E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জোয়ারে ফের ভেঙেছে খোলপেটুয়ার বেঁড়িবাধ, নতুন এলাকা প্লাবিত

২০২১ মার্চ ৩১ ২২:৫২:০৭
জোয়ারে ফের ভেঙেছে খোলপেটুয়ার বেঁড়িবাধ, নতুন এলাকা প্লাবিত

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : গত বছরের ২০ মে মাসে ঘুর্ণিঝড় আম্ফানে ও  ২২আগষ্ট খোলপোটুয়া নদীর জলোচ্ছ্বাসে  আশাশুনি সদর ইউনিয়নের দয়ারঘাট গ্রামের বিধবা কমলা দাসী শেষ সম্বল বাসস্থানটুকু বিলিন হয়েছে নদীগর্ভে। এরপর থেকে বাসা রিংবাঁধ এর উপর। মঙ্গলবার দুপুরে খোলপেটুয়া নদীর জোয়োরের তোড়ে রিং বাঁধ এর কিছু অংশ ভেঙে তিন গ্রাম প্লাবিত হয়। এরপরও কোন রকমে তিনি আশ্রয়টুকু টিকিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেলের পরিবর্তে  বুধবার ওই বাঁধ সংস্কার করতে যেয়ে দুপুরের জোয়ারে রিং বাঁধের ভাঙন বেড়ে তাকেও ঘর ছাড়তে হয়েছে। এখন তিনি সমীর রায় এর বাড়ির সামনে বেড়িবাঁধের উপর আবারো খুপড়ি ঘর বেঁধে কোন রকমে জীবন বা্চাঁনোর লড়াইয়ে নেমেছেন।

একইভাবে কমলা দাসীর মত আম্পানে আশ্রয় হারিয়ে পাশাপাশি রিং বাঁধ এর উপর বসবাসকারি হরিপদ বিশ্বাস বলেন, যাওয়ার কোন জায়গা নেই। সরকারের কোন কর্মকর্তা খোঁজ নেয়নি গত নয় মাসে। বাঁধ ভাঙলে আমাদের কপাল পুড়লেও ভাগ্য খোলে চেয়ারম্যান, মেম্বর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের। কমলা দাসীর মত তিনিও নতুন করে বেড়িবাঁধে ঘর বানিয়ে জীবন বাঁচানোর লড়াইয়ে নেমেছেন।

কমলা, হরিপদ বিশ্বাস এর মত রিং বাঁধ এর উপর নির্মিত ঘর ভেসে যাওয়া ডাঃ মিলন বিশ্বাস, নির্মল মণ্ডল, মণিরাম মণ্ডল, দূঃখীরাম মণ্ডল একই সুরে বলেন, দয়ারঘাটটি হিন্দু অধ্যুষিত হওয়ায় তাদের অংশে নদী বাঁধ সংস্কারে গড়িমসি নতুন কিছু নয়। অথচ তাদের বিপরীত পাড়ে নদীবাঁধ যথারীতি সংস্কার হয়েছে। তাই বর্তমানে তাদের গ্রামে আর ১১টি হিন্দুপরিবার রয়েছে। তার মধ্যে তারা ছয়টি পরিবার হারিয়েছেন সর্বস্ব। অন্যরা হারানোর অপেক্ষায়।
সরেজমিনে বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা সদর ইউনিয়নের দয়ারঘাটে গেলে এভাবে আর্তি জানান আশ্রয়হীন হয়ে পড়া ছয়টি পরিবার প্রধান।

দয়ারঘাটের নিরঞ্জন দাস ও পুলিন দাস বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে সুপার মুন পূর্নিমার গোনে খোলপেটুয়া নদীর নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে যেয়ে আঘাত হানে দয়ারঘাট বেড়িবাঁধে। এতে তাদের দুজনের বাড়ির পাশে, রণজিৎ বৈদ্য, মণীন্দ্রনাথ সানার বাড়ির পাশে ও মণীনদ্রনাথ মণ্ডলের দোকানের সামনে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এতে দয়ারঘাট, দক্ষিণ জেলেখালি, জেলেখালি গ্রামের শতাধিক বসতপাড়ি পানি ঢোকে। তলিয়ে যায় ৫০টি ছোট বড় মাছের ঘের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বিকেলে ভাটা শুরুর পর থেকে কাজ শুরু করার কথা বললেও শুরু করা হয় বুধবার সকাল ১০টার দিকে। স্থানীয় গ্রামবাসি তাদের বাড়িসহ পাঁচটি পয়েন্টে বাঁধ সংস্কার করতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশান অফিসার রাব্বি তাতে রাজি হননি।

একপর্যায়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নবনিযুক্ত ঠিাকাদার কাজ শুরু করতে দু’ ঘণ্টা দেরী করলে যথা সময়ে বালির বস্তা না ফেলতে পারায় সুন্দরবন ব্যাটারীর সামনে মাছের সেটের পাশ দিয়ে আরো ৩০ হাত রিংবাঁধ ভেঙে যায়। জোয়ার শুরু না হতেই ওই স্থান ১০ হাতেরও বেশি বসে যেয়ে প্রবল বেগে জল ঢুকতে শুরু করে। একপর্যায়ে সদরের পশ্চিম বিল প্লাবিত হয়ে দুর্গাপুর পর্যন্ত জল পৌঁছায়। ফলে গত দু’দিনে দু’ শতাধিক মাছের ঘের ভেসে ও শতাধিক বসত বাড়ি ভেঙে গেছে। বুধবার রাত ৮টার মধ্যে মধ্যে ওই বাঁধ সংস্কার করা না গেলে আরো বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। বাঁধ সংস্কারে টাকা বরাদ্দ হলেও ঠিকাদার যথাসময়ে কাজ শুরু না করায় তােিদর আবারো বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হলো বলে জানান তারা।

আশাশুনি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সম সেলিম রেজা মিলন জানান, বার বার বলার পরও দয়ারঘাটের দুটি পয়েন্টে ৯ মাসে বাঁধ নির্মান সম্ভব হয়নি। আর এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতাকে দায়ি করেন তিনি।
দয়ারঘাট এলাকায় নদীবাঁধ সংস্কারে এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হলেও জায়কার জন্য কাজে দেরী হচ্ছে দাবি করে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার জানান, খুব শীঘ্র বাঁধ মেরামত করা হবে।

(আরকে/এসপি/মার্চ ৩১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test