E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রেলের চাকার সাথে থেমে গেছে হকারদের জীবনের চাকা!

২০২১ জুলাই ০৫ ১৫:২৮:২৭
রেলের চাকার সাথে থেমে গেছে হকারদের জীবনের চাকা!

মিলাদ হোসেন অপু, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) : করোনা প্রতিরোধে সারাদেশ চলছে তৃতীয় দফায় লকডাউন। বন্ধ রয়েছে সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালতসহ গণপরিবহন ও ট্রেন পরিষেবা। কবে পরিষেবাগুলো চালু হবে তা কেউ জানেন না। এমন পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ট্রেনের উপরে নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করা হকার এবং ফেরিওয়ালাদের জীবন। ট্রেনের মতোই ভৈরব স্টেশনে খেলনা, বই, কলম, লজেন্স, ফল, মিষ্টি কিংবা রুমাল, বাদাম, চানাচুর, চা-বিস্কুট, বিক্রি করা হকারদের জীবনের চাকাও এখন থেমে রয়েছে। বেকার হয়ে গিয়েছেন প্রায় ৫ শতাধিক হকার।

গত ১ জুলাই থেকে শুরু হয় সারাদেশের কঠোর লকডাউন। ২২ জুন থেকে বন্ধ হয়ে যায় রেল পরিষেবা। ভৈরব স্টেশনে প্ল্যাটফর্মে নানা ধরনের সামগ্রী নিয়ে স্টল রয়েছে হকারদের। সেগুলিও বন্ধ। তার সাথে যুক্ত ৫ শতাধিক হকার, দোকানদার ও ফেরিওয়ালা। ট্রেন বন্ধ থাকায় তাদের অবস্থাও শোচনীয়।

স্টেশন এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী মিলন মিয়া বলেন, গত ২২ জুন থেকে লকডাউনের কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এই জন্য আমাদের ব্যবসাও বন্ধ রয়েছে। পরিবার পরিজনসহ হোটেলের শ্রমিকদের নিয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছি। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন লকডাউন আর যেন দীর্ঘায়িত করা না হয়।

আরেক হোটেল ব্যবসায়ী আলকাছ মিয়া বলেন, লকডাউনের কারণে রেল স্টেশনের সকল কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। হোটেল বন্ধ হয়ে গেলেও হোটেলে ভাড়া ও বাসা ভাড়া বকেয়া পড়েছে। এগুলোতো আমাকেই পরিশোধ করতে হবে। বড় ধরণের একটা ঋণগ্রস্ত হয়ে গেলাম। এ বছরের লকডাউনের ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই আরেকবার বিপদে পড়ে গেলাম।

শ্রমজীবী আক্তার হোসেন বলেন, আমরা দিনমজুর মানুষ। দেশে লকডাউনের কারণে সব কিছু বন্ধ থাকায় কোন কাজকর্ম করতে পারছি না। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে দিন পার করছি। এভাবে চলতে থাকলে আমরা পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরবো।

স্টেশনের কয়েকজন দিনমজুর বলেন, ২০-২৫ বছর যাবত এই স্টেশনে মজুরের কাজকর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করছি আমরা। লকডাউনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় এখন আমাদের আর কোন কাজ নেই। বেকার হয়ে পড়েছি সবাই। বাড়িতে থাকলে বউ বাচ্চারা টাকার জন্য বিরক্ত করে। পরিবারের চাহিদা মেটাতে না পেরে আমরা স্টেশনে বসে সময় কাটাচ্ছি।

হকার বাদশা মিয়া বলেন, এই স্টেশনে ৬ শতাধিক হকার ফেরিওয়ালা কর্ম করে খায়। এদের সাথে জড়িত রয়েছে পরিবারের প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার মানুষ। এখন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সবাই বেকার হয়ে পড়েছে। রুজি-রোজগার না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি সবাই।

ভৈরব রেলওয়ে হকার শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক হেলাল মিয়া বলেন, কবে ট্রেন চালু হবে কিংবা চালু হলেও পরিস্থিতি আগের মতো থাকবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সন্দিহান।

গত বছরের লকডাউনে আমরা বিভিন্ন অনুদান পেয়েছিলাম। এবারের লকডাউনে আমাদের হকার ফেরিওয়ালাদের কেউ কোন অনুদান দেয়নি এমন কি কেউ কোন খোঁজ খবরও নেয়নি। সরকার যদি আবারো লকডাউন বাড়ায় তাহলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।

(এম/এসপি/জুলাই ০৫, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test