E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঠাণ্ডা-জ্বর নিয়ে অবহেলা

শ্বাসকষ্ট বেশি হলে হাসপাতালে আসছে মানুষ!

২০২১ জুলাই ১৪ ১৭:৪৪:১৬
শ্বাসকষ্ট বেশি হলে হাসপাতালে আসছে মানুষ!

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে বেশির ভাগ রোগী অধিক শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। ৭ থেকে ১০ দিন আগে এসব মানুষ সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হলেও শুরুতে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ফলে রোগীর মৃত্যুহার বেড়ে যাচ্ছে।

ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন কার্যালয় ও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় ও করোনা হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, ১৪ জুলাই পর্যন্ত জেলায় করোনায় ১৫৩ জন মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে গত ২৮ জুন থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত ঝিনাইদহ জেলায় ৭০ করোনা রোগী মারা যান। মোট মৃত্যুর ৮৭ শতাংশ মারা যান জেলা সদর হাসপাতালে। করোনা হাসপাতাল বাদে বাকি ২৩ জন জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বাড়িতে মারা যান।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ১৬ দিনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৭০ জন রোগীর মধ্যে ৫৮ জনের ভর্তির সময় অক্সিজেন স্যাচুরেশন (মাত্রা) ছিল ৮০–এর নিচে। সর্বনিম্ন ৩৫ পাওয়া গেছে। এই রোগীদের কোনোভাবেই বাঁচানো সম্ভব হয়নি। রাতের বেলায় মারা গেছেন অন্তত ৪০ রোগী।

জনস্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা বলছেন করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি নমুনা নিয়ে চিকিৎসা করাতেন, তাহলে হয়তো সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকতো। ঝিনাইদহে গ্রামের ঘরে ঘরে করোনা পৌঁছে গেছে। কিন্তু গ্রামের বাসিন্দারা অসচেতন বেশি। যেসব মানুষ ভর্তি হতে আসছেন, তাঁদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রায় সব রোগীই হাসপাতালে আসার অন্তত ৮ থেকে ৯ দিন আগে জ্বর, ঠান্ডা–কাশিতে আক্রান্ত হন। দু–এক দিনে এসব সেরে গেলেও তাঁরা নমুনা দিয়ে করোনা পরীক্ষা করান না। স্বাভাবিক জ্বর-ঠান্ডা ভেবে চিকিৎসা নেন। কিন্তু সাত থেকে আট দিনের বেলায় তাঁদের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে আসেন।

ঝিনাইদহ করোনা সেলের দায়িত্বরত চিকিৎসক লিমন পারভেজ বলেন, করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি নমুনা নিয়ে চিকিৎসা করাতেন, তাহলে হয়তো সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকত।’তিনি জানান, গত ১৫ দিনে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের ৯৯ শতাংশ রোগীর করোনা টিকা নেওয়া ছিল না। এ ছাড়া অধিকাংশ রোগী কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন।

করোনা সেলের প্রধান ডা: জাকির হোসেন জানান, কয়েক দিন ধরে ঝিনাইদহে রোগী শনাক্ত ও মৃত্যের হার স্থিতি পর্যায়ে আছে। বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে ধরে নিতে হবে বিধিনিষেধই ভালো ছিল। আর তা না হলে বিধিনিষেধ হার কমানোয় কোনো প্রভাব ফেলেনি। তবে এখনো বলার সময় আসেনি, ঝিনাইদহে করোনার দাপট কবে নাগাদ কমতে পারে।

হাসপাতাল সূত্র বলছে, অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রয়েছে। আজ বুধবার থেকে বেশ কিছু অতিরিক্ত চিকিৎসক ও নার্স করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োজিত হয়েছেন। আইসিইউ ও এইচডিইউ সাপোর্ট দিতে পূর্ণাঙ্গ সরঞ্জাম নেই। এখানে শুধুমাত্র সেন্ট্রাল অক্সিজেন ও ৪৫টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা সাপোর্ট রয়েছে।

এক মাস ধরে হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ১২০ এর বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। এত রোগীর বিপরীতে তিন শিফটে চিকিৎসক যথাক্রমে সকালে চারজন, বিকেলে ও রাতে তিনজন করে দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে ওয়ার্ডে (এক ওয়ার্ডে অন্তত ৪০ জন রোগী) সকালে ৩ জন, বিকেলে ও রাতে ২ জন করে নার্স দায়িত্ব পালন করেন। আজ থেকে সকালে দুজন, বিকেলে ও রাতে আরও একজন করে চিকিৎসক এবং একজন করে নার্স বাড়ানো হয়েছে। এতে চাপ কিছুটা কমবে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: হারুন অর রশিদ বলছেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ সবকিছু ভালো আছে। চিকিৎসক ও নার্স নতুন সংযুক্ত করা হয়েছে। তদারকি আরও বাড়ানো হচ্ছে।

(একে/এসপি/জুলাই ১৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test