E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ঝুঁকি নিয়ে শিশুদের সাঁকো পার

নলডাঙ্গার একডালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থৈ থৈ পানি

২০১৪ সেপ্টেম্বর ০৫ ১২:০৭:০৭
নলডাঙ্গার একডালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থৈ থৈ পানি

নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বিশাল হালতি বিল এখন বন্যার পানিতে থৈ থৈ করছে। বাতাসে বিলের অভ্যন্তরের দ্বীপ গ্রামগুলির তীরে সমুদ্রের মত বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে। এসব গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন পানিতে পরিপুর্ন। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি একডালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিলের পানির মধ্যে ঠাঁই দাড়িয়ে আছে বিদ্যালয়টি। চারিদিকে পানি থৈ থৈ করলেও বিদ্যালয়ে পাঠদান অব্যাহত রয়েছে। তাই কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা প্রতিদিন নিয়মিত স্কুলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। স্কুলের দ্বিতল ভবনের নিচতলা সহ রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শিশুদের স্কুলে যাতায়াতের জন্য গ্রামবাসী বাঁশের সাঁকো তৈরী করে দিয়েছে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তারা বাশের সাকো পেড়িয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাচ্ছে।

তাই ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে অভিভাবকরাও থাকেন আতংকে। প্রাণ হানির আশংকায় কোমলমতি এসব শিশুদের অনেকেই এখন স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এই স্কুলের সমস্যা যেন এখনও শেষ হয়নি। এখানে বিশুদ্ধ খাবার পানি সহ বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই । ফলে শিশুদের বাঁশের সাকো পার হয়ে গ্রাম থেকে খাবার পানি আনতে হয়। পিয়ন না থাকায় প্রধান শিক্ষককেই ঘন্টা বাজাতে হয়। ঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হলে ওই দিন ভয়ে কেউ স্কুলে আসেনা।

এলাকাবাসী জানায়, এর আগে বন্যার পানির তোড়ে ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন ধসে পড়ে। গত বছর এই নতুন দ্বিতল ভবন নির্মান করা হলেও ঝুঁকি থেকে রেহাই মিলছেনা। এবার বন্যার পানিতে নতুন ভবনের নিচতলা ডুবে গেছে। ঘরে প্রবেশের সিঁড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের পানি ডিঙ্গিয়ে ক্লাসে যেতে হয়। পানির ঢেউয়ে অনেক সময় তাদের পোশাক ভিজে যায়। এলাকাবাসী বর্ষায় পারাপারের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থার দাবী জানিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আলতাফ হোসেন জানান,বন্যার পানিতে স্কুলের নিচতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। যাতায়াতের পথে পানি থৈ থৈ করছে। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার জন্য স্থানীয়ভাবেই বাঁশের সাকো তৈরী করা হয়। পানিতে ডুবে যাওয়া ওই স্কুলে যেতে ছে্েরল মেয়েদের প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই সাকো পার হতে হয়। শিক্ষার্থীরা জানায়,সাঁকোটি পার হওয়ার সময় বেশ কয়েকজন পানিতে পড়ে গেছে। এতে বই খাতা ভিজে নষ্ট হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই সাঁকোটি পিচ্ছিল হয়ে যায়। এসময় পারপার ঝুঁকিপুর্ন হয়। ফলে অনেকেই স্কুলে যেতে চায়না।

প্রধান শিক্ষক সুরাইয়া আক্তার সমস্যার সত্যতা স্বীকার করে জানান, শুধু বর্ষাকাল নয়, শুষ্ক মোৗসুমেও স্কুলে যাওয়ার রাস্তা নেই। স্কুলে যেতে অন্যের বাড়ির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এনিয়ে অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। বর্ষা মৌসুমে যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়। নৌকায় চলাচলের একমাত্র বাহন। যেদিন বাতাস হয় সেদিন সমুদ্রের মত ঢেউ আছড়ে পড়ে। ঝুঁকিপুর্ন হওয়ায় এদিন শিক্ষকরাও স্কুলে পৌছাতে পারেননা।

স্কুলর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ডাঃ আনিসুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। শিক্ষকদের সকলকেই শহর থেকে আসতে হয়। প্রাকুতিক দুর্যোগ হলে তারা আসতে পারেননা। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে অনেক সময় নির্ধারিত সময়ের আগেই স্কুল ছুটি দেওয়া হয়। বন্যার পানি বেড়ে গেলে স্কুলটি বন্ধ ঘোষনা করা হতে পারে।

নলডাঙ্গা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পরিমল কুমার জানান,এই সময় হালতি বিল এলাকার অধিকাংশ স্কুল পানির মধ্যে থাকে। যে সব স্কুলে পানি প্রবেশ করেছে ,সেসব স্কুলের প্রতি সার্বক্ষনিক সর্তক দৃষ্টি রাখা হয়েছে। একডালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিবেশ সম্পর্কে উর্ধতন কতৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার জাহান,স্কুলটির সিড়ি ঘরের সামান্য অংশ পানিতে ডুবে গেছে। তবে দীর্ঘ মেয়াদী সময় তা বন্ধ ঘোষনার মত অবস্থা হয়নি।

(এমআর/এইচআর/সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test