E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের খাওয়ার সরকারি বরাদ্দের সাড়ে ৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ

২০২১ এপ্রিল ০৩ ১৭:৫৬:৫৫
সাতক্ষীরায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের খাওয়ার সরকারি বরাদ্দের সাড়ে ৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদরের চৌবাড়িয়া মরহুম আব্দুল বারী মল্লিক হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের খাওয়ার জন্য হাঁড়ি না জ্বললেও সরকারি বরাদ্দের তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে। অবিলম্বে ওই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।

সাতক্ষীরা সদর উপাজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে ১৯৯৬ সালে সদরের চৌবাড়িয়াতে জনৈক আফছার আলী তার বাবার নামে মরহুম আব্দুল বারী মল্লিক হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন। যার নিবন্ধন নং- সাত- ১০২০/২০১৯। ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ প্রতিষ্ঠানটি সংস্কার করা হয়। সমাজসেবা অফিস থেকে ছাত্র প্রতি এক হাজার টাকা করে ২০ জন ছাত্রের ছয় মাসের খাওয়া দাওয়ার এক লাখ ২০ হাজার টাকার ও দ্বিতীয় দফায় ২০ জন ছাত্রের জন্য ২০ ফেব্র“য়ারি দু’ লাখ ৪০ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়।

চৌবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর জব্বার, আব্দুর রহিম, হারুণ অর রশীদ, সাদিকুর রহমানসহ কয়েকজন জানান, ২০১৭ সালে মরহুম আব্দুল বারী মল্লিক হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠিত হলেও সেখানে অবস্থানকারি শিক্ষার্থীদের খাওয়া দাওয়া বা রান্নার কোন ব্যবস্থা নেই। অনেকেই স্থানীয় বিত্তশালী ও মহানুভদের বাড়িতে খেয়ে থাকে। আবার কখনো তাদের খাবার জোটে না। অথচ এতিমখানা ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আফসার আলী মল্লিক প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন স্থান থেকে টাকা তুলে মোটা অংকের টাকা পকেটস্ত করেন।

এমনকি ইতিপূর্বে ২০ জন ছাত্রের পৃথক দু’টি তালিকা সমাজসেবা অফিসে জমা দিয়ে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকার চেক নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। সদর সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ শহীদুর রহমান শুক্রবার বিকেলে এতিমখানা পরিদর্শণে এসে রান্নার কোন ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষুব্ধ হয়ে আগামি সাত দিনের মধ্যে রান্না বান্নার ব্যবস্থা না করলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। এটাকে ভালভাবে নেননি কমিটির সভাপতি আফছার আলী, সাধারণ সম্পাদক সালেকুজ্জামান। অবিলম্বে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।

সরেজমিনে শুক্রবার সকাল ১১টায় মরহুম আব্দুল বারী মল্লিক হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় গেলে রান্না ঘরে তিনটি নতুন হাঁড়ি দেখতে পাওয়া যায়। ভাতশালা গ্রামের আনছার আলীর ছেলে আল আমিন বলে সে ছয় মাস যাবৎ এতিমখানায় থেকে ( বর্তমানেষষ্ঠ শ্রেণীতে) পড়াশুনা করে। অধিকাংশ সময় এতিমখানার পার্শ্ববর্তী বাড়িতে তাদের খেয়ে বাঁচতে হয়। হেফজ শ্রেণীতে পড়ুয়া লক্ষীদাঁড়ি গ্রামের সামছুর রহমানের ছেলে মোঃ আসিফ হোসেন বলে, সে দেড় বছর যাবৎ এ এতিমখানায় রয়েছে। পুরো সময়টাই তাকে খেতে হয়েছে ফ্রি লোজিং এ।

একইভাবে এতিমখানায় কোন খাওয়া বা রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় মহানুভবদের বাড়িতে খেয়ে জীবন কাটানোর কথা ব্যক্ত করে রাকিব হাসান, রবিউল ইসলাম, হারুন মোল্লা, আরিফুল ইসলামসহ সমাজসেবা অফিসে অনুদানের জন্য তালিকাভুক্ত কয়েকজন। তারা জানায়, কিছুক্ষণ আগে কয়েকটি হাঁড়ি কিনে আনা হয়েছে। রোববার বা সোমবার থেকে রান্না হতে পারে। তাদের জন্য যে সমাজসেবা অফিস টাকা দেয় তা আপনার(সাংবাদিক) মাধ্যমে এই প্রথম শুনেতে পেরেছে তারা।

এ সময় উপস্থিত মাদ্রাসার হেফজা শিক্ষক আব্দুল মালেক ও ইমাম মাহাবুবর রহমান বলেন, রান্নার কোন ব্যবস্থা না থকেলেও খুব শ্রীঘ্র শুরু করা হবে।

মরহুম আব্দুল বারী মল্লিক হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা আফছার আলী এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ সালেকুজ্জামান বলেন, প্রথম দফায় চেক পেতে সমাজসেবা কর্মকর্তা শেখ শহীদুর রহমানকে চার হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। দ্বিতীয় চেকের জন্য টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ডিসেম্বরে অনুমোদিত চেক সম্প্রতি দেওয়ার পর সোনালী ব্যাংকের ভোমরা শাখায় তা জমা দেওয়া হয়েছে।

শেখ শহীদুর রহমান অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন দাবি করে তারা বলেন, ঘুষ দিতে না পারায় প্রতিষ্ঠানের খাওয়ার ব্যবস্থা না থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন শহীদুর রহমান। তবে এতিমখানায় খাওয়ার ব্যবস্থা নেই এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন না করার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।

সাতক্ষীরা সদর সমাজসেবা কর্মকর্তা শেখ শহীদুর রহমান কোন প্রকার ঘুষ গ্রহণ বা চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি সদর ও শ্যামনগর দু’টি উপজেলার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সেকারণে ইচ্ছা থাকার পরও সব এতিমখানা পরিদর্শণ সম্ভব হয়নি। সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশ অনুযায়ি ৫ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিটি এতিমখানার সরেজমিন তদন্ত করে হাল নাগাদ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হলে তিনি শুক্রবার বিকেলে মরহুম আব্দুল বারী মল্লিক হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় জান। ইতিপূর্বে দু’টি চেক এর মাধ্যমে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হলেও সেখানে রান্না করে খাওয়ারের কোন ব্যবস্থা না থাকায় তিনি হতবাক হয়ে আগামি সাত দিনের মধ্যে রান্নার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

(আরকে/এসপি/এপ্রিল ০৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test