E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মহিলা কওমি মাদ্রসায় শিশু শিক্ষার্থী ধর্ষণ

সমাজপতিদের রায়ে কিশোরীর সম্ভ্রমের মূল্য ৩ লাখ টাকা!

২০২১ এপ্রিল ১৬ ২৩:১৭:৪৬
সমাজপতিদের রায়ে কিশোরীর সম্ভ্রমের মূল্য ৩ লাখ টাকা!

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : মাত্র ৭ দিন না পেরুতেই ফের এক কওমী মাদ্রাসা অধ্যক্ষের লালসার শিকার হলো ১১ বছরের মাদ্রাসা শিক্ষার্থী। কোন রকম থানা পুলিশ কিংবা আইনের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় সমাজপতিরা নির্যাতিত মেয়েটির পরিবারকে জিম্মি করে ওই কিশোরীর সম্ভ্রমের দাম উঠিয়েছেন তিন লাখ টাকা। সমাজের মাতুব্বরদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা নির্বাতিতার পরিবারের কেউ। পুলিশ বলছে অভিযোগ না পেলে তাদেরইবা কী করার আছে।

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট সংলগ্ন পাইনপাড়ার চরে অবস্থিত বায়তুল জান্নাত মহিলা মাদ্রাসায় এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আজিজ শেখের ছেলে মুফতি আমির হামজার বিরুদ্ধে। মাত্র ৭ দিন আগে পার্শবর্তি পালেরচর ইউনিয়নের দড়িকান্দি মহিলা কওমী মাদ্রাসার ৮ বছর বয়সের এক শিশু ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ওই মাদ্রাসার হেড ক্লার্ক আব্দুল হান্নান। এ ঘটনায় ৪ জনকে আসামী করে জাজিরা থানায় মামলা হয়েছিল। ৭ দিন না পেরুতেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো মাত্র ২ কিলোমিটার দুরে পাইনপাড়া চরের আরেক মহলিা কওমী মাদ্রাসায়।

ঘটনার তিনদিন পর সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে বায়তুল জান্নাত মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আমির হামজা মাদ্রাসারই ১১ বছর বয়সী ৪র্থ শ্রেনীর এক কিশোরী ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। ভূক্তভোগীর পরিবার আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে চাইলে স্থানীয় মাতুব্বররা সেটা করতে দেননি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সমাজপতি মাতুব্বররা এলাকায় ১৫ এপ্রিল বিকেলে সালিশ দরবার করে অধ্যক্ষ আমির হামজাকে ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা ও দশ ঘা জুতাপেটা করেন।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কিশোরীর বাড়ি গিয়ে তাকে পাওয়া যায় নি। তার মা জানান, মেয়ে বাড়ি নাই। আমাদের তো এলাকায় থাকতে হবে। বিষয়টি এলাকার পাঁচজন মিটমাট করে দিয়েছে। আমি ওর বাবার সাথে কথা না বলে আপনাদের কিছু জানাতে পারব না। যে মিটমাট হয়েছে তাতে আপনারা কী ধরনের বিচার পেয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাক ছিলেন যৌন নির্যাতনের শিকার কিশোরীর মা। তবে মেয়েটির দুলাভাই পরিচয়ে একজন জানান, ঘটনা সত্য। আপনাদেরও মা বোন আছে, বিষয়টি নিয়ে আপনারাও চুপ থাকেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূক্তভোগীর এক প্রতিবেশী বলেন, আপনারা এখন আসছেন? মাতুব্বররা গতকাল বৃহস্পতিবার এলাকায় দরবার সালিশ করে বিষয়টি মিটমাট করে দিয়েছেন। তারা নদীর ওপাড়ে মঙ্গল মাঝির ঘাটে আছেন, সেখানে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলুন।

বায়তুল জান্নাত মহিলা মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায় মাদ্রসাটির প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে, জানা যায় এলাকার মাতুব্বররা ছয় মাসের জন্য মাদ্রাসাটি বন্ধ করে দিয়েছেন।

অধ্যক্ষ আমির হামজার বাড়ি গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বড় ভাই মনির হোসেন জানান, শয়তানের ধোকায় পড়ে আমার ভাই একটি ভুল কাজ করে ফেলছে, এলাকার মাতুব্বররা দরবার সালিশ করে বিষয়টি মিমাংসা করে দিয়েছেন। লজ্জায় আমরা চোখ তুলে তাকাতে পারিনা। আমির হামজা কোথায় আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই এলাকায় নাই, তিনি ভালো হলে আবার ফিরে আসবেন।

পাইনপাড়া চর থেকে পদ্মানদী পাড়ি দিয়ে মাঝিরঘাট এসে পাওয়া যায় ঐ সালিশ বোর্ডের এক সদস্যকে। তিনি জানান, একটি ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটছে। আমরা এলাকার প্রায় চার পাঁচশত মানুষের সামনে গ্রামের মাতুব্বর কালু মাঝি, রাজ্জাক মাঝি, বাচ্চু মাদবর, মোকলেছ মাদবর, লতিফ বেপারী, প্যানেল চেয়ারম্যান আজহার মোড়লসহ স্থানীয়রা মিলে একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছি। তাতে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ধার্য করে পঞ্চাশ হাজার টাকা মাফ করে তিন লক্ষ টাকা নির্যাতিতার ভবিষ্যতের জন্য অধ্যক্ষ আমির হামজাকে জরিমানা করেছি। এ সময় আমির হামজার ভাই দুলাল উত্তেজিত হয়ে সকলের সামনে আমির হামজাকে জুতাপেটা করেছেন।

এবিষয়ে পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লালচাঁন মাদবর বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি, আমারও সালিশীতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অন্য একটি দরবার থাকায় আমি যেতে পারিনি, তবে আমি প্যানেল চেয়ারম্যান আজহার মোড়লকে পাঠিয়েছি। কওমী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কর্তৃক শিশু ধর্ষণের মত একটি গুরুতর বিষয় আপনার প্রতিনিধিত্ব করে প্যানেল চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় মুরুব্বীরা মীমাংসা করতে পারেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেমনে কি করছে আমি জানি না।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মিন্টু মন্ডল বলেন, আমরা বিষয়টি এখনও জানি না। সংবাদ কর্মীদের কাছ থেকেই প্রথম জেনেছি। আমাদের কাছে কেউ যদি অভিযোগ করেন তবে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(কেএন/এসপি/এপ্রিল ১৬, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test