E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মানবিকতার এক অনুপম দৃষ্টান্ত, ওষুধ পেল নীলফামারীর সালেহা

২০২১ জুন ০৫ ১৬:৪৬:১০
মানবিকতার এক অনুপম দৃষ্টান্ত, ওষুধ পেল নীলফামারীর সালেহা

ওয়াজেদুর রহমান কনক, নীলফামারী : এপার-ওপার বাংলার সীমান্ত বন্ধ হয়েছে দীর্ঘদিন । কিন্তু মানবিকতার সীমান্ত কোন কাঁটাতারে বন্ধ নয় । মানবিকতার প্রশ্নে সব বাঁধা দূর হলো-খুলে গেল সীমান্ত ফটক । জীবন বাঁচানোর ওষুধ সীমান্ত পার হয়ে এসে পৌছাল দেশে । এমনই এক মানবিকতার সৌন্দর্য দেখল এপার-ওপার বাংলার হিলি সীমান্ত । 

নীলফামারী শহরের উকিল পাড়ার বাসিন্দা সালেহা খাতুন হৃদরোগে আক্রান্ত । কিন্তু তিনটি ওষুধ কোথায় পাওয়া যাচ্ছিল না । সালেহা খাতুনের ছেলে ড. সারওয়ার মোর্শেদ অনেকটা নিরুপায় হয়ে শেষ-মেষ যোগাযোগ করেন তার পরিচিত বন্ধু ওপার বাংলার বালুঘাটের তুহিন শুভ্র মন্ডলের সাথে । তুহিন ও তাঁর বন্ধুরা মিলে মালদা ও বালুঘাট ঘুরে ওষুধ তিনটি জোগাড় করে ফেলেন । কিন্তু সেটা সীমান্ত পেরিয়ে গন্তব্যে পৌছানো প্রক্রিয়াটা এতো সহজ ছিল না ! গত বৃহস্পতিবার ওষুধ ও প্রেসক্রিপশন নিয়ে হিলি সীমান্ত পর্যন্ত এগিয়ে আসেন তুহিন ও তাঁর বন্ধু বিমান ।

তুহিন শুভ্র মন্ডল বলেন, প্রথমে ইমিগ্রেশন অফিসারদের বোঝাতে হয় । তাঁরা বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরে রাজি হন । এরপর আর কোন ঝামেলা পোহাতে হয়নি । ইমিগ্রেশন অফিসাররাই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বিএসএফ-এর সাথে । এরপর বিএসএফ যোগাযোগ করেন এপারে কাউন্টার পার্ট বিজিবির সাথে । বিজিবি আবার কথা বলেন দেশের ইমিগ্রেশনের সাথে । সব জায়গা থেকে ইতিবাচক সাড়া মেলায় কাজটা সহজে হয়ে যায় ।

এই প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই হিলি সীমান্তে গিয়ে পৌঁছান ড, সারওয়ার মোর্শেদ । যদি দুই পারের দুই বন্ধু নিজেরা সরাসরি ওষুধ হাত বদল করতে পারেননি । বিএসএফ সদস্যরা এসে বিজিবির হাতে ওষুধের প্যাকেট তুলে দেন । সেখানে ইমিগ্রেশন হয়ে ওষুধ পান ড. সারওয়ার মোর্শেদ । কাঁটা তারের বেড়ার দুই পার থেকে ভিডিও কলে কথা বলেন সারওয়ার ও তুহিন ।

ড. সারওয়ার মোর্শেদ জানিয়েছেন, তাঁর মায়ের চিকিৎসা চলছে কোলকাতার আরএন টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্সের চিকিৎসক কুন্তল ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধায়নে । গত ডিসেম্বরে দেখিয়ে এসেছেন । চিকিৎসক আবার ৬ মাস পর যেতে বলেছেন । কিন্তু করোনা পরিস্থিতি জট পাকিয়ে ফেলেছে । চিকিৎসক ফোনে জানিয়েছেন আগের ওষুধ গুলো চালিয়ে যেতে । কিন্তু এই ওষুধ গুলো নীলফামারীতে তো নয়-ই, ঢাকাতেও পাওয়া যাচ্ছিল না । শেষে বাধ্য হয়ে ওপার বাংলার বালুঘাটের বন্ধু তুহিন শুভ্র মন্ডলের শরণাপন্ন হতে হলো ।

সারওয়ার বলেন, ওষুধ গুলো হাতে পাওয়ার পর বন্ধু তুহিন যখন ফোনে জানাল, ঠিক তখনো নিশ্চিত হতে পারিনি সীমান্তের নানা নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে ওষুধ গুলো হাতে পাব কি না ! পরে ওষুধ গুলো হাতে পেলাম । ফের একবার মানবিকতার জয় হলো আজ ।

বন্ধুর মায়ের জন্য ওষুধ পৌঁছে দিতে পেরে উচ্ছ্বসিত তুহিনও । বললেন, এই অসময়েও মানবিকতার প্রশ্নটাই বড় হয়ে গেল, সীমান্তের দরজা খুলে দুই বাংলা একে অন্যের পাশে দাঁড়াল ।

(কে/এসপি/জুন ০৫, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test