E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

৪০ বছর পর বিশুদ্ধ পানির সুবিধা পেল রাহাতপুরের ২৫০ পরিবার

২০২১ জুলাই ২৬ ১৪:৫৯:৫৪
৪০ বছর পর বিশুদ্ধ পানির সুবিধা পেল রাহাতপুরের ২৫০ পরিবার

মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরা জেলার মহম্মদপুরের রাজাপুর ইউনিয়নের রাহাতপুর গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় ৪০ বছর ধরে বাস করছেন দরিদ্র অলকা রাণী দাস। স্বামী কালিদাস প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে নিয়ে ছোট একটি টিনের খুপরিতে বাস করেন তিনি। তার বাড়ির নিকট দিয়েই বয়ে গেছে নবগঙ্গা নদী। বিভিন্ন স্থানে কাজ করে চলে তার সংসার। এ ৪০ বছরে  বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারেনি অলকার পরিবার। এলাকার নলকূপ গুলোর পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন থাকায় তা পানের অযোগ্য। তাই বিশুদ্ধ পানি আনতে ২ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয় পার্শ্ববতী পাড়ায়। নদী কাছে থাকায় মাঝে মাঝে সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করে রান্নাবান্না সহ বিভিন্ন গৃহস্থালির কাজ মেটাতে হয় তাদের। অলকা জানান,সম্প্রতি এলাকায় লোকমোর্চার সহায়তায় এলজিএসপি প্রকল্পের মাধ্যমে তারা এখন বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে। এ পানি পরিষ্কার ও পান করা স্বাস্থ্য সম্মত। এ পানি পান করা ও রান্নাবান্না সহ বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন হচ্ছে।

রাহাতপুর গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার চাঁদ মিয়া জানান, এ গ্রামে ১৫’শ মানুষের বাস। আমাদেও গ্রামের বিভিন œপাড়ার মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমপাড়ার মানুষের বিশুদ্ধ পানির সমস্যা দীর্ঘ ৪০ বছরের। এলাকায় যে সব নলকুপ রয়েছে সে গুলোর পানিতে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন। এ পানি লাল রঙের। পানিতে রয়েছে তীব্র দুর্গন্ধ। যা এলাকার মানুষ পান করতে পারছে না। রান্নাবান্না সহ কাপড় ধোয়ার কাজেও এ পানি ব্যবহারের অযোগ্য। তাই এলাকার মানুষ পাশ্ববর্তী পাড়ায় গিয়ে পানি সংগ্রহ করে নিয়ে আসে।

তিনি আরো জানান, এ বিষয় গুলো নিয়ে আমরা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় রেসপন্স প্রকল্পের মাধ্যমে গঠিত এলাকার কমিউনিটি গ্রুপের কিছু সদস্য প্রথমে আলোচনা করি, কীভাবে সমাধান করা যায়। পরে ইউনিয়ন ওয়ার্ড সভায় কমিউনিটি গ্রুপের সদস্য, রেসপন্স প্রকল্পের সহায়তায় গঠিত লোকমোর্চা’র সদস্যরা জোরালো ভাবে পানি সমস্যা সমাধান কল্পে দাবি জানান। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় এলজিএসপি প্রকল্পের মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়। পরে রাহাতপুর বাজার এলাকার মানুষের বিশুদ্ধ পানি দেওয়ার জন্য ইউনিয়নের ২০১৯-২০ অর্থ-বছরের বাজেটে এলজিএসপি-৩ এর অর্থায়নে“রাহাতপুর পরিতসের বাড়ীর পাশের রাস্তায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ”নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়।

এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ লক্ষ ৫ হাজার টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে রাহাতপুর বাজারে একটি গভীর নলকুপের মাধ্যমে ৫ হাজার লিটারের একটি পানির ট্যাঙ্কিতে পানি সংগ্রহ করা হয়। এই ট্যাঙ্কির পানি পাইপ লাইনের মাধ্যমে এলাকায় আরো ৭০-৮০টি ছোট পানির ট্যাপ পয়েন্ট করে পানি সরবরাহ করা হয় এলাকাবাসীর জন্য। এখন এ এলাকার ২’শ ৫০ পরিবার সহজেই বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে। যে পানি পান করা, গোসল,রান্নাবান্না সহ বিভিন্ন কাজ সমাধান করছে এলাকাবাসী। পাশাপাশি রাহাতপুর বাজারের ব্যবসায়ীরাও এর সুফল ভোগ করছেন। ইউনিয়ন ওয়ার্ড সভার মাধ্যমে এ সুফলটি হওয়াতে এলাকাবাসী খুব খুশি।

এলাকার গৃহবধূ দীপালি,লক্ষ্মীসহ অনেকে জানান,“পূর্বে আমাদের পাড়ায় বিশুদ্ধ পানির অভাব ছিল। কিন্তু এখন এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছি। যা আমাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাচ্ছে। এলাকার সুব্রত মেম্বার,নান্নু ও দীলিপ জানান,বিশুদ্ধ পানির সমস্যা আমাদের দীর্ঘদিনের। কিন্তু আমরা জানতাম না এটি কীভাবে সমাধান করা যাবে। পরে আমরা কমিউনিটির সদস্যরা মিলে জোরালো ভাবে ওয়ার্ড সভায় দাবী পেশ করি যা পরবর্তীতে সমাধান হয়।

ওয়েভ ফাউন্ডেশনের রেসপন্স প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী ওসমান গনি জানান, আমরা সমাজের বঞ্চিত মানুষের অধিকার নিয়ে আমরা কাজ করছি। মহম্মদপুরের রাজাপুর ইউনিয়নের রাহাতপুর গ্রামের বিভিন্ন পাড়ায় বিশুদ্ধ পানির সমস্যা দীর্ঘদিনের।ওয়েভ ফাউন্ডেশনের রেসপন্স প্রকল্পের কমিউনিটির গ্রুপের সদস্যরা ওয়ার্ড সভায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য জোরালো দাবি পেশের মাধ্যমে তারা তাদের সুফল ভোগ করছে। এটি তাদের সাফল্যের অন্যতম একটি দিক।

মাগুরা লোকমোর্চার সাধারণ সম্পাদক অলোক বোস জানান, অধিকার বঞ্চিত মানুষের সেবা করাই আমাদের মুল লক্ষ্য। অধিকার বঞ্চিত কোন এলাকার মানুষের সাফলের জন্য আমরা কাজ করছি। রাহাতপুর গ্রামের মানুষের বিশুদ্ধ পানি পাবার অধিকার আছে। যেটি ওয়ার্ড সভার দাবির মাধ্যমে ইউনিয়নের সহয়োগিতায় বাস্তবায়ন করেছে। এটি একটি ভালো দিক।

মহম্মদপুর উপজেলার ৪ নং রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বিশ্বাস জানান, রাহাতপুর গ্রামের কিছ ুএলাকায় বিশুদ্ধ পানির সমস্যা দীর্ঘদিনের। তাদের ওয়ার্ড সভায় লোকমোর্চা ও কমিউনিটি গ্রুপের জোরালো দাবির প্রেক্ষিতে এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় এটি বাস্তবায়িত হয়েছে। এলাকার মানুষ এখন নিয়মিত বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে ।

(ডিসি/এসপি/জুলাই ২৬, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test