E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ধর্ষণ চেষ্টার বিচার না পাওয়ায় দুই সন্তানকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা!

২০২১ এপ্রিল ০১ ১৬:১৭:০৯
ধর্ষণ চেষ্টার বিচার না পাওয়ায় দুই সন্তানকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা!

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় বিচার না পাওয়ায় পাঁচ বছরের ধর্ষিতা মেয়ে ও আট বছরের ছেলেকে হত্যা করে নিজে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এক মা। বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটার দিকে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার পূর্ব লাঙ্গলঝাড়া গ্রাম থেকে পুলিশ তিনটি লাশ উদ্ধার করেছে।

মৃতরা হলেন, পূর্ব লাঙ্গলঝাড়া গ্রামের শিমুল সরদারের স্ত্রী মাহফুজা খাতুন (৩০), তার আট বছরের ছেলে লাঙ্গলঝাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র মাহাফুজুর রহমান ও পাঁচ বছরের মেয়ে মোহনা খাতুন।

পূর্ব লাঙ্গলঝাড়া গ্রামের আব্দার সরদারের ছেলে ইয়াকুব আলী সরদার বলেন, তার ভাই শিমুল সরদার ট্রাক্টর চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ কারণে তাকে জেলার বাইরেও দীর্ঘ সময় কাটাতে হয়। প্রায় দু’ মাস আগে ভাই শিমুল সরদার বাগেরহাটে ট্রাক্টর নিয়ে কাজ করতে যায়। গত সোমবার সবেবরাতের দিন সকাল ১১টার দিকে ভাইঝি মোহনাকে বাড়ির পাশে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে প্রতিবেশী মাদক ব্যবসায়ি লাল্টু গাজীর ছেলে বখাটে হৃদয় (১৪)। বিষয়টি তৎিক্ষণিকভাবে মোবাইল ফোনে ভাই শিমুলকে জানিয়ে দ্রুত বাড়িতে আসতে বলেন। কাজের ব্যস্ততার কারণে ভাইয়ের আসতে কয়েকদিন দেরী হবে বলে ভাবীকে জানান। এরপর বাবা (শ্বশুর)আব্দার সরদারকে জানালে তিনিও মামলার খরচের ভয়ে থানা পুলিশ না করার পরামর্শ দেন। এরপর প্রতিকার চেয়ে ভাবী মাহফুজা সোমবার বিকেলে লাঙ্গলঝাড়া ইউপি সদস্য সাফিজুল ইসলামের কাছে অভিযোগ করেন। সামনে ভোট তাই তার কিছু করার নেই বলে চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়ে দেয় সাফিজুল।

মঙ্গলবার সকালে চেয়ারম্যান নূরুল ইসলামের কাছে গেলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য শাহীদা খাতুনের কাছে পাঠিয়ে দেন মাহফুজাকে। সে অনুযায়ি বুধবার সন্ধার পর শাহীদা খাতুন বিষয়টি নিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে বৃহষ্পতিবার থানায় মামলা করতে পরামর্শ দেন। থানায় মামলার কথা জানতে পেরে ভাবীকে হুমকি দেন ধর্ষণের চেষ্টাকারির বাবা লাল্টু গাজী। বুধবার রাতেই হুমকির বিষয়টি ভাই শিমুলকে মোবাইলে অবহিত করেন ভাবী।
ইয়াকুব আলী আরো জানান, সকালে ভাই শিমুল সরদার বাগেরহাট থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। সকাল ৮টার দিকে ভাবী পার্শ্ববর্তী লাঙ্গলঝাড়া বাজার থেকে নাস্তা কিনে এনে দু’ সন্তানকে খাওয়ান।

সকাল ১০টার দিকে ভাবীর মা মনোয়ারা খাতুন ঘরের মধ্যে আড়ায় ঝুলন্ত অবস্থায় মেয়ে মাহফুজার লাশ, মেঝেতে নাতি লাঙ্গলঝাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র মাহফুজুর রহমান ও দরজার মুখের কাছে নাতনী মোহনার লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করেন। তিনিসহ স্থানীয় লোকজন ছুঁটে এসে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। বিকেল তিনটার দিকে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান, কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর খায়রুল কবীর ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের চৌধুরী ঘটনাস্থলে আসার পর তিনটি লাশ উদ্ধার করা হয়।

যশোর জেলার শার্শা থানার বসতপুর গ্রামের মনোয়ারা খাতুন বলেন, শিশু ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিচার না পেয়ে বৃহষ্পতিবার সকাল সাতটার দিকে তার মেয়ে মাহফুজা মোবাইল ফোনে আত্মহত্যার কথা বলে। তিনি তাকে বিরত থাকতে বলে তার বাড়িতে আসছেন বলে মেয়েকে জানান। সকাল ১০টার দিকে মেয়ের বাড়ির দরজার মুখে নাতনির, ঘরের মেছেতে নাতি ও ঘরের আড়ার সাথে মেয়ের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। শিশু মোহনার ধর্ষণের চেষ্টার বিচার না পেয়ে তার মেয়ে মাহফুজা দু’ সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করেন তিনি।

সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, দু’ শিশুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে । তবে মাহফুজা আত্মহত্যা করেছে না তাকে হত্যা করা হয়েছে তা ময়না তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। লাশ তিনটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

(আরকে/এসপি/এপ্রিল ০১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test