E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চাঁদপুরে সেুলন কর্মচারীরর হাতে ব্যবসায়ী খুন

২০২১ সেপ্টেম্বর ১৬ ১৪:৫১:৪৪
চাঁদপুরে সেুলন কর্মচারীরর হাতে ব্যবসায়ী খুন

উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর : চাঁদপুর শহরের নতুনবাজার এলাকার ঘোষপাড়ার বাসিন্দা দধি ব্যবসায়ী নারায়ণ ঘোষকে হত্যা জবাই করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনা সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর শহরের নতুনবাজার এলাকার ঘোষপাড়ার বাসিন্দা নারায়ণ ঘোষ (৬০)কে হত্যা করে লাশ বস্তা করে বিপনীবাগ বাজারের পাবলিক টয়লেটের কাছে ফেলে রেখে যায়।

পরে বিপনীবাগ বাজারের ব্যবসায়ী মেসার্স শরীফ স্টীল ওয়ার্কস মালিক ১৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে দোকান খুলতে গিয়ে বস্তা দেখে সন্দেহ হলে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশকে জানায়। তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর শহরের নতুন বাজার ৮নং ওয়ার্ডের ঘোষপাড়ার ঘোষ বাড়ির বাসিন্দা নারায়ণ ঘোষ (৬০) বংশগতভাবে দধি ব্যবসা করে আসছে। চাঁদপুর শহরে একজন দধি ব্যবসায়ী হিসেবে বেশ পরিচিত। তিনি শহর ও শহরতলীতে বিভিন্ন দোকানে পাইকারি দধি সরবরাহ করতেন। বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে দধি দিয়ে তাগাদা করে আসতে অনেক সময় সন্ধ্যা হয়ে যেতো। ফলে সামান্য কিছুটা সময় চাঁদপুর শহরের বিপনীবাগ বাজারের পৌর সুপার মার্কেটের নীচে জনৈক সেলুন ব্যবসায়ী কৃষ্ণার মালিকানাধীন টিপটপ সেলুনে সময় কাটাতেন। এভাবে সেলুন মালিক ও কর্মচারীদের সাথে নিহত নারায়ণ ঘোষের সখ্যতা গড়ে উঠে।

এ অবস্থায় উক্ত টিপটপ সেলুনে গত দুবছর পূর্বে কুমিল্লার রাজু নামে কর্মচারী চাকুরি নিয়ে এই সেলুনে কাজ করে। নারায়ণ ঘোষ সেলুনে আসা যাওয়ার ফলে তার সাথে চাচা ভাতিজা হিসেবে বেশ সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। জানা যায়, রাজু এই সম্পর্কের কারণে প্রায়ই অর্থনৈতিক সংকটে পড়লে দধি ব্যবসায়ী নারায়ণ ঘোষ থেকে টাকা ধার নিতো। ফলে সম্পর্কের গভীরতায় সেলুন মালিক কৃষ্ণার চেয়ে কর্মচারী রাজুর সাথে ঘনিষ্ঠতায় রুপ নেয়। ফলে নারায়ণ ঘোষ শহরের আর কোথায় ও আড্ডা বা সময় কাটাতো না, শুধু মাত্র বিপনীবাগ টিপটপ সেলুন ব্যতিত।

এদিকে নিহতের সুমন ও রাজু ঘোষ জানান, তাদের বাবা কখোনই রাত সর্বোচ্চ ১০টার পর বাইরে থাকেনি। যতো সমস্যা হোক না কেনো ১০টার মধ্যে বাসায় ফিরেন। কিন্তু গতকাল ১৫ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকেলে ব্যবসার কাজে বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিদিষ্ট সময় পার হয় যাওয়ার পর দু'ছেলেই নারায়ণ ঘোষকে নানা স্থানে খুঁজতে থাকে। এমনকি তার একমাত্র অবসর সময় কাটানো টিপটপ সেলুনে একাধিক বার খোঁজ খবর নিয়েও কোনো খোঁজ পায়নি।
এক পর্যায়ে সেলুন মালিক কৃষ্ণাকে বিষয়টি অবহিত করা হলে তিনি বলেন, চাচার সাথে আজ আমার দেখা হয়নি। এই অবস্থায় নিহত নারায়ণ ঘোষের ছোট ছেলে বাবাকে না পেয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় অভিযোগ করার জন্য দুবার গিয়ে আত্মেীয়-স্বজনদের পরামর্শে ফিরে আসেন। সকলের একটাই কথা ছিলো রাত পর্যন্ত দেখি, সকালে না হয় আইনগত ব্যবস্থা নেবো। এমন কথায় তারা আর আইনগত ব্যবস্থা বা থানায় অভিযোগ বা জিডি করেননি বলে এ প্রতিনিধিকে জানান।

অপরদিকে সেলুন মালিক কৃষ্ণা সব সময় রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০ =টার মধ্যে বাসায় চলে যান। তাই অন্যান্য দিনের ন্যায় সেলুন ব্যব একই সময়ে চলে যাওয়ায় সেও বিষয়টি জানে না বলে জানান। কিন্তু দোকানের কর্মচারীরা কাস্টমার থাকলে দেরী বা অধিক দেরীতে দোকান বন্ধ করেন। অনেক সময় দোকানে কর্মচারীরা রাতে ঘুমানোর কারণে দোকান অধিক সময় বন্ধ করা হয় বলে জানান দোকান মালিক কৃষ্ণা।

রাজুই হত্যাকারী, নিশ্চিত হয় যেভাবে : নারায়ণ ঘোষের হত্যাকারী রাজুই, এটিই নিশ্চিত তা পরিস্কার জানা গেছে। রাত যখন গভীরে যাচ্ছে নারায়ণ ঘোষ বাসায় ফিরছে না। তখন তার স্বজনরা টিপটপ সেলুনসহ নানা স্থানে খুজতে থাকে। নিহতের ছেলেরা কয়েকবার হত্যাকারী রাজুকে নারায়ণ ঘোষ সেলুনে আসছে কি না যতবার জানতে চেয়েছে ততবারই উত্তর ছিলো একটাই। চাচা আসছিলো সেভ করে আমার কাছ থেকে চলে গেছে। নিহতের ছেলেরা জানান, এই কথাগুলো বলার সময় হত্যাকারী রাজুর চোখ মুখে ছিলো একটা আতঙ্কের ছাপ। এভাবেই হত্যাকারী গভীর রাত পর্যন্ত সময় কাটিয়ে বিশেষ করে রাত ১টার দিকে শুরু হয় লাশ গুম করার কাজ।

এদিকে বিপণীবাগ বাজারের পশ্চিমাংশের নাইটগার্ড মোঃ ইসমাইল জানান, রাত ১টা বা দেড়টার দিকে টিপটপ সেলুন কর্মচারী রাজু সেলুনের ফ্লোরসহ পুরো সেলুন একাই পরিস্কার করছে। এ তাও পুরো সার্টার বন্ধ করে। তখন সেলুনের লাইট জ্বলছে এবং ফ্যান চলছে। এই অবস্থায় ভেতরে থেকে শব্দ হওয়ায় আমি দোকানের সামনে গিয়ে কে, বা কী করছে জানতে চাইলে রাজু সামান্য সার্টার খুললে আমি দেখি সে পানি দিয়ে ফ্লোর মুছতেছে। তখন আমি জানতে চাই, একা একা কী সম্ভব পুরো দোকান পরিস্কার করা। সে আমাকে বললো কী করবো চাচা, একাই করছি। এরপর পূজা কবে জিজ্ঞেস করলে বলে পরশু দিন। সে খুব কাজ করছে এবং কয়েকবার পানি ঢেলে পরিস্কার করছে এ অবস্থা দেখে আমি চলে যাই। তখন পর্যন্ত বুঝার কোনো উপায় খুঁজে পাইনি।

এরপর রাত ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে দূর থেকে দেখি সে হাতে করে ব্যাগ বা বস্তার মতো খুব ওজন একাই সেলুন থেকে বের করে বিপনীবাগ পুরনো মার্কেটের পাবলিক টয়লেটের পরিত্যক্ত স্থানে কী যেনো ফেলে আসে। আমি তখন কী করো এটা? সে আমাকে বললো ময়লা আর্বজনা, আর কী? চাচা।

নাইটগার্ড ইসমাইল বলেন, এখানে সন্দেহ করে এটা দেখার কিছু নাই। কারণ দোকান পরিস্কার করলে এভাবেই দোকানীরা ময়লা-আর্বজনা ফেলে আসে। এরপর থেকেই আমার কাছে বিষয়টি কেমন জানি মনে হয়। মনটা খারাপ লাগতেছে, চুপচাপ করে আমি বসে থাকি।

এদিকে সেলুন কর্মচারী রাজুকে দেখলাম বেশ কিছু সময় ধরে দোকানের সামনেই ঘুরাফেরা করছে। ফজরের আজানের পর আলো বা ফর্সা হওয়ার পরপরই তাকে শার্ট পড়া দেখলাম। পরক্ষণেই রাজুকে আর দেখনি। সকাল ৮টা সাড়ে ৮টার দিকে বাজারের ব্যবসায়ী মেসার্স শরীফ স্টীল ওয়ার্কসের মালিক শরীফ ভাই দোকান খুলতে এসে দেখে দোকানের পাশ্বে পাবলিক টয়লেটের পথে প্লাস্টিকের বস্তায় খুব ভালো করে পেঁচানো কী। এক পর্যায়ে তিনিসহ বাজারের বেশ কজন বস্তাটি রাখার স্থানে রক্ত এবং বস্তা থেকে রক্ত বের হওয়া দেখে নিশ্চিত হন, কোনো মানুষকে হত্যা করে কেউ বস্তায় রেখে গেছে।

তাৎক্ষণিক বিষয়টি চাঁদপুর সদর মডেল থানাকে জানালে প্রথমে থানার টহল বাহিনী পরে মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রশীদ, ওসি তদন্ত সুজন বড়ুয়া ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ বস্তাবন্দি মানুষের লাশ নিশ্চিত হওয়ার পর জেলা পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ পিপিএম বারসহ ঊধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করলে তাৎক্ষণিক পুলিশের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থলে হাজির হন। এ খবর লিখা পর্যন্ত রাজুকে আটক করা সম্ভব হয় নি।

(ইউ/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test