E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সোনাগাজীতে শিবির নেতার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ, পাল্টাপাল্টি মামলা

২০২১ আগস্ট ৩১ ১২:৪৪:৫৯
সোনাগাজীতে শিবির নেতার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ, পাল্টাপাল্টি মামলা

ফেনী প্রতিনিধি : ফেনীর সোনাগাজীতে ৯ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে হামিদুর রহমান আজাদ (২৬) নামে ছাত্র শিবিরের সাবেক এক নেতাকে গভীর রাতে আটক করে খুঁটিতে বেঁধে রেখেছে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় দুই পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে সাবেক শিবির নেতা হামিদুর রহমান আজাদ এবং আজাদকে খুঁটিতে বেঁধে ছবি তুলে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে ওই ছাত্রীর ভাই সৌদি প্রবাসী দীন মোহাম্মদকে ও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের দুইজনকে গতকাল সোমবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

রবিবার (২৯ আগস্ট) রাতে বগাদানা ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের তাকিয়া বাজার সংলগ্ন আশ্রাফ আলী কবিরাজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। দুই পরিবারের পক্ষ থেকে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসী, পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা জানায়, উপজেলার বগাদানা ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রটারী ও চরমজলিশপুর ইউনিয়নের একটি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল হাইয়ের এক কন্যা ও এক পুত্রকে প্রায় পাঁচ বছরর পূর্ব থেকে প্রাইভেট পড়াতো সোনাগাজী উপজেলা ছাত্র শিবিরের উত্তর শাখার সাবেক সভাপতি হামিদুর রহমান আজাদ। সেই সূত্রে গত দুই বছর থেকে জামায়াত নেতার স্কুল পড়ুয়া কন্যা (নবম শ্রেনির) ছাত্রীর সাথে আজাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২৯ আগস্ট রোববার রাত ৮টার দিকে ওই ছাত্রীর জন্মদিনের উপহার দিতে গিয়ে রাতে তাদের ঘরের একটি কক্ষে সুকৌশলে লুকিয়ে থাকে শিবির নেতা আজাদ, রাত একটার দিকে জামায়াত নেতা আবদুল হাই ও তার পুত্র দীন মোহাম্মদ টের পেয়ে আজাদকে আটক করে বেধড়ক পিটিয়ে ঘরের সামনে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে বেঁধে শারীরিক নির্যতন চালায় এবং ছবি তুলে দীন মোহাম্মদের ফেইসবুক আইডিতে খুঁটিতে বাধা আজাদের ছবি পোস্ট করেন।
ফেইসবুকে দেয়া পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন তাকিয়া বাজারে আশ্রাফ আলী কবিরাজ বাড়িতে ধরা খেয়েছে স্বর্ন চোর, রাত তিনটায় দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকেছে, পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ।
মুহূর্তের মধ্যে ফেসইবুকের পোস্টটি ভাইরাল হয়।

খবর পেয়ে পুলিশ আজাদকে উদ্ধার করে। সোনাগাজী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পুলিশ তাকে পুলিশি হেফাজতে নেয়।
জামায়াত নেতা আবদুল হাই অভিযোগ করেন, দীর্ঘ দুই বছর যাবৎ আজাদ তার স্কুল পড়ুয়া কন্যাকে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাবে উত্ত্যক্ত করে আসছে। বয়স কম হওয়ায় তিনি ও তার মেয়ে বিয়ে ও প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আজাদ রোববার রাতে সুকৌশলে ঘরে ঢুকে তার কন্যাকে জোর পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। তিনি ও তার ছেলে মিলে আজাদকে আটক করে রশি দিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে বেঁধে রাখেন। তার ছেলের সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তার ছেলের লাঠির আঘাতে আজাদের মাথা ফেটে যায়। তিনি আজাদকে এক মাত্র আসামি করে তার স্কুল পড়ুয়া কন্যাকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

অপর দিকে আজাদের পিতা বেলাল হোসেন অভিযোগ করেন, আবদুল হাইয়ের কন্যাকে প্রাইভেট পড়ানোর সূত্র ধরে তার ছেলের সাথে ওই স্কুল ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২৯ আগস্ট রোববার মেয়েটির জন্মদিন ছিল। মেয়েটি বিষয়টি তার ছেলেকে জানালে সে দুই প্যাকেট লজেন্স ও একটি কলম উপহার নিয়ে তাঁর বাড়িতে যায়। রাতে সেখানে খাওয়াধাওয়াও করে। কিন্তু গভীর রাতে তাঁর ছেলেকে নির্মম ভাবে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে বেঁধে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আহত করে। তাতে তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি। দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে কথিত স্বর্ন চুরির অভিযোগ এনে খুঁটির সাথে বাঁধা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেন দীন মোহাম্মদ। অথচ তাদের ঘরের দরজা ভাঙা বা স্বর্ন চুরির কোন ঘটনাই ঘটেনি। তাই তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দীন মোহাম্মদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
শিবির নেতা হামিদুর রহমান আজাদ বর্তমানেও জেলা ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। সে বগাদানা ইউনিয়নের চরবদরপুর গ্রামের সিরাজ নেতার বাড়ির বেলাল হোসেনের ছেলে। জামায়াত নেতা আবদুল হাই একই ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের আশ্রাফ আলী কবিরাজ বাড়ির বাসিন্দা।

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে হামিদুর রহমান আজাদ ও খুঁটির সাথে বেঁধে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগে দীন মোহাম্মদকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

(এনকে/এসপি/আগস্ট ৩১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test