে।

জানা যায়, সংঘর্ষের ঘটনায় ১৩ মার্চ শনিবার পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম—সাধারণ সম্পাদক তাকবির ইসলাম খানের মা আফরোজা ইসলাম (৫০) বাদী হয়ে আবদুর রউফ সহ সাত জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০—৩৫ জনের বিরুদ্ধে তার ছেলেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম এবং হত্যাচেষ্টার মামলা করেছেন। অন্যদিকে কলেজ ছাত্রলীগ শাখার কর্মী সোহাগ হাসান বাদী হয়ে তাকবির সহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০—২৫ জনের বিরুদ্ধে অপর মামলাটি করেছেন।

জানা যায়, গত ১১ মার্চ বৃহস্পতিবার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের এক পক্ষের ওপর অপর পক্ষের হামলা ও সংঘর্ষে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম—সাধারণ সম্পাদক তাকবির ইসলাম খান ছুরিকাঘাতের শিকার হন। সংঘর্ষে আরও ৫ নেতা—কর্মী আহত হয়। রাত নয়টার দিকে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম—সম্পাদক তাকবির ইসলাম খানের ওপর সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। এক পর্যায়ে দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছুরিকাঘাতে আহত বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম—সাধারণ সম্পাদক তাকবির ইসলামের আঘাত ছিল গুরুতর। রাতেই আহত ব্যক্তিদের বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত অন্যরা হলেন তাকবির ইসলামের সমর্থক শান্ত, ইমন, সাজিদ ও হাবিব।

আহতরা সরকারি শাহ সুলতান কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাকবির ইসলামের সঙ্গে থাকা সমর্থকদের অভিযোগ, আবদুর রউফের নেতৃত্বে সাতমাথায় তাকবিরসহ অন্যদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলার ঘটনার পর সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ সংবাদ মাধ্যমকে জানান— ‘তুচ্ছ ঘটনার জেরে তাকবিরের নেতৃত্বে তাঁর সমর্থকেরা আমার এবং কয়েকজন নেতা—কর্মীকে ধাওয়া করেন। এতে হাতাহাতির একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে।’

জানা যায়, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম—সম্পাদক তাকবির ইসলাম খান এবং সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের নেতা আবদুর রউফ উভয়ই রাজনীতিতে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি আলহাজ্ব মমতাজ উদ্দিনের গ্রুপে যুক্ত ছিলেন। ছাত্রলীগের নেতা—কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) ধুনট উপজেলায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সেখানে যাওয়ার পথে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম—সাধারণ সম্পাদক তাকবির ইসলামের মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগে জেলা ছাত্রলীগের সদস্য জাহিদ হাসানের মোটরসাইকেল। এতে দুই নেতার মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও কথা—কাটাকাটি হয়। ধুনট থেকে সন্ধ্যায় বগুড়া শহরের সাতমাথায় ফেরার পর সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের নেতা আবদুর রউফসহ তাঁর সমর্থকেরা জাহিদ হাসানের পক্ষ নিয়ে তাকবির ইসলাম খান ও তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বিতণ্ডায় জড়ান।

একপর্যায়ে আবদুর রউফের সমর্থকেরা তাকবির এবং তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলা করলে সংঘর্ষ বাধে। তাকবিরকে ধাওয়া করে ধরে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত করা হয়। ঘটনার পর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক তিতাস জানিয়েছেন তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের কোন পদক্ষেপ সম্পর্কে জানা যায়নি।

(আর/এসপি/মার্চ ১৬, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test