E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জাজিরায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের উপর সন্ত্রাসী হামলা

২০২১ এপ্রিল ২৩ ১৬:২৯:১৬
জাজিরায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের উপর সন্ত্রাসী হামলা

শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নে ভিজিডির চাল আটক বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার সময় স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের হামলার স্বীকার হন শরীয়তপুরে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক। ২২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকালে বড়কান্দি ইউনিয়নের মালকান্দি গ্রামে এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে দৈনিক সকালের সময়ের জেলা প্রতিনিধি শাহাদাত হোসেন খান বাদী হয়ে জাজিরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার বিবরণ ও ঘটনাসূত্রে জানা যায়, গত ২০ এপ্রিল জাজিরা থানাধীন বড়কান্দি ইউনিয়নের মাল কান্দি গ্রামে ভিজিডি কার্ডের কিছু চাল একটি পরিত্যক্ত ঘরে পাওয়া যায়।

যা নিয়ে অনুসন্ধানি প্রতিবেদন করার জন্য ২২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৪টায় ঘটনাস্থলে যায় দৈনিক সকালের সময়ের জেলা প্রতিনিধি শাহাদাত হোসেন খান, দৈনিক আজকের পত্রিকার জাজিরা উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ ইমরান হোসাইন, দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সাইফ রুদাদ, দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম, দৈনিক গণকথা'র সাংবাদিক মাশহুর খান ও ভোরের পাতা পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি শাওন বেপারী। সেখানে যাওয়ার পর তারা স্থানীয় ও অভিযুক্ত সহ অনেকের বক্তব্য সংগ্রহ করে। এ সময় স্থানীয় অনু মাল (৪০) সাংবাদিকদের অনুসরণ করতে থাকে। এমনকি এক পর্যায়ে তাদের গতিরোধ করে প্রাণ নাশের হুমকী ধামকী দেয়।

সেখানে অনু মালের বক্তব্য নিয়ে পরবর্তীতে ভিজিডি কার্ডধারী কয়েকজনের বক্তব্য সংগ্রহ করতে যায় সাংবাদিকবৃন্দ। যখনই তারা জাজিরা থানাধীন ছৈয়াল কান্দি গ্রামের আঃ লতিফ এর বসত বাড়িতে একজন ভিজিডি কার্ডধারীর বক্তব্য নিচ্ছিল এমন সময় হঠাৎ অনু মাল, রব্বি মাল ও আসাদুল মাল সহ ৭/৮ জন এসে ফেসবুক লাইভে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রথমেই জামাত শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী ও ভুয়া সাংবাদিক সহ বিভিন্ন বাজে ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।

সাংবাদিকরা গালিগালাজের কারণ জিজ্ঞেস করলে অনু মাল চিৎকার দিয়ে বলে আশ্রাফ মাল হুকুম দিছে শালাদেরকে এখানে মেরে ফেল, দেখি কে কি করতে পারে। সাংবাদিকরা প্রশাসন কে জানাবো বললে অনু মাল ওসিকে অশালীন ভাষায় গালি দিয়ে বলে যে, ওসি রে গিয়ে বলিস যে, আমি অনু মাল। এরপর সকল অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা মিলে সাংবাদিকদের এলোপাথারিভাবে কিল-ঘুষি ও লাত্থি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক নীলাফুলা জখম করে।

এসময় অনু মাল সাংবাদিক মাশহুর খানের কাছে থাকা একটি ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। রাব্বি মাল সাংবাদিক মাশহুর খানের কাছ থেকে ০১টি মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়, যার মধ্যে ৮,৫০০/- (আট হাজার পাঁচশত) টাকা ও প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র ছিল। সাংবাদিক ইমরান হোসাইনের কাছ থেকে একটি মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়, যার মধ্যে ১৪,৩০০/- (চৌদ্দ হাজার তিনশত) টাকা, একটি সাংবাদিকতার আইডি কার্ড ও কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল। রাব্বি মাল সাংবাদিক ইমরান হোসাইনের গলায় থাকা ১২ আনা ওজনের একটি স্বর্নের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে যায়, যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫৫,০০০/- (পঞ্চান্ন হাজার) টাকা।

সন্ত্রাসী হামলার হাত থেকে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির সহায়তায় সাংবাদিকরা রক্ষা পায়। পরে তারা সেখান থেকে জাজিরা থানায় এসে রাত ৯টার সময় দবির মালের ছেলে অনু মাল (৪০), আশ্রাফ মালের ছেলে রাব্বি মাল (৩০), নুরুদ্দিন মালের ছেলে আসাদুল মাল (৪৫) এবং হামলার সাথে জড়িত অজ্ঞাতনামা আরো ৭/৮ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জাজিরা বড়কান্দি ইউনিয়নের মাল পরিবার একটি সন্ত্রাসী ও দাঙ্গাবাজ পরিবার। এই পরিবারের অন্যতম অভিভাবক আশ্রাফ মাল আপন ভাই হত্যা মামলার আসামী। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কাঁচি প্রতীকের পক্ষে নির্বাচন করে আশ্রাফ মাল। তার আপন ভাই আওয়ামী লীগ কর্মী শাহাজুদ্দিন মাল নৌকার পক্ষে নির্বাচন করার অপরাধে আশ্রাফ মাল তার দলবল নিয়ে তাকে খুন করে। সে হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন আশ্রাফ মাল। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদের নির্বাচনেও নৌকার বিপক্ষে সতন্ত্র প্রার্থীর ঘড়ি প্রতীকের পক্ষে নির্বাচন করে আশ্রাফ। বর্তমানে আশ্রাফ মাল আওয়ামী লীগের সাথে আবার রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে।

মামলা ও আসামী গ্রেফতারের বিষয়ে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম (পিপিএম) জানান, সাংবাদিকদের হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

(কেএন/এসপি/এপ্রিল ২৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test