E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘করোনায় মৃতরা আল্লাহপাকের কাছে নালিশ করবেন ঈশ্বরদীর ধনীরা জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি’

২০২১ জুলাই ১৯ ০০:১২:০৭
‘করোনায় মৃতরা আল্লাহপাকের কাছে নালিশ করবেন ঈশ্বরদীর ধনীরা জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি’

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ঈশ্বরদীতে করোনা আক্রান্তদের বিপর্যস্থ চিকিৎসা সেবা, মৃত্যু ও হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যরিষ্টার সৈযদ আলী জিরু বলেছেন, সিরিয়ার তিন বছরের শিশু আয়নালের মতো ঈশ্বরদীরতে করোনায় মৃতরা পরমকরুণাময় আল্লাহপাকের নিকট নালিশ করবেন। এখানে বিপুল সংখ্যক ধনী থাকা সত্বেও অক্সিজেন ও চিকিৎসার অভাবে তাদের মৃত্যু হযেছে।

এসময় তিনি বলেন, আমাদের ঈশ্বরদীতে ২০ বছর আগে হাতে গোণা ৫-৭ জন কোটিপতি ছিল। ২০ বছরে ঈশ্বরদীতে ৫-৭ জন হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ১০০-৫০০ কোটি টাকার মালিকও আছে অনেক। তাদের কি কোন সামাজিক দায়িত্ববোধ নেই। তাঁর বাড়ির পাশের একজন মানুষ শুধুমাত্র অক্সিজেনের অভাবে, হাসপাতালে একটা ভালো বেডের অভাবে লোকটা মারা যাচ্ছে। আমরা কি কোনদিনই সভ্য হবো না।

ব্যরিস্টার জিরু বলেন, ঈশ্বরদীতে যেসব মানুষ করোনায় সুচিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন, তাঁরাও রাব্বুল আলআমিনকে বলবে, এখানে আরআরপি, মল্লিক গ্রুপ, অটো রাইস মিল মালিক, বিভিন্ন এ্যাগ্রো ফুড কোম্পানী, রিসোর্ট মালিক, খামার মালিকসহ শত শত কোটি টাকার মালিক রয়েছে। অথচ করোনা রোগীদের জীবন বাঁচাতে তারা এগিয়ে আসেনি।

আরআরপি ও মল্লিক গ্রুপের প্রসংগ তুলে তিনি বলেন, আগে তারা কি করেছে, ঈশ্বরদীর মানুষ সকলেই জানেন। আজ তারা হাজার কোটি টাকার মালিক। যে মানুষগুলো অক্সিজেনের অভাবে ও বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। করোনা এই সবুজ-সুন্দর পৃথিবীটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মৃতরা এদের অভিশাপ দিচ্ছে। এই অভিশাপ থেকে মহান আল্লাহতালার কাছে রক্ষার জন্য করোনা আক্রান্তদের পাশে তাদের এখনই দাঁড়ানোর সময়।

সাবেক এই ছাত্র নেতা বলেন, পাবনা জেলায় ঈশ্বরদীতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক। প্রতিদিনই শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। প্রাণহানিও ঘটেছে অনেক। বিত্তবানরা জটিল পরিস্থিতিতে ঢাকা-রাজশাহী যেয়েও চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এই অবস্থায় ঈশ্বরদী হাসপাতালের করোনা ইউনিটে হাইফ্লো অক্সিজেন সিস্টেম চালুসহ অন্যান্য সেবার মান উন্নত করা হলে ঈশ্বরদীতেই ৯৫ ভাগেরও বেশী রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব। এই পরিস্থিতিতে ঈশ্বরদীর সম্পদশালীরা এখন পর্যন্ত কেউ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়নি।

জিরু সাগরপাড়ে সিরিয়ার মৃত শিশু আয়লানকে নিয়ে লেখা কবিতার তুলে ধরে বলেন, কবিতা শিশু আয়লানের ভাষ্যে লেখা হয়েছিল ‘আমি ঈশ্বরকে সব বলে দিব। বিশ্বে শত শত কোটি টাকার অস্ত্র বানানো হচ্ছে। আর সেই বোমার আঘাতে এবং না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে লাখ লাখ শিশু ও মানুষ।’

তিনি জানান, পৃথিবীতে করোনা পরিস্থিতির উদ্ভব হলে করোনা টিকা এ্যস্টোজনিকার উদ্ভাবন এবং তৈরীতে বিলগেটস-মিরিন্ডা ফাউন্ডেশন অর্থায়ন করছে। এ্যামাজনের মালিক জেফ বেজফ মর্ডানার টিকা তৈরীতে ফাইন্যান্স করছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সকল ধনী ব্যক্তিরা একেকটা প্রদেশের দায়িত্ব নিয়ে করোনা সহযোগতিায় এগিয়ে এসেছে। হাসপাতাল করে দিচ্ছে, আইসিও বানিয়ে দিচ্ছে, যে যেভাবে পারছে মানুষের জীবন রক্ষার জন্য সবকিছু করছেন। আমির খান এক কেজি আটার মধ্যে ১৫ হাজার রুপি করে দিয়ে কর্মহীনদের সহযোগিতা করেছে।

আমাদের দেশের ধনী ব্যক্তি যমুনা গ্রুপের মালিক নূরুল ইসলাম বাবুল বিপুল বিত্ত বৈভব থাকা স্বত্বেও কোথায়ও কোন হাসপাতাল করে দেয়নি, আইসিইউ বেড দেয়নি, হাইফো অক্সিজেন সিষ্টেমসহ কোথায়ও কোন সহযোগিতা করেননি। লক্ষ-কোটি টাকার মালিক বাবুল কিন্তু করোনায় মারা গেছেন। সাথে কি নিতে পেরেছেন অর্থ-সম্পদ।

ট্রান্সক্রম গ্রুপের মালিক লতিফুর রহমান হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। উনিও করোনায় মারা গেছেন। দেশের ধনাঢ্য এস আলম গ্রুপ। যারা ৯টি ব্যাংকের মালিক ও ২৭টি ব্যাংকের ম্যানেজমেন্টের সাথে সরাসরি জড়িত। অতি সম্প্রতি এদের পরিবারের ভাই মোর্শেদুল আলম করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১টি আইসিইউ বেডের অভাবে মারা গেছেন। করোনা আক্রান্ত তারা দুই ভাই একটি আইসিইউ বেডে শেয়ার করে রোটেশনরি অক্সিজেন ব্যবহার করেছেন। এ্যতো সম্পদের মালিক, এখন এই সম্পদ দিয়ে এখন উনারা কি করবেন ?

ব্যরিষ্টার জিরু এসময় সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ঈশ্বরদীর করোনায় আক্রান্তদের জীবন রক্ষার জন্য সম্পদশালী ব্যক্তিদের হাসপাতালে হাইফ্লো অক্সিজেন সিস্টেম চালুর ব্যবস্থার পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করণে এগিয়ে আসার আহব্বান জানিয়েছেন।

(এসকেকে/এসপি/জুলাই ১৯, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test