E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নদী গর্ভে ৩৭৬ কোটি টাকার বাঁধ

নতুন করে বরাদ্দ চায় পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর আহাদ!

২০২১ জুলাই ২৯ ১৬:৫৪:০০
নতুন করে বরাদ্দ চায় পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর আহাদ!

আবুল কালাম আজাদ, রাজবাড়ী : রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধের তীর রক্ষায় সরকারের বরাদ্দের ৩৭৬ কোটি টাকার কাজ এখন নদী গর্ভে বিলীন। এখন আবার সংশ্লিষ্টদের দাবি কর্তৃপক্ষের কাছে নতুন করে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে, বরাদ্দ পেলেই পুনরায় কাজ শুরু করবো। তবে স্থানীয়দের দাবি আর কোন ঠিকাদার কিংবা রাজবাড়ী জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড যেনো এই কাজের দায়িত্ব না পায়, এটা সেনাবাহিনী দিয়ে করা হয়। 

শুধু এমন অভিযোগ শহর রক্ষা বাঁধেই নয়, রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন স্থানে বর্ষার মৌসুম আসলেই পানি উন্নয়ন বোর্ড তড়িঘড়ি করে নদী ভাঙ্গন রক্ষায় কাজ শুরু করে। তবে সে কাজ হয় লোক দেখানো মাত্র। কোন কাজেই আশে না বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।

গত ২৭ জুলাই মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার গোদারবাজার এনজিএল ইট ভাটা এলাকায় এ ভাঙ্গন দেখা দিলে, সন্ধ্যার মধ্যে ইট ভাটা ও গোদার বাজার ঘাট এলাকার প্রায় ৬০ মিটার সিসি ব্লকসহ বাঁধ ধসে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৬০মিটার সিসি ব্লক নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ফলে ওই এলাকায় এনজিএল ইটভাটা সহ শতশত বাড়িঘর হুমকির মধ্যে রয়েছে।পদ্মা নদীর শহর রক্ষা বাঁধের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলমান থাকাকালীন এমন ভাঙন শুরু হওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এ সময় ভাঙন প্রতিরোধে সিসি ব্লক ও বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলতে দেখা যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো)।

এর আগে ১৬ জুলাই ভাঙনের স্থান থেকে আধা কিলোমিটার পশ্চিমে শহর রক্ষা বাঁধের নদীর তীর এলাকার প্রকল্পের স্থানের কাজ শেষের দুই মাস না যেতেই প্রায় ৩০ মিটার এলাকা ভেঙে যায়।পরে ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধ করে পাউবো।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী শহর রক্ষায় পদ্মা নদীর তীরে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের কাজ হয়েছে সাত কিলোমিটার এলাকায়।কাজটি সম্পন্ন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপইয়ার্ড। ভাঙনরোধে ২০১৮ সালের জুন মাসে রাজবাড়ীর পদ্মা নদীর শহর রক্ষা বাঁধের ডান তীর প্রতিরক্ষার কাজ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাটে তিন ও মিজানপুরে দেড় কিলোমিটারসহ সাড়ে চার কিলোমিটার এবং ২০১৯-এর জুলাইয়ে শুরু হওয়া (প্রথম সংশোধিত) শহর রক্ষা বাঁধের গোদার বাজার অংশের আড়াই কিলোমিটারসহ মোট সাত কিলোমিটার এলাকায় ৪৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এতে দ্বিতীয় পর্যায়ের সাড়ে চার কিলোমিটারে ৩৭৬ কোটি ও প্রথম সংশোধিত ১৫২৭ মিটারে ৭৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। প্রকল্পের জন্য ৮.৩ কিলোমিটার অংশে ৪৯ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না কারার শর্তে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিসি ব্লক বসানোর কাজের শুরু থেকেই অনিয়ম চলে আসছিল। যার কারণে ব্লক বসানোর কয়েক মাসের মধ্যে এমন ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে।

নদী পাড়ে বসবাসকারী একাধীক ভাঙনকবলিত কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, গেল কয়েক বছরের নদী ভাঙ্গনে বাপদার বসত বাড়ি ফসলি জমি জমা হারিয়েছি।এখন কোন ভাবে বেচেঁ আছি।এভাবে ভাঙ্গতে থাকলে আমাদের মত হাজারো মানুষ না খেয়ে মারা যাবে।আর কত বার ভাঙ্গনের শিকার হবো জানি না। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাঙন প্রতিরোধ বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হলে আশায় অনেক বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু কাজের শুরুতেই অনিয়ম হতে দেখেও মুখ খুলে কিছু বলতে পারিনি। এ অনিয়মের কারণে আজ ব্লক ধসে নদীতে বিলীন হচ্ছে। তাদের দাবি, যাতে আগামীতে ব্লক বসানোর কাজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজরদারিতে রেখে শেষ করে।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর আহাদ বলেন, স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের কাজ হয়েছে সাত কিলোমিটার এলাকায়। যার খরচ ৩৭৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ড্রেজিং এর জন্য ধরা হয়েছিল প্রায় ২০০কোটি টাকা। যদিও ড্রেসিং থেকে প্রায় ১০০কোটি টাকা বেঁচে গেছে। গতকাল ২৭ জুলাই বিকেল থেকে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এটার কারন হলো নদীর গতি পথ পরিবর্তন হয়েছে। ধসে যাওয়া এলাকায় নদীর স্রোত বেশি। কাজের নকশা থেকেও এখানে বেশি কাজ করা প্রয়োজন। এ জন্য আরও পাঁচ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছি।বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে।গতকাল সন্ধ্যায় হঠাৎ এনজিএল ইটভাটা এলাকায় ৬০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। তাৎক্ষণিক সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলানোর ব্যবস্থা করি।

কাজে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্লক ধসে যাওয়া অনিয়মের কোনো বিষয় নয়। এখনো কাজটি শেষ হয়নি। জিও ব্যাগ এবং ঠেস ব্লক, যা নদীতে ফেলার কথা ছিল, তা এখনো ফেলা হয়নি। তাই বসানো ব্লক ধসে পড়েছে। আপাতত নদীতীরের সড়ক রক্ষার্থে ব্লকগুলো দেওয়া হয়েছিল। বৃষ্টি শেষে নিয়ম অনুযায়ী সব কাজ সম্পন্ন করা হবে।

(একে/এসপি/জুলাই ২৯, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test