E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঠাকুরগাঁওয়ে উচ্চ মাত্রার কিটনাশকযুক্ত আম খেয়ে অসুস্থ অর্ধশতাধিক

২০২১ জুলাই ২৯ ১৫:১৭:০৬
ঠাকুরগাঁওয়ে উচ্চ মাত্রার কিটনাশকযুক্ত আম খেয়ে অসুস্থ অর্ধশতাধিক

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : অধিক মুনাফা লাভের আশায় ঠাকুরগাঁওয়ের এক আম বাগানের আমে উচ্চমাত্রায় কেমিক্যাল ও কীটনাশকযুক্ত স্প্রে তা বাজারজাত করে আম বাগান মালিক। আর এই উচ্চমাত্রার কেমিক্যাল ও কীটনাশকযুক্ত আম খেয়ে প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি অসুস্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এক আমবাগান ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে।

স্বাস্থ্যঝুঁকি রোধে বাগানের স্প্রে করা আম যেন আর বাজারজাত না করা হয় সেজন্য স্থানীয় থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী অসুস্থ ব্যক্তি ও গ্রামবাসীরা, চেয়েছেন প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ।

আম পচনশীল ফল, বেশি পাকা অবস্থায় সংগ্রহ করলে সংরক্ষণকাল কম হয়। তাই বেশি মুনাফা লাভের আশায় ঠাকুরগাঁওয়ের কিছু অসাধু চক্রের ব্যবসায়ীরা বাগানের গাছের আমে উচ্চমাত্রার কেমিক্যাল স্প্রে করে আম গাছেই সংরক্ষণ করছেন। নির্দিষ্ট সময়ের পরে বাজারে চাহিদা বেড়ে গেলে সেসব আম গাছ থেকে পেড়ে বেশি দামে বিক্রি করবেন তারা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা রুহিয়া মধুপুর গ্রামের সেই আমবাগান এলাকায় গেলে গ্রামবাসীরা জানান, বিষাক্ত আম খেয়ে গ্রামের অর্ধশত ব্যক্তি অসুস্থতায় ভুগছেন। তারা জানান, আব্দুর রশিদ নামের ওই অসৎ আম ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার আশায় বাগানের আমে অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক স্প্রে করেছেন। সেই আম বাগানের আশে পাশের স্থানীয় ব্যক্তিরা ক্রয় করে খেলে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

স্থানীয় মধুপুর গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক বিরেন্দ্র নাথ শর্মা অভিযোগ করেন, দু'দিন পূর্বে রশিদের বাগানের আম কিনে নিয়ে যান তিনি। সেই আম তিনিসহ পরিবারের বেশ কয়েকজন খেলে সকলেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ওষুধ খেয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন।

একই গ্রামের শাহীন আলম নামে আরেকজন জানান, বাগানের আম খেয়ে তার পরিবারের কারো পাতলা পায়খানা, কারো বমি আবার কারো পেটের ব্যাথায় ভুগেছেন। এখনো বেশ কয়েকজ অসুস্থ রয়েছেন। একই কথা জানান রায়হান ইসলাম, জুয়েল রানাসহ গ্রামের আরো বেশ কয়েকজন।

আশরাফুল ইসলাম নামে এক যুবক জানান, গত কয়েক মাসে মাঝে মাঝে বাগানে এত বেশি স্প্রে করা হতো যে, তাদের পক্ষে বাড়িতে থাকাটাই কষ্টের হয়ে যেত। বেশ কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত থেকে যেত কীটনাশকের গন্ধ। চলতি সপ্তাহে গ্রামের অনেকেই বাগানের আম কেনেন। সেই আম বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা মিলে খেলে সকলেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই বাগানের আম যেন বাজারে বিক্রি করা না হয় সেজন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

এদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে আম ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ ঘটনাস্থল মধুপুর আম বাগান থেকে সটকে পড়ে। তবে বাগান পরিচর্যাকারী মকবুল হোসেন জানান, তিনি দুই মাস আগে বাগানে চাকরি নেন। তিনি থাকা অবস্থায় মালিক রশিদ দু'দিন পুরো বাগানের আমে কিটনাশক স্প্রে করেন। প্যাকেটে কীটনাশক না কেমিক্যাল ছিলো তা তিনি জানেন না।

স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল মধুপুর আম বাগানে ও গ্রামে তদন্তে নামে পুলিশ।

রুহিয়া থানার ওসি চিত্ত রঞ্জন রায় জানান, এ বিষয়ে গ্রামের ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বাগানের গাছের আম পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে কৃষিবিভাগে। কৃষিবিভাগের তদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত গাছের আম না পাড়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষকে।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আবু হোসেন জানান, অতিরিক্ত কীটনাশক মানবদেহের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকারক। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দোষিদের বিরুদ্ধে পরবর্তিতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(এফআর/এসপি/জুলাই ২৯, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test