E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আমের ব্যবসায় চাঙ্গা নওগাঁর অর্থনীতি 

২০২১ জুন ১২ ১৬:২৪:৪৮
আমের ব্যবসায় চাঙ্গা নওগাঁর অর্থনীতি 

নওগাঁ প্রতিনিধি : করোনায় ভাইরাসে জনজীবন কিছুটা স্থবির হলেও নওগাঁর পোরশা ও সাপাহারে জমে উঠেছে আমের ব্যবসা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগমে সরগরম হয়ে  উঠেছে আমের আড়তগুলো। এ মৌসুমে নওগাঁ জেলায় দেড় হাজার কোটি টাকার  আম বেচাকেনা হবে বলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে। ফলে চাঙ্গা হচ্ছে জেলার অর্থনীতি। এ জেলার পোরশা ও সাপাহার উপজেলার আড়তগুলো থেকে প্রতিদিন অন্তত শতাধিক ট্রাক আম ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার  বড় বাজারগুলোতে যাচ্ছে। 

বাজারগুলোতে আমের চাহিদা থাকায় আম ব্যবসায়ীরা ভালো মুনাফা পাচ্ছেন। করোনার সময় আমের দাম কিছুটা হলেও ভালো পাওয়ায় আম চাষিরাও খুশি। তবে চলতি মৌসুমে আম ব্যবসার ক্ষেত্রে তারা প্রশাসনের সর্বাত্বক সহযোগীতা চান। আম ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ী, বাগান মালিক, গাছ থেকে আম নামানো, ঝুড়িতে আম সাজানোসহ ট্রাকে লোড দেয়ার কাজে এলাকার কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। গাছ থেকে আম নামানো কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা আম বাজারজাত করনের জন্য প্যাাকেট করতে ব্যস্ত। একটুও যেন ফুসরত নেই তাদের। আর এই আমের কারনে আমের বানিজ্যিক রাজধানীখ্যাত নওগাঁ জেলার অর্থনীতি।

জেলার পোরশা ও সাপাহারে বিভিন্ন আমের আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে, আড়তগুলো ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত। গোপালভোগ, খিরসাপাত ও ল্যাংড়া জাতের আম বেচাকেনা হচ্ছে। ভাল মানের আম প্রতি মণ গোপালভোগ ও ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০টাকা ও ভাল মানের খিরসাপাত(হিমসাগর) বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়।

পোরশার নোচনাহার বাজার আম আড়ৎদার একতা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রইচ উদ্দিন জানান, এখন পর্যন্ত তাদের আমের ব্যবসা ভালই চলছে। এই বাজারসহ উপজেলা বিভিন্ন বাজার থেকে প্রতি দিন প্রায় ৪০ ট্রাক আম দেশের বিভিন্ন স্থানের বড় বাজারগুলোতে যাচ্ছে। প্রতিটি ট্রাকে ১২০ থেকে ৩০০ ক্যারেট আম পাঠানো হচ্ছে। যার পরিমান প্রতি ক্যারেটে ২২ কেজি এবং মোট ওজন সাড়ে ৬ হাজার কেজির বেশী। এই হিসেবে একটি ট্রাকে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকার আম যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, উপজেলার বেশীর ভাগ জমিতে আম্রপালী জাতের আম চাষ হওয়ায় জুনের শেষের দিকে ওই আম নামানো শুরু হলে বাজারে আমের আমদানি আরও বাড়বে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁর সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় পোরশা ও সাপাহার উপজেলায়। এ বছর পোরশা উপজেলায় ১০ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এতে প্রতি হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ মেট্রিক টন। এই হিসেবে উপজেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮০০মেট্রিক টন। যদি বাজারে প্রতি মনে ২ হাজার টাকা হয় তাহলে চলতি মৌসুমে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকার আম শুধু পোরশাতেই কেনাবেচা হবে।

স্থানীয় কৃষি কর্মককর্তা জানান, উপজেলার অধিকাংশ জমিতে একবার ধান উৎপাদন হয়। অনেক সময় খরা ও বন্যার কারনে জমিতে ধান উৎপাদন কম হওয়ায় এখানকার কৃষকরা ধান চাষ বাদ দিয়ে আম চাষে ঝুঁকছেন। গত তিন বছরে এ উপজেলায় প্রতি বছর ৫৫০ হেক্টর করে জমিতে আম চাষ বেড়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে বাজার দর হিসাবে ধান ও আমের দামের পার্থক্যটা একটু বেশী হওয়ায় অনেকে আম চাষ করছেন। একারনে কৃষি বিভাগ থেকেও আম চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে পোরশা উপজেলাসহ সমগ্র নওগাঁ জেলায় প্রতি বছর যে হারে আম চাষ বাড়ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে চাঁপাইনবাবগঞ্জকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি মনে করছেন।

(বিএস/এসপি/জুন ১২, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test