E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চুরির অপবাদে শিশুর চুল কেটে গাছে বেঁধে নির্যাতন!

২০২১ এপ্রিল ১০ ২৩:০৮:০২
চুরির অপবাদে শিশুর চুল কেটে গাছে বেঁধে নির্যাতন!

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর গলাচিপায় মোবাইল চুরির অভিযোগে গরুর রশি দিয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতন করে কাচি দিয়ে মাথার চুল কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় শিশুটির বাবা-মাকেও নির্যাতন করা হয়। এর কিছু পরেই পুরো ঘটনাটি নির্যাতনকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় গলাচিপা থানায় একটি মামলা হলে ফেসবুক থেকে ভিডিওটি মুছে দেয় দুর্বত্তরা। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গলাচিপা থানা পুলিশ সোহেল মৃধা (৩৮) নামের এক যুবকে গ্রেপ্তার করেছে। এদিকে মামলা করেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিশুটির পরিবার। পুরো ঘটনাটি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গলচিপা থানার ওসি এম আর শওকত আনোয়ার ইসলাম।

মামলার বিবরণ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপা উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ডের ফুলখালী গ্রামের জুলেল মৃধার মোবাইল চুরির অভিযোগে শুক্রবার সকালে ডাকুয়ার ৮নম্বর ওয়ার্ডের কৃষ্ণপুর গ্রামের মকবুল গাজীল ছেলে রাকিব গাজী (১৪) কে ঘর থেকে ডেকে নেয়। এর পর ফুলখালী রেজাউল মৃধার বাড়ির সামনে পাকা রাস্তার দক্ষিণ পাশে রাকিবকে গরু বাঁধার রশি দিয়ে আম গাছের সাথে হাত পা বেঁধে নির্যাতন করে ফুলখালী গ্রামের জুয়েল মৃধা, রাকিব মৃধা, সোহেল মৃধা, এমাদুল মৃধা ও জাকির মৃধাসহ অজ্ঞাত আরো দু-তিনজন। রাকিবের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় তিন ঘণ্টা ধরে অকথ্য নির্যাতন চালায়।

নির্যাতনের এক পর্যায় রাকিকের বাবা মকুল গাজীকেও ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে আনে। তাকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ছেলের পাশে আনে এবং ছেলের সামনে তাকেও অকথ্য নির্যাতন করে। এতে মকবুল গাজী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে বাঁচাতে স্ত্রী মোর্শেদা বেগম ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং স্বামীকে (মকবুল গাজী)-কে উদ্ধার করতে চাইলে তাকেও নির্যাতন করা হয়। এসব ঘটনা দুর্বৃত্তরা মোবাইলে ভিডিও করে। এ ঘটনা শুনে মোর্শেদা বেগমের চাচা স্থানীয় রুহুল মোল্লা এসে রাকিবের বাঁধন খুলে দিলে তাকেও অপমান করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে ঘটনা শুনে ডাকুয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. আরিফ মিয়া এসে সংশ্লিষ্ট ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাকিব মোল্লাকে জানতে বলেন।

এ বিষয় ডাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. আরিফ মিয়া বলেন, শিশুটির বাড়ি আমার ওয়ার্ডে। আমি ঘটনাস্থল গিয়ে ৯ নম্বরের মেম্বরকে খবর দিতে বলি। বিষয়টি আইনিভাবে মীমাংসার কথা বলেছিলাম।এ প্রসঙ্গে ডাকুয়া ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রাকিব মোল্লা বলেন, আমি এলাকায ছিলাম না। আমাকে এমাদুল ফোন দিয়ে জানিয়েছিলেন। তাকে দফাদারকে বলতে বলেছি। কিন্তু তাকে আইন হাতে নিতে বলা হয়নি।

নির্যাতনের শিকার শিশু রাকিব বলেন, আমারে ঘর দিয়া রেজাউল মৃধা ডাইক্কা নেয়। রাস্তায় উঠলে আমার একটা মোবাইল পকেটে তার ঢুকাইয়া দেয়। এর পর রেজাউল মৃধার বাড়ি নিয়া বলে ‘চোর পাইছি’। এ সময় এমাদুল মৃধা, রাকিব মৃধা, সোহেল মৃধাসহ কয়েক জন মিল্লা একটি গরুর দড়ি দিয়া আম গাছের লগে বাইন্দা আমারে বাঁশের লাডি দিয়া পিডাইছে। হেরা (তারা) লোয়ার (লোহা) রড দিয়া চোখ উডাইয়া দেওয়ার ভয় দেহাইছে।

এ বিষয় নির্যাতনের শিকার শিশুটির মা মোর্শেদা বেগম বলেন, রেজাউল ও জুয়েল মৃধাসহ ৪-৫ জন আমার ছেলে রাকিবকে ঘর থেকে ডাইক্কা (ডেকে) নেয়। রেজাউল মৃধার বাড়িতে নিয়ে আমার পোলারে আমগাছের লগে হাত পা বাইন্দা পিডাইছে। এর কিছু পরেই আমার স্বামীকে মৃধাবাড়ির জুয়েল মৃধা ও রাকিব মৃধা গলায় গামছা দিয়া লইয়া যায়। বাপ-পোলারে একখানে কইররা পোলার সামনেই নির্যাতন করে এবং ছেলে আমার পোলা রাকিবের মাথার চুল কেচি (কাঁচি) দিয়ে কাইট্টা দেয়। আমার স্বামীকে উদ্ধার করতে গেলে আমারেও মারধর করে।

গলাচিপা থানার ওসি এমআর শওকত আনোয়ার ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার শিশুটির মা মোর্শেদা বেগম বাদী হয়ে জুয়েল মৃধা, রাকিব মৃধা ও সোহেল মৃধাকে প্রধান আসামি করে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত তিনজনের নামে একটি মামলা দায়ের করেছে। এর মধ্যে অভিযুক্ত সোহেল মৃধাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

(এসডি/এসপি/এপ্রিল ১০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test