E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঠাকুরগাঁওয়ে অলৌকিক আগুন 

প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র সন্দেহে মামলা : আটক ১২, গ্রাম পাহাড়ায় পুলিশ!

২০২১ মে ০৩ ২৩:৫৮:২৬
প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র সন্দেহে মামলা : আটক ১২, গ্রাম পাহাড়ায় পুলিশ!

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ে অলৌকিক আগুনের ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর আগুণের সুত্র উন্মোচনে ঘটনাস্থল বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিনের সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রামে কঠোর পুলিশি পাহারা বসানো হয়। অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সর্বপ্রথম আগুনের সূত্রপাত ভুক্তভোগী মৃত মকবুল হোসেনর স্ত্রী মোছ: সালেহা বেগম অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে গত ২৯ এপ্রিল একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় রবিবার ভোরে সন্দেহভাজন ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। 

আসামীরা হলেন, মুন্সিপাড়া গ্রামের সামসুজোহা , এহেতাসাম উল্লা, মোকসেদুল ইসলাম, ইমতাজ আলী, দেলোয়ার হোসেন, কফিল উদ্দীন, ওবায়দুল্লাহ্ , তহিদুর রহমান প্রীন্স, আজিমুদ্দুীন চৌধুরী, মন্টু আলম, মোছা: মেহেরুন নেসা ও মোছা: বিলকিস আখতার।

মামলাসুত্রে জানা যায়, ঘটনাস্থল মুন্সিপাড়া গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনর বাড়িতে ২৯ মার্চ তারিখ সর্বপ্রথম আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর একসপ্তাহের মধ্যে মৃত মকবুল হোসেনর বাড়ি, গোয়ালঘর ও গমক্ষেতে আরো তিনবার আগুন লাগে। আগুনের পর মকবুল হোসেনর প্রতিপক্ষরা তার বিধবা স্ত্রী মোছ: সালেহা বেগম ও পরিবারের লোকদের হেয় করার উদ্দ্যেশে প্রতিনিয়ত অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করে। এছাড়াও সম্পত্তি দখলের অপচেষ্ঠায় বিভিন্ন রকম গুজব রটায়। এঅবস্থায় মৃত মকবুল হোসেনর স্ত্রী মোছ: সালেহা বেগম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে ২৯ এপ্রিল বালিয়াডাঙ্গী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

গ্রেফতারকৃত ইমতাজ আলী ও মোছা: মেহেরুন নেসার মেয়ে তাসমিন আক্তার জানান, এখন বাসায় কেউ নেই। তিনি পাশের গ্রামে থাকেন। তার বাবা, মা সহ গ্রামের আরো ১২জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে সদরে নিয়ে গেছে। কি অপরাধে পুলিশ তাদের নিয়ে গেছে তা তিনি জানেন না।

গ্রেফতারকৃত মোছা: বিলকিস আখতারের বৌমা কারজিনা আক্তার জানান, বাড়িতে এখন কেউ নেই। পুলিশ কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছেনা। বাড়ির পাশে যে কাঁচা সড়কটি রয়েছে সেটিও বন্ধ রয়েছে।

গ্রাম পুলিশ সদস্য ফিটু খান জানান, রহস্যজনক আগুনের ঘটনায় বেশ কয়েকদিন যাবত তিনি সহ আরো বেশ কয়েকজন গ্রাম পুলিশ ও সাথে বালিয়াডাঙ্গী থানা পুলিশের ওসি এবং বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে পাহারায় রয়েছেন। পাহাড়া চলাকালিন সময়ে কোন বাড়িঘরে আগুন লাগে নাই।

মামলার বাদী মোছ: সালেহা বেগম জানান, তার বাড়িতে পরপর তিন দিন অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এর পর থেকে একই গ্রামের প্রতিবেশিদের বাড়ি ঘরে কিভাবে আগুন লেগেছে তা তিনি দেখেন নাই, শুনেছেন। কিভাবে আগুনের সুত্রপাত তাও তিনি জানেন না। প্রতিবেশিদের বাড়িঘরে আগুন লাগলে এহেতাসাম উল্লা, মোকসেদুল ইসলাম, ইমতাজ আলী, দেলোয়ার হোসেন তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করেন এবং বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়ে তাদের গ্রামছাড়া করার হুমকি দেন।

তারা আরো বলেন, তার স্বামী মৃত মকবুল হোসেন ও শ্বশুর নাকি সত্যপীরের গান মানত করেছিলেন । মৃত্যুর পরও সেই মানত পূরণ করা হয়নাই তাই গ্রামে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। নিজের নিরাপত্তার জন্য তিনি গত ২৯ এপ্রিল বালিয়াডাঙ্গী থানায় একটি অভিযোগ করেছেন।

এবিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ কামাল হোসেনর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ঘটনা তদন্তের স্বার্থে তিনি কথা বলতে রাজি হন নাই।

উল্লেখ্য, ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিনের সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রামের মার্চের ২৯ তারিখে সর্বপ্রথম আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর থেকে ওই গ্রামের বেশ কয়েটি পরিবারের বাড়িঘরের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ বার অলৌকিক ভাবে আগুন ধরে। এখন পর্যন্ত কে বা কারা এই আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে তা কেউ দেখেন নাই। যাদু-টোনা ও জ্বীন ভুতের আছরে এই আগুনের সুত্রপাত হতে পারে বলে গুজব ছড়ানো হয় গ্রামে। এতে আতঙ্কগ্রস্থ হয় শতাধীক গ্রামবাসী। তাই প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে তদন্তের মাধ্যমে আগুনের প্রকৃত কারণ উন্মোচনের দাবী করেন গ্রামবাসিরা।

(এফ/এসপি/মে ০৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test