E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাজারহাটে আবাসনগুলোর বেহাল অবস্থা

‘ঘরের চাল দিয়া দ্যাওয়ার তারাগুলা দ্যাখা যায় বাহে’

২০২১ এপ্রিল ১৩ ২৩:০৮:৪৫
‘ঘরের চাল দিয়া দ্যাওয়ার তারাগুলা দ্যাখা যায় বাহে’

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ভুমিহীন ও হতদরিদ্র পরিবারের আশ্রয়ের জন্য সরকারের দেয়া আবাসন কেন্দ্রগুলো এখন জরা- জীর্ণ হয়ে পড়েছে। উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের আবাসন কেন্দ্রগুলোর টিনের চাল আর ঘরের বেড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ওইসব আবাসনের খেঁটে খাওয়া ও দিনমজুর মানুষগুলো ঝড়- বৃষ্টির সঙ্গে যুদ্ধ করে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বাধ্য হয়ে অনেকে ঘর ছেড়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজারহাট উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ৩২০টি গৃহহীন ও হতদরিদ্র পরিবারের আশ্রয়ের জন্য আবাসন তৈরি করে দেন। এরমধ্যে ছিনাই ইউনিয়নের জয়কুমর আবাসনে ২০০টি পরিবার, রাজারহাট সদর ইউনিয়নের দূর্গারাম আবাসনে ১০০টি পরিবার ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ই্উনিয়নে পাঁচবাড়ি আবাসনে ২০টি পরিবারের মাঝে ঘরগুলো বরাদ্দ দেয়া হয়।

ওই পরিবারগুলোর বেশিরভাগই দিনমজুর ও খেঁটে খাওয়া মানুষ। র্দীঘ ১৩ বছর সংস্কার না হওয়ার কারণে ব্যারাকগুলো সম্পন্ন জরার্জীণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। আবাসন তৈরি করার সময় নলকুপের ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে তার নেই কোন অস্তিত্ব। নিজেদের প্রচেষ্টায় নলকূপ বসিয়ে ব্যবহার করছে সবাই। ব্যারাকের টিন, লোহার এ্যাঙ্গেল মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে অনেক আগেই। যার কারণে এখন দুর্বল অবস্থায় রয়েছে ঘরগুলো। কিছু কিছু ব্যারাকে মানুষজন না থাকায় গরু-ছাগল রাখতে দেখা যায়।

জয়কুমর আবাসনের বাসিন্দা ফাতেমা বেওয়া (৬০) বলেন, অনেকদিন থেকে ঘরের চালফুটা বৃষ্টি আসলে পানি পড়ে। মোর কষ্ট দেখিয়া কাঁঠালবাড়ির একনা ছাওয়া নিজের টাকা দিয়ে মোর ঘরের টিন কয়খান পাল্টে দিছে।

ওই আবাসনের সভাপতি নুরুজ্জামান জানান, উপজেলা থেকে অনেক অফিসার এসেও সমস্যাগুলো লিখে নিয়ে যাওয়ার পরেও আজ অবধি সংস্কার না হওয়ায় অনেকেই বাধ্য হয়ে ব্যারাক ছেড়ে অন্যত্রে চলে যাচ্ছেন। বর্তমানে ২০০টি পরিবারের মধ্যে ১০০টি পরিবার অতিকষ্টে জীবন-যাপন করছে। সামনে আবার বর্ষাকাল আসছে।

অন্যদিকে দূর্গারাম আবাসনের অমিদা বেওয়া (৫০), হাসমত আলী (৬০) জানান, সারাদিন মানুষের বাড়িত কাজ করি আসি, রাইতোত ঘরত একনা শান্তিতে নিন্দো পাইরবার পাং না। জ্যোৎস্না রাতোত চাল দিয়া দ্যাওয়ার(আকাশের) তারাগুলা দ্যাখা যায় বাহে। হাগবার (পায়খানার) উপায়ও নাই বাহে। বউ-বাচ্চা নিয়ে খোলা জায়গায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হয় তাদের।

ঘড়িয়ালডাঙ্গা পাঁচবাড়ি আবাসনের জরিনা বেগম (৫৫) জানান, নিজস্ব মাটি বলতে কিছু নেই। ১৩ বছর আগে ঘরটা মোক এই ঘরটা সরকার দিছে। ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ে ছাওয়া -পোয়াগুলার বই খাতা ভিজিয়া নষ্ট হয়ে যায়। তাই উপায় না পায়া এনজিওত লোন করি চালের টিনগুলা পাল্টাইচং। সকলের একটাই দাবী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসব আবাসনের ব্যারাকের ঘরগুলো সংষ্কার করলে হত দরিদ্র ভূমিহীন পরিবারগুলোর মাথা গুজার ঠাঁই হতো।

এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরে তাসনিম বলেন, ১৯৯৫ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত নির্মিত আবাসনগুলোর অবস্থা সম্পর্কে আমার নিকট তথ্য চাওয়া হয়েছিল। আমি রাজারহাট উপজেলার ওই সময়ের ৪টি আবাসনের অবস্থা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করেছি।

(পিএস/এসপি/এপ্রিল ১৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test