E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কওমি মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থী ধর্ষণ

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজে সংবাদ প্রকাশের কয়েক ঘন্টা পর ধর্ষক গ্রেফতার

২০২১ এপ্রিল ১৭ ১৫:৩৬:১৩
উত্তরাধিকার ৭১ নিউজে সংবাদ প্রকাশের কয়েক ঘন্টা পর ধর্ষক গ্রেফতার

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : মহিলা কওমি মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থী ধর্ষণ ‘সমাজপতিদের রায়ে কিশোরীর সম্ভ্রমের মূল্য ৩ লাখ টাকা!’ শিরোনামে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশের কয়েক ঘন্টা পরেই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ধর্ষক মুফতি আমির হামজাকে গভীর রাতে গ্রেফতার করেছেন জাজিরা থানা পুলিশ।

শুক্রবার রাত দিবাগত ১ টার দিকে আমির হামজাকে গ্রেফতারের পর শনিবার সকালে ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থী এবং তার বাবাকে থানায় ডেকে আনেন পুলিশ। নির্যাতিত শিশুটির জবানবন্দির ভিত্তিেিত জাজিরা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/১/৩০ ধারায় মামালা দায়ের করেন ধর্ষিতার পিতা। ধর্ষনের শিকার মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট সংলগ্ন পাইনপাড়ার চরে অবস্থিত বায়তুল জান্নাত মহিলা মাদ্রাসায় ৯ বছর বয়সের এক শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি আমির হামজার বিরুদ্ধে। মুফতি হামজা স্থানীয় আজিজ শেখের ছেলে। মুফতি হামজা বিবাহিত এবং তার ১১ মাস বয়সের একজন কন্যা সন্তান রয়েছে বরে জানা গেছে। বিশ্বস্ত সূত্রের ভিত্তিতে ঘটনার তিনদিন পর শরীয়তপুরের কয়েকজন সংবাদকর্মী শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে জানতে পারেন, গত মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) বায়তুল জান্নাত মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আমির হামজা মাদ্রাসারই তৃতীয় শ্রেনীর (নূরানী নাজেরা শাখা) এক শিশু শিক্ষার্থীকে মাদ্রাসার মধ্যে ধর্ষণ করে। ধর্ষিতার পরিবার আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে চাইলে স্থানীয় মাতুব্বররা সেটা করতে দেননি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সমাজপতি মাতুব্বররা এলাকায় ১৫ এপ্রিল বিকেলে সালিশ দরবার করে অধ্যক্ষ আমির হামজাকে ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা ও দশ ঘা জুতাপেটা করেন।

সংবাদ কর্মীদের কাছে খবর পেয়ে এবং পত্রিকায় সংবাদ দেখে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মিন্টু মন্ডল তার ৬ জন সহকর্মী নিয়ে গভীর রাতে অভিযান চালান পাইনপাড়ার চরে। পুলিশ রাত ১টার দিকে পলাতক মুফতি আমির হামজাকে আটক করে জাজিরা থানায় নিয়ে আসেন। এরপর শনিবার সকালে ধর্ষনের শিকার ওই শিশু ও তার পিতাকেও ডেকে আনা হয় থানায়। শিশুটির জবানবন্দি মতে শনিবার দুপুরে জাজিরা থানায় মুফতি আমির হামজাকে প্রধান করে কয়েকজন সালিশকারকসহ মোট ৭ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এবিষয়ে পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লালচাঁন মাদবর বলেন, ঘটনাটি আমি অনেক পরে শুনেছি। আমারও সালিশীতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অন্য একটি দরবার থাকায় আমি যেতে পারিনি। তিনি বলেন, আমির হামজা খুব সম্মানী লোকের ছেলে এবং একটা বংশীয় পরিবারে বিয়ে করেছে। তার সংসারে মন্তানও রয়েছে। আমি চাই এ ঘটনার একটা বিচার হোক, তবে সম্ভব হলে মীমাংসা করে দেয়া ভাল।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মিন্টু মন্ডল বলেন, আমি বিষয়টি প্রথমে সংবাদ কর্মীদের কাছ থেকেই জেনেছি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংবাদ পত্রের খবর দেখেছি। এরপর রাত ১২টার দিকে আমার সহকর্মীদের নিয়ে পাইনপাড়ার চরে অভিযান চালিয়ে অনেক কষ্টে আমির হামজাকে গ্রেফতার করি। সকালে ভিকটিম ও তার বাবাকে থানায় ডেকে আমি। ভিকটিমের জবানবন্দি অনুযায়ী শনিবার দুপুরে ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৫। আমির হামজা ছারাও সালিশকারি কয়েকজনকে আসামী করা হয়েছে। আমি মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। পরবর্তিতে মামলার অপরাপর আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হবে।

উল্লেখ্য, মাত্র ৭ দিন আগে পার্শবর্তি পালেরচর ইউনিয়নের দড়িকান্দি মহিলা কওমী মাদ্রাসার ৮ বছর বয়সের এক শিশু ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ওই মাদ্রাসার হেড ক্লার্ক আব্দুল হান্নান। এ ঘটনায় ৪ জনকে আসামী করে জাজিরা থানায় মামলা হয়েছিল। ৭ দিন না পেরুতেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো মাত্র ২ কিলোমিটার দুরে পাইনপাড়া চরের আরেক মহলিা কওমী মাদ্রাসায়। এমন পরিস্থিতিতে উৎকন্ঠিত হয়ে পরেছেন অভিভাবকসহ সমাজের সচেতন মহল।

(কেএনআই/এসপি/এপ্রিল ১৭, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test