E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সাতক্ষীরায় দিনমজুর হত্যায় আসামি ইসরাফিলের দায় স্বীকার 

২০২১ মে ০৮ ১৯:১৫:৩৮
সাতক্ষীরায় দিনমজুর হত্যায় আসামি ইসরাফিলের দায় স্বীকার 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : পরকীয়ার জেরে বাড়ি থেকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে এক দিনমজুরকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের মা সুফিয়া খাতুন বাদি হয়ে চার জনের নাম উল্লেখ করে শুক্রবার রাতে সাতক্ষীরা সদর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। 

মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামী ইসরাফিল হোসেন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন, সাতক্ষীরা সদরের আগরদাড়ি ইউনিয়নের বালিয়াডাঙা গ্রামের হাফিজুল ইসলামের ছেলে গ্রেপ্তারকৃত ইসরাফিল হোসেন, একই গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে আহসান, ওয়াজেদ আলীর ছেলে বেল্লাল হোসেন ও একই গ্রামের নজিরউদ্দিনের ছেলে আব্দুল জলিল।

সরেজমিনে শনিবার সকালে সাতক্ষীরা সদরের বকচরা পশ্চিমপাড়া, বালিয়াডাঙা ও রামনগর গ্রাম ঘরে জানা যায় বালিয়াডাঙা গ্রামের ভাটা শ্রমিক আব্দুল জলিলের সাথে আট বছর আগে রামনগর গ্রামের ময়না খাতুনের বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের ছয় বছরের এক ছেলে রয়েছে। বাপের বাড়ি ও শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করাকালিন ময়না খাতুনের সঙ্গে একাধিক পুরুষের অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সাত মাস আগে আব্দুল জলিল ঢাকার একটি ইটভাটায় কাজ করতে যান। কয়েকদিন পরে স্ত্রীর কাছে ৬০ হাজার টাকাও পাঠান।

রোজা শুরুর আগেই জলিল স্থানীয় তিনজন শ্রমিকের এক লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়িতে ফেরেন। বাড়িতে আসার পরদিন মোবাইল ফোনে কথা বলার একপর্যায়ে জলিল জানতে পারে যে বকচরা গ্রামের আলমগীরের সঙ্গে তার স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এ নিয়ে ময়না মারপিট করলে সে বাপের বাড়িতে চলে যায়। চলে যাওয়ার আগে দু’ লাখের ও বেশি টাকা নিয়ে যায় ময়না। কয়েকদিন পর আবার স্বামীর বাড়িতে ফিরলে জলিল তাকে নেবে না বলে ফিরে যেতে বলে।

বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য সামছুর রহমান মীমাংসার চেষ্টা করলে ময়না খাতুনের মা চাকুরিজীবি দু’ ছেলে বাড়ি ফিরলে ঈদের পরে বসাবসি করার কথা বলে চলে যান। এর দু’দিন পর ছেলেকে নিয়ে চলে যাওয়ার সময় ভ্যান থেকে নামিয়ে নেয় জলিল। ওই রাতেই জলিলের বাড়িতে ইউপি সদস্য সামছুর রহমানের উপস্থিতিতে হাফিজুল ইসলামের ছেলে গ্রেপ্তারকৃত ইসরাফিল হোসেন, একই গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে আহসান, অজেদ আলীর ছেলে বেল্লাল হোসেন ও একই গ্রামের নজিরউদ্দিনের ছেলে আব্দুল জলিল, আব্দুল বারীর ছেলে কয়েকটি নাশকতা মামলার আসামী মনিরুল ইসলামসহ কয়েকজন বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে আলমগীরকে হত্যার জন্য জলিলের বাছুরসহ অন্তঃস্বত্বা গাভীটি এক লাখ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য কয়ে আহসান, বেলালসহ কয়েকজন। একপর্যায়ে মনিরুল এক লাখ টাকার বিনিময়ে গাভীটি বেলালের কাছ থেকে নিয়ে যান। পরে টাকা ফেরৎ দিলে গাভী জলিলকে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপরদিনই বেলাল, আহসানসহ কয়েকজন আলমগীরের বাড়িতে যেয়ে তার মা সুফিয়াকে হুমকি দিয়ে আসে।

বিষয়টি ইসরাফিলকে জানানো হলে সে বিষয়টি দেখার কথা বলে। একপর্যায়ে ইসরাফিল মধ্যস্ততাকারি হিসেবে আলমগীর ও ময়নার বিয়ে দেওয়ার কথা বলে। ময়নাকে বিয়ে করলে বাড়ি থেকে মেনে নেবে না বলে আলমগীর। তবে সে ময়নাকে বিয়ে করে অন্যত্র চলে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু পরবর্তীতে ইসরাফিল ময়না খাতুনের উপর আসক্ত হয়ে আলমগীরকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য জলিলের গরু বিক্রির কিছু টাকা নেয়। ময়নাকে তার (ইসরাফিল) খালত বোনের বাড়িতে রেখে দেয় ইসরাফিল। বৃহষ্পতিবার বিকেল থেকে দীর্ঘ সময় ধরে আলমগীরকে মোটর সাইকেলে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘোরে ইসরাফিল। রাত ৯টার দিকে বাড়িতে থাকাালিন মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে শ্বশুর আফছার আলীর পুকুর পাড়ে নিয়ে ইসরাফিল দীর্ঘক্ষণ কথা বলে। একপর্যায়ে রাত পৌনে ১০টার দিকে আলমগীরকে পিছন দিক থেকে তার জড়িয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি পুকুরে ফেলে দেয়। পরে আলমগীরের লাশ পুকুরে ফেলে দিয়ে তারই ব্যবহৃত দু’ ব্যাটারীর টর্চ লাইটটি পার্শ্ববর্তী চায়না বাংলা সংস্থার মালিকানাধীন চিংড়ি ঘেরে ফেলে দেয়।

বকচরা গ্রামের নূর ইসলাম জানান, তার ভাগ্নে আলমমগীরকে হত্যার ঘটনায় শুক্রবার সকালে ইসরাফিলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে নিয়ে শুক্রবার দিবাগত রাত দু'টোর দিকে পুলিশের একটি দল আফছারের পুকুরের কাছে আসে। দীর্ঘ দু’ ঘণ্টা ২০ মিনিট ধরে ইসরাফিল কিভাবে আলমগীরকে হত্যা করেছে তার বিস্তারিত বর্ণনা ভিডিও চিত্র ধারণ করে পুলিশ। এ সময় ইসরাফিলের বলা মতে আফছারের পুকুরে আলমগীরের মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হয়। তবে আলমগীরের ব্যবহৃত টর্চ লাইটটি চায়না বাংলার মালিকানাধীন ঘের থেকে উদ্ধার করা হয়। শনিবার

স্থানীয় ১০ থেকে ১২ জন আফছারের পুকুরে মোবাইল ফোনটি পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়।

এদিকে শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা সদর থানায় আলমগীর হতাকাণ্ড সম্পর্কে এক প্রেস ব্রিফিং দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সজীব খান। জলিলের স্ত্রী ময়নার সাথে তার নিজের ও আলমগীরের পরকীয়ার সম্পর্ক থাকার বিরোধের জেরে ইসরাফিল পরিকল্পিতভাবে আলমগীরকে হত্যা করেছে মর্মে জানানো হয়। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ইসরাফিলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ও সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজী হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা সদর সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুজ্জামান শামস এবং সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হুসেনসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা।

সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক অমল কুমার রায় জানান, গ্রেপ্তারকৃত ইসরাফিল শনিবার সন্ধ্যায় বিচারিক হাকিম মেহেদী হাসান মোবারক মুনিমের কাছে আলমগীর হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এরপর তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

(আরকে/এসপি/মে ০৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test