E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

করোনাকালে অনলাইন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন নড়াইলের ১শ’র বেশি উদ্যোক্তা

২০২১ জুলাই ২০ ১২:০৬:৫৩
করোনাকালে অনলাইন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন নড়াইলের ১শ’র বেশি উদ্যোক্তা

শেখ সাদ বীন শরীফ, নড়াইল : ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সোনিয়া ফেরদৌস জুঁথী নড়াইল শহরে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিন মাস পর করোনাপ্রাদুর্ভাবের কারনে স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে স্বপ্নগুলো থমকে দাড়ায়। বাসায় বসে বসে ভাবতে থাকেন নতুন কিছু করা যায় কিনা। সেই ভাবনা থেকে নিজের শিশু সন্তানের জন্য হ্যান্ড পেইন্টের একটি ফতুয়া তৈরি এবং তাকে মডেল করে ‘নকশা’ নামে একটি ফেসবুক পেইজ চালু করে তাতে পোস্ট করেন। পোস্টে লিখে দেন এখানে ডিজাইন করা হ্যান্ড পেইন্ট পাঞ্জাবি, ফতুয়া, ফ্রগ, কামিজ ও শাড়ির অর্ডার নেওয়া হয়। সেই পোস্ট দেখে খাগড়াছড়ির এক সেনা কর্মকর্তা ৩টি পাঞ্জাবির অর্ডার দেন। সেটাই অনলাইন ব্যবসায় তার প্রথম আয়। এরপর আর থেমে থাকেননি। এবার কোরবানী ঈদে আমেরিকা, ঢাকা, নড়াইলসহ দেশের কয়েকটি জায়গা থেকে শাড়ী, পাঞ্জাবি, ত্রিপিস এবং ফতুয়ার অর্ডার পেয়েছেন।

জুঁথী বলেন, ২০১৬ সালে বাংলায় মাস্টার্স পাশ করে চাকুরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। পরে শিক্ষকতার ইচ্ছা থেকে নিজ উদ্যোগে শহরের কুড়িগ্রাম এলাকায় বেবী কেয়ার নামে একটি কিন্টারগার্টেন স্কুলের কার্যক্রম শুরু করলেও সবকিছু থমকে যায়। তারপর সাহস নিয়ে হ্যান্ড পেইন্ট-এর কাজ শুরু করি। এখন কম-বেশী সফলতা পাচ্ছি। সম্প্রতি উইমেন ইন ই-কমার্স (উই), হস্তশিল্পসহ কয়েকটি গ্রুপের সদস্য হয়েছি। ইচ্ছা আছে নিজের বহু দূর যাওয়ার।

শহরের কুরিগ্রাম এলাকার মুক্তা খানম ২০১৪ সালে ব্যবস্থাপনা বিভাগে মাস্টার্স পাশ করে চাকরিতে প্রবেশ না করে নিজেই কিছু করার চিন্তা করেন। এ কাজে কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ২০১৯ সালের নভেম্বরে ‘স্বপ্ন কুটির’ নামে একটি ফেসবুক পেজ চালু করে পরিত্যক্ত প্লাসিকের পানির বোতল, খবরের কাগজ, প্লাস্টিকের ফুল, চুমকি,পঁথি দিয়ে ঝাড়বাতি, ফুলের শো পিচ, কুঁড়ে ঘরসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে ফেসবুক পেজে দেন। পরে ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের কয়েকটি জেলা থেকে পাইকারি অর্ডার পান। এরপর স্থানীয় জাওয়া বাঁশ এবং পাট দিয়ে এবং ঢাকা থেকে কাঁচা মাল কিনে এনে বাসায় ফুলদানী, ট্রে, ল্যাম্প পোস্ট, টিস্যু বক্স, পাটের টিস্যু ব্যাগ, পার্টি ব্যাগ, ট্রাভেল ব্যাগ, ফটো ফ্রেম, পেন হোল্ডার, শাড়ী রাখার বাক্স তৈরি করে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে বিক্রি করেন। তার কারখানায় প্রায় ১৯ জন নারী কাজ করলেও করোনাপ্রাদুর্ভাবের কারনে বন্ধ হয়ে যায়। এখন এসব পণ্যই অনলাইনে অন্য জেলা থেকে ক্রয় করে সেগুলো আবার বিক্রি করছেন। তিনি জানান, ই-কমার্স প্লাটফর্ম দারাজেও তার বিক্রয় শপ রয়েছে এবং ইভ্যালি থেকেও তার সাথে যোগাযোগ চলছে তাদের সাথে কাজ করার জন্য।

জানা গেছে, জুঁথী ও মুক্তার মতো নড়াইলে শতাধিক ছোট ছোট উদ্যোক্তা রয়েছেন যারা ফেসবুক পেজ খুলে ইলেকট্রনিক পণ্য, কসমেটিক্স, ফ্যাশনসামগ্রী, ত্রিপিচ,শাড়ী ছাড়াও মাশরুম, মধু, বিভিন্ন খাবার,আচার, মেহেদীসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছেন, যাদেও ৭০ ভাগই নারী।

এ ব্যাপারে উদ্যোক্তা মুক্তা খানম জানান, অনলাইনে কুরিয়ারের চার্জ অনেক বেশী হওয়ায় ক্রেতারা পিছিয়ে যায়। তিনি প্রশাসনের কাছে কুরিয়ার চার্জ কমানোর দাবি জানান। এছাড়া উদ্যোক্তাদের কাজের স্বীকৃতি, সরকারি ট্রেনিং, আর্থিক প্রণোদনা, অনুদান বা সহজশর্তে ঋণের দাবি জানান।

সুন্দরবন কুরিয়ার সেবার স্বত্বাধিকারী সঞ্জয় দাস বলেন, নড়াইলে কন্টিনেন্টাল, জননী, ইউএস কুরিয়ার সার্ভিস ছাড়াও দারাজ, পাঠাও, পেপারফ্লাই, ই-কুরিয়ার, রেডেক্সসহ আরও কয়েকটি অনলাইনভিত্তিক কুরয়ার সার্ভিস রয়েছে। এসব কুরিয়ার প্রতিদিন অসংখ্য অর্ডার ডেলিভারি দেন। এর একটি অংশ ফেসবুককেন্দ্রিক উদ্যোক্তার পণ্য হলেও এর প্রকৃত সংখ্যা বলা সম্ভব নয়।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বলেন, করোনার কারনে ফেসবুককেন্দ্রিক ব্যবসা এখন যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। উদ্যোক্তরা বাড়িতে বসেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে যুক্ত হচ্ছেন। এ বিষয়ে আমাদের কাছে সঠিক কোনো তথ্য নেই। এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ। আগামিতে ছোট ছোট এসব উদ্যোক্তদের উৎসাহ, অনুদান বা প্রণোদনা দেওয়ার ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নিব।

(এস/এসপি/জুলাই ২০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test