E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরণখোলায় পাউবোর স্লুইসগেট এলাকাবাসীর মরনফাঁদ

এখনো পানিবন্দি প্রায় ৬০ হাজার মানুষ

২০২১ আগস্ট ০১ ১৮:৩৪:২৫
এখনো পানিবন্দি প্রায় ৬০ হাজার মানুষ

বাগেরহাট প্রতিনিধি : সুপার সাইক্লোন সিডর ও আইলাসহ প্রাকৃতিক র্দূযোগে বিধ্বস্থ্য জনপদ বাগেরহাটের শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইস গেট এখন এলাকাবাসীর মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে তিনদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে রবিবার সর্বশেষ হিসেবে উপজেলার ৬০  হাজারের বেশী মানুষ পানি বন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ফসলের ক্ষেত, মাঠ, পুকুর, রাস্তা-ঘাট, এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছে। নির্মানাধীন বেড়ি বাঁধে অপরিকল্পিত ও অপর্যাপ্ত স্লুইস গেটের কারনে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে উপকূল রক্ষা বাঁধ নির্মান প্রকল্পের (সিআইপি) আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারে বাঁধ পুনঃনির্মানের কাজ করছে চায়নার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নির্মিত বাঁধে পর্যাপ্ত স্লুইস গেট রাখা হয়নি। এমনকি যেসব স্লুইস গেট নির্মান করা হয়েছে তা অপরিকল্পিত ও আগের চেয়ে সরু। এ অবস্থায় বঙ্গোপসাগরে লগুচাপের প্রভাবে গত মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) থেকে টানা তিন দিনের প্রায় ৭০০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে শরণখোলা উপজেলার ৯০ ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।

পানিবন্দি হয়ে পড়ে ৮৬ হাজার ৫০০ মানুষ। কিন্তু স্লুইস গেটগুলো দিয়ে পর্যাপ্ত পানি নামতে না পারায় এখনো মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। গত ৫ দিনেও পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় রান্নাবান্নাসহ মানুষ দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে। এছাড়া আমনের বীজতলা, রোপা আউশ এবং সবজিসহ অন্যান্য মৌসুমী ফসল শতভাগই পানির নিচে তলিয়ে যায়। ভেসে গেছে কয়েক হাজার মাছের ঘের ও পুকুরের মাছ। সরকারি হিসাবে কৃষি ও মৎস্যখাতে ক্ষতির পরিমান ১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলো থেকে জানাগেছে। এছাড়া রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি ও অবকাঠামোগত ক্ষতির হিসাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এদিকে শনিবার দুপুরে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৌদ্ধ শরণখোলায় পরিদর্শনে আসলে তার কাছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানিবন্দি শত শত মানুষ দ্রুত পানি নিষ্কাশন ও পর্যাপ্ত স্লুইসগেট নির্মানের দাবী জানান। এসময় নির্বাহী প্রকৌশলী বিষয়টি উর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষকে জানবেন বলে আশ্বাস দেন। একইদিন রাত ৮টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সংকট নিরসনে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, চার ইউপি চেয়ারম্যান, সিআইপি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাতুনে জান্নাত বলেন, অতিবৃষ্টিতে বর্তমানে শরণখোলায় প্রায় হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। এঅবস্থা থেকে স্থায়ী সমাধানের জন্য জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে একটি সুপারিশ তৈরী করা হয়েছে। সুপারিশগুলি জেলা পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে সোমবার একনেকের সভায় উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে একটি সুপারিশ প্রেরন করা হবে।
শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, নির্মানাধিন বেড়ি বাঁধের স্লুইসগেটগুলো আগের তুলনায় অনেক ছোট এবং অপর্যাপ্ত। তাই একটি লকগেট এবং কমপক্ষে আরো সাতটি বড় স্লুইসগেট নির্মান করা হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আজমল হোসেন মুক্তা, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিলন, সাউথখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন, খোন্তাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন, রায়েন্দা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ রশিদ আকন জানান, বিগত ২০ বছরেরও শরণখোলাবাসী এমন জলাবদ্ধতা দেখেনি। পানি উন্নয়ন বের্ডের অপরিকল্পিত স্লুইসগেটের কারনে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত পরিকল্পিত এবং পর্যাপ্ত স্লুইসগেট নির্মান করা না হলে শরণখোলার মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাবে।

(এসএকে/এসপি/আগস্ট ০১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test