E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে প্রস্তুত ‘বাংলার আমির’

২০২১ জুলাই ০৪ ১৬:৫১:৩২
কোরবানির ঈদ উপলক্ষে প্রস্তুত ‘বাংলার আমির’

সোহেল সাশ্রু, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) : আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহায় কোরবানি উপলক্ষ্যে গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছেন খামারীরা। সেই সাথে  ভৈরবে প্রস্তুত রয়েছেন বাংলার আমির সাব নামে ১২শ কেজি ওজনের একটি গরু, রয়েছে ৯শ কেজি ওজনের রাজা বাবু। মানুষ সখের বশে গরু লালন পালন করছে, কেউ ব্যবসায়ীক মুনাফার জন্য। তবে করোনা মহামারিতে গরু বিক্রি নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন বিক্রেতারা। বিদেশী গরু আমদানি না হলে দেশী গরুতেই লাভবান হবে পাশাপাশি ভৈরবে গরুর চাহিদা মিটবে বলেও আশাবাদী খামারীরা।

আগানগর ইউনিয়নে ছাগাইয়া দক্ষিণ পাড়া গ্রামে আহাম্মদ বেপারী বহুমুখী ফার্মের মালিক পাভেল মিয়া জানান, সখের বশে দুটি গরু নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে খামারের কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তার গরু রয়েছেন ২২টি, মহিষ রয়েছে ৯টি। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে ৪টি ষাড় গরু ও ৯টি মহিষ বিক্রির জন্য প্রস্তুত রেখেছেন তিনি। এদের মধ্যে রয়েছে ১২শ কেজি ওজনের বাংলার আমির সাব নামে একটি গরু। যার দাম নির্ধারণ করেছেন ১০ লক্ষ টাকা। যদিও ইতিমধ্যে ক্রেতারা ৫ লক্ষ টাকা গরুর দাম বলেছেন।

তবে করোনা মহামারিতে হতাশা নিয়ে তিনি বলেন, গত বছর করোনার কারণে তেমন লাভবান হতে পারিনি। কোনরকম পুঁজি রক্ষা করতে পেরেছি। যদি হাট বাজার বন্ধ থাকে তাহলে গরু বিক্রি করে তেমন লাভবান হতে পারবো না। বর্তমানে অনলাইনে গরু বিক্রির সুযোগ থাকায় বিক্রেতারা এসে গরু দেখে যাচ্ছেন ও বিভিন্ন দাম বলছেন। গত বছর আমার এখানে ইয়া হাবিবি নামে একটি বড় গরু করোনার কারণে কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে।

এ সময় খামারে দেখতে আসা ক্রেতা নবী মিয়া বলেন, করোনার কারণে বাজার হাট বসবে কি না জানিনা। তাই গরু কিনতে বাজারের জন্য বসে না থেকে অনলাইনের মাধ্যমে পাভেলের খামারের গরু দেখতে পেয়ে আজ তার খামারে এসেছি। তবে ভাল বাজেটের গরু রয়েছে এ খামারে। আরো কয়েকটি খামারে গিয়ে গরু দেখে গরু কেনার সিদ্ধান্ত নিব।

কালীপুর গ্রামের হাজী জয়নাল মিয়ার খামারের জহির আলী বলেন, প্রাকৃতিক উপায়ে গরু লালন পালন করা হচ্ছে। গরু নিয়মিত চিটাগুড়, চিকনকুড়া, মোটাকুড়া, মশুরী, ভুট্টা ও গাছ দেয়া হচ্ছে। কোন রকম কেমিক্যাল দেয়া হয়নি। তবে আমার খামারে ২৪টি গরু রয়েছে। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে সবকটি গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।

খামারের মালিক জয়নাল মিয়া বলেন, বর্তমানে করোনা মহামারিতে আমিসহ ভৈরবের সকল খামারীরাই গরু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। এ বছর আমি প্রথম বাজারে গরু বিক্রি করবো। ঈদের আগে যদি লকডাউন না থাকে সপ্তাহ খানেক সময় পেলেও আমরা খামারীরা গরু বিক্রি করতে পারব। গরু বিক্রিতে অনেকের অনেক স্বপ্ন রয়েছে। কেউ মেয়ে বিয়ে দেয়, কেউ দেনার টাকা পরিশোধ করে, কেউবা গরু বিক্রির লাভের টাকায় সারা বছর সংসার চালায়।

রুজেন ডেইরী ফার্মের মালিক আশ্রাফুল আলম রুজেন বলেন, আমার খামারে ৬৪টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে ১৫টি গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রেখেছি। আমার এখানে সবচেয়ে বড় গরু রয়েছে ৯শ কেজি ওজনের রাজাবাবু। করোনা মহামারির কারণে গরু বিক্রি নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছি। তবে হাট বাজার খোলা থাকলে এবং বিদেশী গরু দেশে না আসলে এই গরু বিক্রি করে আমরা লাভবান হতে পারব। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজা করণ করা হচ্ছে। আশাকরি গরু বিক্রি করে ভাল দাম পাব।

খামারী সবুজ মিয়া বলেন, গত বছর করোনার কারণে গরু বিক্রি করে লোকসান গুনতে হয়েছে। তাই এ বছর বেশী গরু লালন পালন ও বিক্রির জন্য আমদানি করিনি। ২টি গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রেখেছি। যদি ভাল দাম পাওয়া যায় তাহলে আগামী দিন অধিক গরু আমদানি ও লালন পালন করব।

ভৈরব উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ভৈরবে ২ হাজার খামারীর ১০ হাজারের অধিক গবাদী পশু রয়েছে। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে ভৈরবে গরুর চাহিদা রয়েছে ৭ হাজার। আশা করছি ভৈরবের চাহিদা মিটিয়ে ভৈরবের বাহিরেও গরু বিক্রি করতে পারবে খামারীরা। ভৈরবে তিনটি গরুর হাট বাজার রয়েছে।

কোরবানি উপলক্ষ্যে গরু বিক্রির জন্য তিনটি হাট প্রস্তুতসহ ৩টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। সরকার গবাদি পশুর হাট যেন সচল থাকে সেজন্য প্রজ্ঞাপন জারী করেছেন। আশা করছি ভৈরবের খামারীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার হাটে গরু বিক্রি করতে পারবেন। খামারীরা যেন কোন রকম কেমিক্যাল ও ইনজেকশন দিয়ে গরু মোটাতাজা না করে সেদিকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজা করণে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

(এস/এসপি/জুলাই ০৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test