E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

খাজা বাহিনীর অত্যাচার থেকে মুক্তি চায় কানাইপুরবাসী

২০২১ এপ্রিল ১৪ ১৫:১৬:১২
খাজা বাহিনীর অত্যাচার থেকে মুক্তি চায় কানাইপুরবাসী

ফরিদপুর প্রতিনিধি : ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নে খায়রুজ্জামান খাজা মাতুব্বর ওরফে খাজা বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ কানাইপুর  ইউনিয়নবাসী। ইউনিয়নের এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে খাঁজা বাহিনীর অত্যাচার বাকি রয়েছে। 

ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের ভাটি কানাইপুর এলাকার মৃত হানিফ মাতুব্বরের পুত্র এই খায়রুজ্জামান খাজা মাতুব্বর ওরফে খাঁজা। বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর। তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১৪ টি মামলা এজাহারভুক্ত হয়েছে। ২০০৪ সালে তার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয় কোতোয়ালি থানায়। ২০/০৮/০৪ সালে ৩৯৫/৩৯৭ ধারায় ঐ মাসের ৩৮ নং মামলা ছিল খাঁজার বিরুদ্ধে। এরকম একটার পর একটা করে মোট ১৪ টি মামলা হয় খাঁজার বিরুদ্ধে। এখনও দিব্বি চালিয়ে যাচ্ছে তার অত্যাচার নির্যাতন। প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে তার অপরাধ জগৎটা আরও বিস্তার লাভ করছে।

বর্তমানে কানাইপুর ইউনিয়নে তার অত্যাচারের মাত্রা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ এমনকি মহিলারাও। তার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড়ি ছাড়া হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। নিয়মিত ভাবে চাঁদা তুলছে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তার উপর নেমে আসছে খাঁজা বাহিনীর নির্মম অত্যাচার নির্যাতন। বাড়িঘর, দোকান, মটরসাইকেল ইত্যাদিও তার অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তার মনমত না হলেই এসব কিছু ভাংচুর করছে। খাজা বাহিনীর এমন অত্যাচার থেকে ইউনিয়নবাসী বাঁচতে চায়। ইউনিয়নবাসী দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।

খাঁজা বাহিনীর নির্যাতনের স্বীকার মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা আলীমুজ্জামান খাঁন এর পুত্র কাবুল খাঁন জানান, আমি কানাইপুর মাইক্রোস্ট্যান্ডে ভাঙ্গারীর দোকান করি। খাঁজা লোক মারফত আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে এবং তা প্রতিমাসে দিতে হবে বলে জানায়। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে গত জানুয়ারী ২০২১ এর ৯ তারিখে সন্ধা ৭ টার দিকে খাসকান্দির মোড়ে খাঁজা, সোহেল, হাবিবসহ বাহিনীর আরও লোকজন মিলে আমাকে মারধোর করে। আমি আমার ছোট ছোট ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে জান বাঁচাতে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছি। আমরা খাঁজা বাহিনীর ভয়ে তিন মাসের বেশি বাড়ি ছাড়া। আমরা প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চাই এবং খাঁজা বাহিনীকে দ্রুত গ্রেফতার করে কানাইপুর বাসীকে তাদের অত্যাচার নির্যাতন থেকে রক্ষার দাবী জানাই।

খাঁজা বাহিনীর নির্যাতনের স্বীকার দেলোয়ার পারভেজ জানান, খাঁজা বেশ কিছুদিন আমাদের বাড়িতে যাতায়াত করে আমাকে কানাইপুর পুলিশ ফাঁড়িতে থাকা ২৬ টি অটো ২৬ জন চুরি করে নিয়ে যাবে বলে প্রস্তাব দেয় কিন্তু আমি সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় খাঁজা আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়। এ ঘটনার ৪/৫ দিন পর আমি মল্লিকপুর বাজারে গেলে সেখান থেকে সোহেল, রাকিব ও বিল্লু আমাকে জোড় করে মটর সাইকেলে করে ঝাওখোলা একটি মেহগনি বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়েই আমার হাত পা বেধে ফেলে এবং আমার কাছে ৮০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে, না দিলে আমাকে, আমার বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তান সবাইকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দিতে থাকে। কিন্তু আমি তাতেও রাজি না হলে আমাকে দুপুর ২ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত মারে। সেখানে খাঁজা বাহিনীর প্রায় ২৫ জন উপস্থিত ছিল। আমাকে কোন ভাবেই রাজি করতে না পেরে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বস্তার মধ্যে ভরে। কিন্তু আল্লাহর মেহেরবানিতে পুলিশের একটি দল ও এলাকাবাসী এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। সে সময় খাঁজা বাহিনীর হান্নান ও মিজানকে আটক করে, তারা এখনও জেলে আছে। আমি এ বিষয়ে মামলা করছি, মামলা সিআইডিকে দিছে তদন্ত করতে। এরপর থেকে আলাউদ্দিন এর ছেলে সোহাগসহ মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে। মামলা তুলে না নিলে খাঁজা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলবে। খাঁজা ও তার লোকজনের কাছে সবসময় পিস্তলসহ বিভিন্ন অস্ত্র থাকে। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছি। কখন আমাকে গুলি করে দেয় এই ভয়ে থাকি। আমি প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চাই এবং খাঁজার বিচার চাই।

কানাইপুর বাজারের ব্যবসায়ী আরিফ হোসেন জানান, আমার কাছে খাঁজা চাঁদা চাইছিল, আমি রাজি না হওয়ায় আমার ফেজার মটরসাইকেল, দুটি মোবাইল নিয়ে গেছে এবং আমাকে মেরে ফেলার উদ্যেশ্যে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। আমার ডান চোখের উপরে ৫ টা সেলাই দেওয়া হয়েছিল। আমি প্রায় ৫ দিন চোখ মেলে তাকাতে পারিনি। আমি সবসময় ভয়ে থাকি এই বুঝি আবার নির্যাতন শুরু হয়। নিরাপত্তা চাই প্রশাসনের কাছে।

এ বিষয়ে কানাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফকির মোঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, সম্প্রতি কানাইপুর, চাঁদপুর, কৃষ্ণনগর, সাতৈর, জাহাপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় সন্ত্রাসী খাঁজা বাহিনীর দ্বারা সাধারণ জনগণ আতঙ্কিত। তারা এতটাই বেপরোয়া যে, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ৭/৮ টি মটর সাইকেল নিয়ে ১৭/১৮ জন ছেলে নিয়ে এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দোকানে হামলা চালাচ্ছে , চাঁদাবাজি করছে, এমনকি মাদক ব্যবসাও করছে। তাদের মনমত না হলেই মারধোর, ভাঙচুর, মোটর সাইকেল ভাঙা, বাড়িঘর কোপানো কোন কিছুই তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

তিনি আরও জানান, কানাইপুরের কিছু লোক তাদের ব্যাক্তিস্বার্থ হাসিল করতে সন্ত্রাসী খাঁজাকে ব্যবহার করছে। তারাই খাঁজাকে দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করাচ্ছে। আবার পরবর্তীতে তারাই সেখানে গিয়ে শালিস করে মিটমাট করে দিচ্ছে। একটি নিরব চাঁদাবাজি চলছে কানাইপুর জুড়ে। এতে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর ভেতর আতংক বিরাজ করছে। একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে এখানে, মুলত ব্যবসায়ীদেরকে জিম্মি করার পায়তারা চলছে। তার যারা গড ফাদার তাদেরসহ গ্রেফতারের দাবী জানাচ্ছি এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের মাননীয় পুলিশ সুপার মোঃ আলীমুজ্জামান বিপিএম এই প্রতিবেদককে বলেন, খাঁজার বিষয়ে যে সকল অভিযোগ ইতিমধ্যে আমরা পেয়েছি তা তদন্তে সত্যতা মিলেছে। তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলাও রয়েছে। কোতয়ালী থানা পুলিশ ও ডিবিসহ একাধিক টিম তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাকে কোন ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।

(ডিসি/এসপি/এপ্রিল ১৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test