E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিপীড়ন থেকে বাঁচতে জেলা প্রশাসকের কাছে ভূমিহীন রোকেয়ার আবেদন 

২০২১ জুলাই ২৭ ১৮:০০:২৮
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিপীড়ন থেকে বাঁচতে জেলা প্রশাসকের কাছে ভূমিহীন রোকেয়ার আবেদন 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজার গিফারীর নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন ভূমিহীন রোকেয়া খাতুন।

শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের ইসমাইলপুর গ্রামের মৃত সাবুর আলীর স্ত্রী রোকেয়া খাতুন (৪৭) তার আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছেন যে, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ইসমাইলপুর ভূমিহীন পল্লীতে ঘরবাড়ি বানিয়ে সেখানে সন্তান সন্ততি নিয়ে বসবাস করে আসছেন। গত বাংলা সনের অগ্রাহয়ন মাসে তাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি ঘর দেওয়া হয়। এরপর থেকে তার মেয়ে তিথি- জামাই সাঈদ নতুন ঘরের পাশে তার পুরাতন ঘরে বসবাস করে আসছে। গত বছরের মাঘ মাস থেকে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজার গিফারির সরকারি বাসভবনে গৃহকর্মী হিসাবে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন। সাড়ে পাঁচ মাস কাজ করার পর তার করোনা উপসর্গ দেখা দিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

এ কারণে তিনি বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যান। এরইমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়ে সাতক্ষীরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন ইউএনওকে সেবা দেওয়ার জন্য তাকে সেখানে থাকতে বলা হয়। কিন্তু তিনি করোনার আতংকে এবং একমাত্র মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কথা রাখতে পারেননি। এতেই তিনি ক্ষুব্ধ হন। গত ২৪ জুলাই বিকেল ৫টায় তিনি কাজের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসায় ঢুকতে গেলে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

হত্যা মামলায় জেল খাটায় মুন্সিগঞ্জ তহশীল অফিস থেকে বরখাস্ত হওয়া সহকারি তহশীলদার নকীপুর গ্রামের দেবাশীষ মুখার্জী দীর্ঘদিন ধরে নকীপুর ভূমি অফিসে ডেপুটেশনে কাজ করছেন দাবি করে বিভিন্ন লোকজনকে খাস জমি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ভূমিহীন এলাকায় ব্যাপক চাঁদাবাজি করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ জুলাই দেবাশীষ মুখার্জী ইসলামপুরের ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করার কথা বলে বাড়ি বাড়ি লাল পাতাকা মেরে যান।

আগে থেকে কোন নোটিশ ছাড়াই ২৫ জুলাই সকাল ৯টার দিকে নকীপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী ও বরখাস্ত হওয়া তহশীলদার দেবাশীষ মুখার্জীর নেতৃত্বে ১০/১২ জন তার মেয়ে ও জামাতার ঘর ভেঙে দেওয়ায় তারা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। বাড়ির বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বিষয়টি তিনি কয়েকজন সাংবাদিককে অবহিত করেন। কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় তার বাড়ি ঘর ভাঙচুরের প্রতিবেদন ছাপা হওয়ায় মোবাইল ফোনে ইউএনও’র বরাত দিয়ে দেবাশীষ মুখার্জী ওইদিন বিকেল চারটার দিকে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার হুমকি দেন।

২৬ জুলাই রাত ১০টার দিকে শ্যামনগর থানার সহকারি উপপপরিদর্শক শাহবুল তার বাড়িতে যেয়ে হুমকি দিয়ে বলেন যে পরদিন সকালে ইউএনও সাহেবের বাসায় যেয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। তবেই তার ঘর বেঁধে দেওয়া হবে। সরকারি লোকের বিরুদ্ধে লড়ে পারবে না। তার নামে স্যার মামলা দিলে জেলে যেতে হবে। মেয়ের ঘরে লোক ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। মেয়েও পড়বে বিপদে। পরে তিনি জানতে পারেন যে তার নামে ইউএনও মহোদয় ২৬ জুলাই থানায় ১৩৩০ নং সাধারণ ডায়েরী করেছেন। ডায়েরীর তদন্তে এসে ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে হুমকি দিয়েছেন। তবে তিনি পরে ক্ষমাও চেয়েছেন। এমতাবস্থায় তিনি ও তার মেয়ে জামাই নিরাপত্তাহীনতায় ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন।

মহামারী করোনার কারণে মৃত্যু ভয়ে তিনি করোনা আক্রান্ত উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তার সেবা দিতে অসম্মতি জানানোয় তার ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। ইউএনও’র অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করায় তার নামে থানায় সাধারণ ডায়েরী করায় তিনি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এরপরও ইউএনও ’র বরাত দিয়ে দেবাশীষ ও শাহবুল যেভাবে তাকে তটস্ত করে রেখেছেন । যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে তার উপর ঘটে যাওয়া অবিচারের প্রতিকার চাওয়া হয়েছে।

তবে রোকেয়াকে উচ্ছেদের ঘটনায় শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজার গিফারি বলেন, তাকে বসবাসের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় একটি ঘর বরাদ্দ দেওযা হয়েছে। তা সত্ত্বেও তিনি সরকারের খাস জমির একাংশ দখল করে থাকায় সেখানকার ঘরটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

(আরকে/এসপি/জুলাই ২৭, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test