E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পণ্য কিনতে পারছে না বেশিরভাগ মানুষ 

ঝালকাঠিতে টিসিবি পণ্য নিয়ে ডিলারদের টালবাহানা!

২০২১ এপ্রিল ০৫ ১৫:৫৭:৪৪
ঝালকাঠিতে টিসিবি পণ্য নিয়ে ডিলারদের টালবাহানা!

ঝালকাঠি প্রতিনিধি : রমজান মাস সামনে রেখে ঝালকাঠিতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু প্রতিদিন ঝালকাঠিতে টিসিবি পণ্য বিকেল ৫ টায় ডিলাররা নিয়ে আসায় বেশির ভাগ মানুষ এসব পণ্য কিনতে পারছেনা। অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে অধিকাংশ মালামাল। যা পরবর্তিতে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে।

অপরদিকে ডিলাররা একসঙ্গে কয়েকটি পণ্য প্যাকেজ আকারে বিক্রি করায় নিম্নআয়ের মানুষরা প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছেনা। যদিও এভাবে পণ্য বিক্রির কোনো নিয়ম নেই বলে জানিয়েছে বরিশাল টিসিবি কর্তৃপক্ষ। ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন ডিলারদের এ ধরনের বিভিন্ন ত্রুটির কারনে জেল জরিমানা ডিলারশীপ বাতিল করলেও তাদের অনিয়ম থামানো যাচ্ছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে।

ঝালকাঠি সদরসহ ৪ উপজেলায় মোট ৩০ জন ডিলার নিযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ডিলাররা তাদের তৈরী করা বড় প্যাকেজে পণ্য বিক্রি করায় নিম্ন আয়ের মানুষরা ওই পণ্য কিনতে পারছেন না। পাশাপাশি প্রতিদিন বরিশাল টিসিবির গুদাম থেকে পণ্য খালাস করে ঝালকাঠি আনতে বিকল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তাই সকাল থেকে দূরদূরান্ত থেকে শহরে আসা অপেক্ষমান সাধারণ মানুষ এসব পণ্য নিতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি যাচ্ছে। শহরের কিছু লোকদের প্রতিদিন এসব পণ্য ক্রয় করতে দেখা গেলেও উপজেলার গ্রামের অধিকাংশ মানুষ তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকরা গতকাল ৪ এপ্রিল সকাল থেকে খোঁজ খবর নিয়ে সত্যতা দেখতে পায়। সকাল ১১ টার দিকে ডিসি অফিসের বিপরীতে জেল খানার সড়কে হাত ব্যাগ নিয়ে নারীদের লাইন দিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। জিজ্ঞেস করলে তারা জানান টিসিবির পণ্য নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন তারা। একই অবস্থা দেখা গেছে শহরের মিনি পার্ক সংলগ্ন কলেজ খেয়াঘাট এলাকায়ও। দূরদূরান্ত থেকে আসা অপেক্ষমান এসব মানুষ জানেনা কখন টিসিবির পণ্য দেয়া হবে।

এ বিষয়ে কথা হয় বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে থাকা টিসিবির সহকারি কার্য্য নির্বাহী সাহিদুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান বরিশাল গুদাম থেকে প্রথমে মালামাল দেয়া হয় বিভাগের দূরবর্তি জেলা ভোলা ও বরগুনা ডিলারদের। তারপর অন্য জেলার মালামাল দিতে দেরী হচ্ছে।

ডিলারদের প্যাকেজ করে পণ্য দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ অন্যায় এবং নিষিদ্ধ। কোন ডিলার প্যাকেজ করে টিসিবি পণ্য বিক্রয় করলে তার বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার আইনে মামলা করে সাজা দেয়া হবে। তার দেয়া তথ্য মতে গত ৪ এপ্রিল জেলা সদরে ৩ জন ডিলার নিযুক্ত করা হলেও ২ জন ডিলার পণ্য নিয়েছে। এদের মধ্যে বিকেল ৫ টায় টিসিবির পণ্য নিয়ে ঝালকাঠি ডিসি অফিসের মধ্যে প্রবেশ করতে দেখা যায় সিফাত এন্টার প্রাইজের প্রপাইটর কবির হোসেনকে। অপরদিকে বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে পণ্য নিয়ে কলেজ খেয়াঘাট আসেন অপর ডিলার নাইম ষ্টোরের প্রপাইটর মনির হোসেন।

ডিলার কবির আহমেদ জানান, বরিশাল থেকে বিকেল ৪টায় মালামাল পেয়েছি। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ পণ্য দেয়ার নিয়ম থাকলেও বরিশাল ব্যাংক থেকে পেঅর্ডার পেতে এবং গোডাউনের লেবাররা মালামাল দিতে টালবাহানা করায় এভাবে দেরী হচ্ছে প্রতিদিন।

ডিলার কবির আহমেদ আরো জানান, গতকাল রবিবার পিয়াজ দেয়নি বরিশাল থেকে। তাই প্যাকেজে মাল দেইনি। যে দিন পিয়াজ দেয় সে দিন ক্রেতারা বেশি পিয়াজ নেয়ায় অন্য মাল থেকে যায়। তাই প্যাকেজ সিষ্টেম করে বিক্রি করায় সব মালই চলে।

ক্রেতা মো. আলম, হিরু মিয়া, রহিমা বেগম, পারুল হাওলাদার জানান, আজ পিয়াজ বিক্রি না করায় প্যাকেজে মালামাল নিতে হচ্ছেনা। প্যাকেজ ছাড়া আলাদা ভাবে ডাল, চিনি, ছোলা কিংবা তেল বিক্রি করেনা ডিলাররা।

টিসিবির ট্রাকের পণ্য কেনার জন্য অপেক্ষমাণ গৃহবধূ মাজেদা বলেন, সরকারতো প্যাকেজ সিষ্টেমে টিসিবি পণ্য বিক্রি না করলেও ডিলাররা তা করে আমাদের বিপাকে ফেলছে। বড় প্যাকেজ করায় সবার পক্ষে টিসিবির খুচরা পণ্য কেনা সম্ভব হয় না। তাই অনেকেই পাড়া-মহল্লার ছোট খাটো দোকানে খুচরা বিক্রির জন্য ওই পন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে অপেক্ষাকৃত দরিদ্ররা ওই পণ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্যাকেজ করে টিসিবি পণ্য বিক্রির অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডিলারদের বিভিন্ন অনিয়মের কারনে ইতিপূর্বে আমরা ডিলারশিপ বাতিল এবং জরিমানা করেছি বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী।

(এস/এসপি/এপ্রিল ০৫, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test