E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এবার বাড়িতে ঢুকে স্বামী-স্ত্রীকে মারপিট

রেকডীয় জমির উপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণের পরও থেমে নেই ইউপি চেয়ারম্যান প্রশান্ত সরকার!

২০২১ মার্চ ২৪ ১৮:৫০:০৩
রেকডীয় জমির উপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণের পরও থেমে নেই ইউপি চেয়ারম্যান প্রশান্ত সরকার!

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে রেকডীয় জমি জবরদখল করে রাস্তা নির্মাণ করে থেমে নেই সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্রশান্ত সরকার।

বুধবার সকালে তার নির্দেশে কয়েকজন গ্রাম পুলিশ জমির মালিক দম্পতিকে বাড়ির মধ্যে মারপিটের পর স্বামীকে বেঁধে এনে গোবিন্দকাটি হাইস্কুলের পিলারের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের নির্দেশে মুক্তি দেওয়া মুকেশ সরকার ও তার স্ত্রী অঞ্জনা বিশ্বাসকে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অঞ্জনা বিশ্বাস জানান, গত বছরের ১৮ মার্চ তার বাবা শেখর বিশ্বাস দানপত্র দলিল মূলে তাকে ৮০ শতক জমি লিখে দেন। গত বছরের পহেলা জুন তার জমির দক্ষিণ পাশে থাকা ১২ ফুট চওড়া ও ২০ ফুট লম্বা জমির ঘেরা, বেড়া ও গাছ গাছালি কেটে ফেলে একই গ্রামের বিনয় সরকারের চলাচলের রাস্তা তৈরি করে দেন দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান তাদের গ্রামের প্রশান্ত সরকার। এ ঘটনায় তিনি কালিগঞ্জ সহকারি পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে প্রতিপক্ষ তারক গাইনকে দিয়ে শ্বশুরসহ চারজনের নামে ৮ জুন মিথ্যা মামলা করান চেয়ারম্যান।

পরবর্তীতে তার দেওয়া এজাহারটি ১৩ জুন থানায় রেকর্ড করা হয়। বাধ্য হয়ে তিনি কালিগঞ্জ সহকারি জজ আদালতে গত বছরের ১৯ অক্টোবর বিনয় সরকার, আরতি সরকার, মানিক গাইন ও তপতী গাইনকে বিবাদী করে নিষেধাজ্ঞা চান। শুনানী শেষে আদালত বিবাদীদের ২ মার্চের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিলে ২৬ ফেব্র“য়ারি ও ২৭ ফেব্র“য়ারি ইউপি চেয়ারম্যান প্রশান্ত সরকারের নেতৃত্বে বিনয় সরকার, আরতি সরকার, মানিক গাইন ও তার স্ত্রী চেয়ারম্যানের দ্বিতীয় স্ত্রী বিউটি সরকারের গৃহপরিচারিকা তপতী গাইনসহ কমপক্ষে ৫০ জন লোক দা’ কুড়াল, কোদাল ও শাবল নিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে তাদের জমির দক্ষিণ পাশের পুকুর পাড়সহ ১৮ ফুট চওড়া রাস্তা তৈরি করে ফেলে। খবর দিলেও পুলিশের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।

অঞ্জনা বিশ্বাস আরো বলেন, বুধবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে গ্রাম পুলিশ এন্তাজ আলী, আনোয়ার হোসেন, ভোলানাথ স্বর্ণকার, আব্দুস সাত্তার, শরিফুল ইসলাম, চেয়ারম্যানের দেহরক্ষী পল্লব তরফদার, দফাদার সাইফুল ইসলাম তাদের বাড়িতে আসে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসছেন তাই চেয়ারম্যান তাদেরকে ডাকতে পাঠিয়েছে বলে অবহিত করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কোন নোটিশ ছাড়া যাবেন না বলায় চেয়ারম্যানের দেহরক্ষী পল্লব তরফদারসহ গ্রাম পুলিশগণ ঘরের মধ্যে ঢুকে তাকে ও তার স্বামী মুকেশকে এলোপাতািিড় কিল ঘুষি মারতে থাকে।

একপর্যায়ে তার গায়ের ওড়না খুলে নিয়ে স্বামীকে বেঁধে মারতে মারতে গোবিন্দকাটি হাইস্কুলের মধ্যে পিলারের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয় চেয়ারম্যানের নির্দেশে। এরপর মুকেশকে আবারো মারপিট করা হয়। বিষয়টি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসেন ছোটকে জানালে তার কথামত থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হুসেন তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন। এরপর উপপরিদর্শক গোবিন্দ আকর্ষণ ঘটনাস্থলে আসার পরপরই স্বামী মুকেশকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গ্রাম পুলিশ এন্তাজ আলী ও শরিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, চেয়ারম্যানের নির্দেশে তারা সব কিছুই করেছেন। এতে তাদের কোন দোষ নেই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্রশান্ত সরকার বলেন, মুকেশ ও তার স্ত্রীকে মারপিটের ঘটনা ঠিক নয়।

কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক গোবিন্দ আকর্ষণ জানান, জনস্বার্থে নির্মিত রাস্তা মুকেশ ও তার স্ত্রী অঞ্জনা কেটে দিয়েছে এমন খবর দেওয়া হয় থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে। পরবর্তীতে মুকেশ ও অঞ্জনার আটক রাখার খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। তবে রাস্তা কাটার কোন দৃশ্য চোখে না পড়লেও স্বামী স্ত্রীকে মারপিটের পর স্বামীকে বেঁধে রাখার কথা অনেকেই তাকে জানিয়েছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

(আরকে/এসপি/মার্চ ২৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test