E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মঙ্গলবার ঝিনাইগাতী সীমান্তে ‘একদিন এক রাত্রির চরণতলা মেলা’

২০১৪ এপ্রিল ২১ ১৬:০৪:১২
মঙ্গলবার ঝিনাইগাতী সীমান্তে ‘একদিন এক রাত্রির চরণতলা মেলা’

শেরপুর প্রতিনিধি : একদিন একরাত্রির ‘চরণতলা মেলা’ ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার। শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড় এলাকার বিষ্ণুপুর গ্রামের ভারত সীমান্ত সংলগ্ন চরণতলায় শ্মশান কালীপূজা উপলক্ষ যুগ যুগ ধরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের কৃষ্ণপক্ষের প্রথম মঙ্গলবার বসে এ মেলা। মেলাটির প্রধান বৈশিষ্ট হলো এটি সকালে শুরু হয়ে পরদিন ভোরে শেষ হয়। একদিন একরাত্রির এ মেলাকে ঘিরে চরণতলা ও আশপাশের এলাকায় এখন সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। কালের ব্যবধানে এখন চরণতলার মেলাটি স্থানীয় হিন্দু-মুসলমান পাহাড়ী-বাঙালী জনতার মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে।
বিষ্ণপুর গ্রামের ওই এলাকাটির ‘চরণতলা‘ নাম হওয়ার পিছনে একটি লোককাহিনী রয়েছে। এই গ্রামে চরণ হাজং নামে এক গৃহস্থ ছিল। সে প্রতিদিন গাঁয়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পাহাড়ি নদী সোমেশ্বরী পাড়ি দিয়ে ওপাড়ে তার মেষ চড়াতে যেতো। একদিন ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে দ্রুত মেষগুলোকে পার করে সে নিজেও সাঁতরে নদী পার হতে চেষ্টা করে। কিন্তু নদীর পানির প্রবল স্রোতে চরণ হাজং তলিয়ে যায়। সেই থেকে এই জায়গাটির নাম ‘চরণতলা‘ হিসাবে পরিচিত লাভ করে।

প্রায় পৌনে দু’শ বছর আগে শেরপুরের তিন আনী জমিদার স্ত্রী হৈমবতী চৌধুরানীর বিষ্ণুপুরস্থ পৌনে এক কড়া সম্পত্তি নাচনমোহরীর রাজবংশী ভূস্বামী হরসুন্দর রায় চৌধুরী খরিদ সূত্রে জমিদারীর মালিক হন। তখন থেকেই তাদের তত্ত্বাবধানে বংশ পরস্পরা ধরে এ পূজা ও মেলা পরিচালিত হয়ে আসছিল। সেখানে শ্মশান কালী মন্দিরকে ঘিরেই এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই মন্দিরটি যুগ যুগ ধরে এতদঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক হিসাবে ঐতিহ্য বহন করে আসছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ সীমান্তে যখন পাক বাহিনী নির্বিচারে বাড়িঘর প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছিল তখন ওই অঞ্চলের মুসলমান অধিবাসীরা মন্দিরটি রক্ষা করেন।
পূর্বে এই শ্মশান কালীর পূজায় মানতের দু‘থেকে আড়াই হাজার পাঠা ও মোষ বলি হতো। বর্তমানে তা কমতে কমতে তিন-চারশ’তে নেমে এসেছে। পূজা উপলক্ষে আয়োজিত দিবারাত্রির মেলায় বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর দোকান ছাড়াও হিন্দু সাধকদের জন্য শাঁখা সিদুঁরের দোকান বসে। অপরদিকে, এ মেলায় নানা ধরনের বিপুল পরিমাণ মিষ্টান্ন বিক্রি হয়ে থাকে। স্থানীয় হালুইকরেরা ২/১ দিন আগেই সেখানে দোকান খুলে মিষ্টি তৈরী শুরু করেছে। মেলায় গৃহস্থালী নানা পণ্যসামগ্রীর দোকান বসে। মেলা চলে সকাল থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত। হাজার হাজার নারী পুরুষের পদচারনায় সকাল থেকে সারা রাত এ এলাকা মুখর থাকে। চরনতলার মেলা উপলক্ষে সেখানে রোগবালাইর আক্রমন থেকে রক্ষায় ‘শীতলা পূজা’ নামে এক ধরনের পূজা অনুষ্ঠিত হয়। শোকজন তাদের মনোবাসনা পুরনের জন্য এখানে মানাসিক করে এবং পাঠা বলি দেয়।
চরণতলা শ্মশান কালীপূজা ও মেলা কমিটির উপদেষ্টা হাই স্কুল শিক্ষক নরেন্দ্র চন্দ্র রায় জানান, কখন থেকে এখানে শ্মশান কালীপূজা ও মেলা শুরু হয়েছে তা আমি বলতে পারবো না। তবে বর্তমানে চৌচালা মন্দির হিসেবে যেটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে তা প্রায় একশ‘ বছর পূর্বে বাংলা ১৩১৫ সালে অভয় চরণ হাজং নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা তৈরী করেছিলেন। এ পূজার মূল আয়োজক বৃহত্তর গারো পাহাড় এলাকার কোচ, ডালু, বানাই, হাজং, গারো, হিন্দু ও উপজাতি সম্প্রদায়ের লোকজন। উপমহাদেশ বিভক্তির পূর্বে এই পূজা ও মেলায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল সংখ্যক ভক্ত-পূণ্যার্থীর আগমন ঘটতো। চরণতলা মেলা কমিটির সহ-সভাপতি বিপিন বিহারী কোচ বলেন, বাংলা ১৩০৬ সাল থেকে চরণতলা শ্মশান কালীপূজা ও এ উপলক্ষে মেলা হয়ে আসছে। সেই হিসেবে চরণতলা মেলার এবার ১১৫ বছর পূর্ণ হলো। বৈশাখ মাসের কৃষ্ণপক্ষের প্রথম মঙ্গলবার হিসেবে এবার ২২ এপ্রিল বসছে ’চরণতলা মেলা’। ইতোমধ্যেই বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত ভক্ত-পূণ্যার্থীর সমাগম ঘটতে শুরু করেছে। বলি দেওয়ার জন্য কেউ কেউ তাদের মানাসিকের পশুও নিয়ে এসেছেন।
(এইচবি/এএস/এপ্রিল ২১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test