E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দুর্গাপুরে অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা পোষ্ট মাস্টার

২০১৪ সেপ্টেম্বর ০৬ ১৪:৩৮:৫৯
দুর্গাপুরে অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা পোষ্ট মাস্টার

দুর্গাপুর (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি : জেলার দুর্গাপুর উপজেলা পোষ্ট অফিসের পোষ্ট মাস্টার মো. মোর্শেদ মৃর্ধা সরকারি ও গ্রাহকদের সঞ্চয়পত্র প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা, সঞ্চয়পত্র জমা ও উত্তোলনের ভূয়া রশিদ দিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন বলে এক চাঞ্চল্যকর খবর পাওয়া গেছে।

অফিস সূত্রে জানা যায়, পোষ্ট মাষ্টার সরকারি রক্ষিত কোষাগার থেকে বিভিন্ন মূল্যের স্ট্যাম্প ও পোষ্টাল অর্ডারসহ নগদ প্রায় ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

অপরদিকে গ্রাহকদের সঞ্চয়পত্র, প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন স্কিমের জমাদানকারীদের সাদা কাগজে রশিদ দিয়ে প্রায় ৫০’লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন। প্রায় ষাট বছর বয়সী এ পোষ্ট মাষ্টার ২০১২ সালে এখানে যোগদান করে খুব নামাজি ও ছুফি লোক বলে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেন। তার নিজের বাড়ি গাজীপুরে। ১৭ আগষ্ট রাতের আধারে তার স্ত্রীকে নিয়ে কাউকে না বলে উধাও হয়ে যান। ১৮ আগষ্ট সারাদিন অফিসে অনুপস্থিত থাকায় পোষ্ট মাষ্টারকে খুঁজতে থাকেন অন্যান্য কর্মচারীরা, বিভিন্ন যোগাযোগে ব্যর্থ হন তারা। ডাক বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ঘটনাটি অবহিত করলে নেত্রকোণা পোষ্ট অফিস পরিদর্শক এ.এস.এম আনিসুল হক ভূইয়া পরিদর্শন শেষে ঘটনার সত্যতা মিললে ময়মনসিংহ বিভাগের পোষ্ট অফিস সুপার স্বপন কুমার ভৌমিককে অবহিত করেন।

ঘটনাটি পরে জোরেসোরে পোষ্ট মাষ্টার মোর্শেদ মৃর্ধার আত্মীয় স্বজনসহ যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়ে ২৫ আগষ্ট দুর্গাপুর থানায় নেত্রকোণার পোষ্ট অফিস পরিদর্শক এ.এস.এম আনিসুল হক ভূইয়া বাদী হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরী নং ৮৫০ দায়ের করেন। পরে ১ সেপ্টেম্বর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ ফাহাদ পারভেজ বসুনিয়া, পোষ্ট অফিস সুপার স্বপন কুমার ভৌমিক, পরিদর্শক এ.এস.এম আনিসুল হক সহ অফিসে রক্ষিত কোষাগারের সিন্ধুক ভেঙ্গে মূল্যবান কাগজপত্র, সঞ্চয়পত্র, স্ট্যাম্প ও গ্রাহকদের কোনো বই পাওয়া যায়নি।

ময়মনসিংহ অঞ্চলের পোষ্ট অফিস সুপার এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এ প্রতিবেদককে জানান তাদের সরকারি হিসাব মতে পোষ্টাল অর্ডার, স্ট্যাম্প ও নগদ অর্থ ১০’লাখ ২৯’হাজার ৩’শ ৫৪ টাকার হদিস মিলছে না। তবে বিভিন্ন গ্রাহকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়, ভূয়া সাদা কাগজে রশিদের মাধ্যমে প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। আমানতকারী গ্রাহকগণ দৈনিক তাদের সাদা কাগজের রশিদ নিয়ে ভিড় জমাচ্ছেন পোষ্ট অফিস প্রাঙ্গনে।

কয়েকজন সঞ্চয় জমাদানকারীর সাথে কথা বলে জানা যায় পৌরসভার দেশওয়ালীপাড়ার বাসিন্দা সলিল কুমার গুপ্ত (অজিত)কে পেনশন সঞ্চয়পত্র নং ০১৩২৪৮১, তাং ১৮/০৮/২০১৩, ২’লাখ টাকা সাদা কাগজে দস্তখত দিয়ে একটি রশিদ দেন। সুফল সরকার, পিতা রতন সরকার, সাধুপাড়া তার নিকট হতে ১’লক্ষ টাকা বুঝে পেয়ে ০৮/০৪/২০১৪ তারিখে একটি সাদা কাগজে রশিদ দেন। পৌরসভার শিবগঞ্জ বাজার বাসিন্দা কহিনুর মিয়া ২০/০৪/২০১৪ তারিখ ৫০’হাজার টাকা ও রোমেনা বেগম, স্বামী নজরুল ইসলামকে একই তারিখে সাদা কাগজে ৫০’হাজার টাকার রশিদ দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন বলে জানা গেছে।

প্রতিদিন সঞ্চয় জমাদানকারীরা পোষ্ট অফিসে ভিড় জমাচ্ছেন এবং কান্নায় অনেকে আহাজারি করছেন এবং জমাকৃত টাকার স্লিপ নিয়ে জমাদানকারীরা সাংবাদিকদের কাছে ভিড় জমাচ্ছেন। পোষ্ট অফিস সুপার স্বপন কুমার ভৌমিক জানান, সাদা কাগজের টাকার রশিদ দেখে মনে হয় ব্যক্তিগত লেনদেন হয়েছে। তবে সমস্ত ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত পোষ্ট মাষ্টারের কোন সন্ধান করতে পারেননি ডাক বিভাগ।

(এনএস/এএস/সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test