E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মানব দালাল টিটোর খপ্পরে পড়ে আনোয়ারের আত্মহত্যা, মুক্তি মেলেনি ঋণ থেকে

২০২১ মার্চ ২৪ ১৮:২৬:১৪
মানব দালাল টিটোর খপ্পরে পড়ে আনোয়ারের আত্মহত্যা, মুক্তি মেলেনি ঋণ থেকে

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া গ্রামের মাহমুদ আলীর ছেলে আনোয়ারের স্বপ্ন ছিল বিদেশ যেয়ে টাকা কামিয়ে পরিবারকে স্বচ্ছল করবে। দারিদ্রতার অভিশাপ মুক্ত হয়ে গড়বে সুখের জীবন-সংসার। রঙ্গিন স্বপ্ন দেখা আনোয়ারের আর হয়নি। মানব দালাল টিটোর খপ্পরে পড়ে দায়-দেনায় জড়িয়ে শেষে আত্মহত্যা করেছেন। তারপরও ঋণ থেকে মুক্ত হতে পারেনি। 

এদিকে স্বামী আত্মহত্যার পরে ৩ বছরের ছেলেকে নিয়ে স্ত্রী শ্বশুর বাড়িতে চলে যান। সেখানে গিয়ে আবার বিয়ের পিড়ীতে বসেন। মৃত আনোয়ারের ভাইয়েরা আজও দেনার বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চোখের পানিতে জীবন কাটছে আনোয়ারের মায়ের।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে লিবিয়ায় যাওয়ার জন্য কুমড়াবাড়িয়া গ্রামের মৃত ইউছুপ আলীর ছেলে কুখ্যাত মানব দালাল শাহিনুর রহমান টিটোর বোন শিউলি ও ভগ্নিপতি আব্দুল খালেকের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা দেয় আনোয়ারের পিতা মাহমুদ আলী। দালাল টিটো কথা দেয় দেড় মাসের মধ্যে সব কাগজ ঠিক করে লিবিয়ায় পাঠিয়ে দেব। আনোয়ার হোসেন এনজিও থেকে কিস্তি তুলে এই টাকা দেন।

এছাড়া শ্বশুর বাড়ি ও আত্মিয় স্বজনের কাছ থেকে ধার করে মোট ৩ লাখ টাকা জোগাড় করেন। দিন যত যায় আনোয়ারের ঋনের বোঝা বাড়তে থাকে। ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর পাওনাদারদের চাপ, সংসারের অভাব ও হতাশায় বিষপান করে আত্মহত্যা করে আনোয়ার। সাড়ে ৩ বছর বয়সেই এতিম হয় আনোয়ারের ছেলে। পরিবার দালাল টিটোর নামে আত্মহত্যার প্ররোচণার মামলা করতে চাইলে এক সপ্তাহের সময় নেয় দালাল টিটো। তখন সে বলে এক সপ্তাহের মধ্যে ৩ লাখ টাকা ফেরত দিয়ে দেবে। কিন্তু আজ দেব কাল দেব কে আড়াই বছর পার হলেও টাকা দেয়নি টিটো। টাকা চাইতে গেলে উল্টো আনোয়ারের বাবা-ভাইকে হত্যার হুমকী দেয়।

পুলিশের রেকর্ড সুত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মানব পাচারকারী শাহিনুর রহমান টিটোর বিরুদ্ধে আদালতে মানবপাচার ও প্রতারণার অভিযোগে ৮টি মামলা চলমান রয়েছে। মানবপাচার মামলায় জেল খেটে বেরিয়ে আনোয়ারের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে আবারও হুমকি ধামকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

কুমড়াবাড়িয়া গ্রামের বটতলা বাজারে এক দোকানদার জানান, জামিনে মুক্ত হয়ে টিটো এলাকায় ফিরে আসলে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। টিটো অনেকের কাছ থেকেই টাকা নিয়ে এভাবে প্রতারতণা করেছে। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে কেও মুখ খুলতে চাইছে না।

গ্রামবাসী জানায় একই গ্রামের ওহিদুলের ছেলে জয়নাল ও আবজাল শেখের জামাই হাজিডাঙ্গা গ্রামের রুবেল কাছ থেকেও একইভাবে টাকা নিয়ে বিদেশ পাঠাতে পারেনি দালাল টিটো। তাদের টাকাও ফেরৎ দেওয়া হচ্ছে না।

জয়নালের স্ত্রী এ প্রতিবেদককে জানান, আমাদের কাছ থেকে নগদ এক লাখ টাকা নেয়। কথা ছিল কাগজপত্র তৈরি করে বাকি টাকা নেবে। তিন বছর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এখনো কাগজপত্র তৈরি করতে পারেনি। আমরা টাকা ফেরত চাইলে দিচ্ছে না।

আবজাল শেখের স্ত্রী (রুবেলের শাশুড়ি) জানান, দালাল টিটো শুধু আমার জামাইয়ের কাছ থেকে নয়, পানি পথে বিদেশ পাঠানোর নামে বহু লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সর্বশান্ত করে দিয়েছে।

(একে/এসপি/মার্চ ২৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test