E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

করোনা আক্রান্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সেবা দিতে অপরাগতা প্রকাশ

ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হলো গৃহকর্মী রোকেয়ার বসতঘর!

২০২১ জুলাই ২৫ ১৭:৩৩:১৪
ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হলো গৃহকর্মী রোকেয়ার বসতঘর!

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : করোনা আক্রান্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সেবা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ৯ বছর ধরে সরকারি খাস জমিতে বসবাসকারী গৃহকর্মী বিধবা রোকেয়া খাতুনের খুপড়ি ঘর ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নকীপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে ১০/১২ জন এ ভাঙচুর চালানো রোববার সকাল ৯টার দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ইসমাইলপুর গ্রামে কোভিড কালীন এই অমানবিক ঘটনা ঘটে। 

ইসমাইলপুর গ্রামের সাবুর আলীর বিধবা স্ত্রী রোকেয়া জানান, গত বাংলা সনের অগ্রহায়ন মাসে তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া একটি ঘর দেওয়া হয়। তার পুরানো ঘরে বর্তমানে তারা মেয়ে তিথি ও জামাতা সাঈদ বসবাস করে। গত বছরের মাঘ মাস থেকে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি বাসভবনে গৃহকর্মী হিসাবে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। সাড়ে পাঁচ মাস কাজ করার পর তার করোনা উপসর্গ দেখা দিলে তিনি তাকে বাড়ি থেকে চিকিৎসা নিতে বলেন। এই কারণে তিনি বাড়িতেই ছিলেন এবং চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়ে সাতক্ষীরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। তাকে সেবা দেওয়ার জন্য তাকে সেখানে যেতে বলা হয়। কিন্তু তিনি করোনার আতংকে এবং তার একটিমাত্র মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কথা রাখতে পারেননি। এতেই তিনি ক্ষুব্ধ হন।

রোকেয়া আরও জানান, শনিবার বিকেল ৫টায় তিনি কাজের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসায় ঢুকতে গেলে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। সেখানে থাকা একটি রাজহাঁস ও ব্যবহৃত পোশাক ছাড়াও ১৫ দিনের বেতন তিনি পাননি।

রোকেয়া জানান, কোনকিছু বুঝে ওঠার আগে রোববার সকাল ৯টার দিকে নকীপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে ১০/১২ জন দা, কোদাল, শাবল নিয়ে তার ঘরটি ভেঙেচুরে দিয়ে যায়। প্রায় তিন ঘণ্টা যাবৎ হাতে পায়ে ধরলেও কোন অনুরোধও তারা শোনেনি। ওই ঘরে তার দিনমজুর মেয়ে ও জামাই থাকতো। তারা এখন আশ্রয়হীন হয়ে পড়লো। বিকেল চারটার দিকে মোবাইল ফোনে ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী রোববার বিকেল চারটার দিকে তার (রোকেয়া) বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

রোকেয়া খাতুনের অভিযোগ, তার ঘর গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুজার গিফারীকে দায়ী। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে ইউএনও তার ঘরটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ তার আশপাশে আসাদুল হুজুর, রশিদ দফাদার, কামাল হোসেন, ময়নাসহ অনেকেই সরকারি খাসজমিতে বাড়িসহ পুকুরে মাছ চাষ করলেও তারা নির্বিঘেœ রয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নকীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার মোহাম্মদ আলী বলেন, রোকেয়ার নামে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারপরও তিনি সরকারি খাস জমির একাংশ দখল করে ছিলেন। এজন্য তাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর আগে তাকে কোন নোটিশ দেওয়া হয়নি স্বীকার করে তিনি বলেন, রোকেয়ার ঘর থেকেই উচ্ছেদ শুরু করা হলো। তবে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়।

শ্যামনগর সদরের ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল হায়দার বাবু বলেন, কোভিড চলাকালে তার ঘরবাড়ি ভেঙে উচ্ছেদ করা একটি অমানবিক বিষয়। তিনি এর প্রতিবাদ করেন।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুজার গিফারী বলেন, রোকেয়ার প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশের কোন সুযোগ নেই। করোনাকালে কোন বাড়িতে গৃহকর্মীর থাকাটাও নিরাপদ নয়। তাছাড়া সরকারি জমি উদ্ধার একটি চলমান প্রক্রিয়া। রোকেয়াকে তার বসবাসের জন্য আগেই একটি ঘর দেওয়া হয়েছে। তিনি বাড়তি জমিতে থাকার কারণে তার বাড়িঘর সরিয়ে না নেওয়ায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আশপাশের আরও খাস জমি দখলকারীদের পর্যায়ক্রমে সরিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের নতুন নতুন ঘর তৈরী করা হবে।

(আরকে/এসপি/জুলাই ২৫, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test