E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কালীগঞ্জে জমির বিরোধে একই পরিবারের চারজনকে পিটিয়ে জখম

৭ দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ, হামলাকারিদের মিথ্যা মামলায় ভুক্তভোগীক একজনকে জেলে পাঠিয়েছে পুলিশ

২০২১ সেপ্টেম্বর ১৮ ১৬:২৮:০০
৭ দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ, হামলাকারিদের মিথ্যা মামলায় ভুক্তভোগীক একজনকে জেলে পাঠিয়েছে পুলিশ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ এসিড নিক্ষেপ মামলার আসামীরা এসিড আক্রান্ত অহেদ ঢালীসহ তার পরিবারের চার সদস্যকে পিটিয়ে জখম করেছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর সকালে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার মারকা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে তারা কালীগঞ্জে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

অভিযোগ পুলিশ অহেদ ঢালী ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর হামলার ঘটনায় মামলা না নিয়ে প্রতিপক্ষদের সাজানো মামলা রেকর্ড করে হয়রানি করে চলেছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন মারকা গ্রামের ইছতুল্লাহ ঢালীর ছেলে অহেদ ঢালী জানান, প্রতিবেশী ওহাব ঢালী ও অদুদ ঢালীর সঙ্গে তার জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। বর্তমানে কালীগঞ্জ সহকারি জজ আদালতে সীমানা নির্ধারণের একটি মামলা রয়েছে। জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ২০০৮ সালের ১৩ এপ্রিল প্রতিপক্ষ ওহাব ঢালী ও তার লোকজন তাকে (অহেদ) এসিড মেরে ঝলসে দেয়। এ ঘটনায় তার ভাইপো ইসহাক ঢালী বাদি হয়ে ওহাব ঢালীসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু আসামীরা সাক্ষীদের হুমকি ধামকি দেওয়ায় মামলা বেশীদূর গড়ায়নি। সেকারণে এসিড নিক্ষেপকারিরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

অহেদ ঢালী আরো জানান, তিনি তার বসতভিটা সংলগ্ন জমিতে সম্প্রতি একটি ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। প্রতিপক্ষরা উপপরিদর্শক হাসানুজ্জামান ও সহকারি উপপরিদর্শক তরুন অধিকারীকে হুমকি ধামকি দিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করে। উপসহকারি পরিদর্শক তরুন অধিকারী তাকে ঘর নির্মাণ না করার জন্য হুশিয়ারি দিয়ে যান। একপর্যায়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টার দিকে প্রতিপক্ষ ওহাব ঢালী, তার স্ত্রী রাশিদা খাতুন, তাদের ছেলে অদুদ ও লিটন, অদুদের স্ত্রী হীরাসহ অজ্হাতনামা তিনজন তাদের নির্মাণাধীন বাড়ি ভাঙচুর করতে থাকলে তিনিসহ তার পরিবারের সদস্যরা বাধা দেন।

এ সময় ওহাব ঢালীসহতার সঙ্গে থাকা লোকজন লোহার রড, বাঁশের লাঠি দিয়ে তাকেসহ স্ত্রী মোমেনা খাতুন, ছেলে আলাউদ্দিন, পুত্রবধু ফাহিমা খাতুনকে পিটিয়ে জখম করে। লোহার রডের আঘাতে তার ডান পায়ের হাঁটুর উপরে, মুখমণ্ডলে ও মেরুদণ্ডে মারাত্মক জখম হয়। স্ত্রী মোমেনার বাম হাতের হাড় ভেঙে যায়। পুত্রবধু ফাহিমার মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। ছেলে আলমগীরের বুকে ও পিঠে জখম করা হয়। স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়।

অহেদ ঢালী অভিযোগ করে বলেন, হামলাকারিদের মধ্যে ওহাব ঢালী, রাশিদা, ওদুদ, লিটন ও হীরা কোন আঘাত ছাড়াই কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। পরদিন তিন জন পারিয়ে গেলেও রাশিদা ও হীরা ভর্তি থেকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ পুলিশ আব্দুল ওহাব ঢালীর মিথ্যা অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করলেও তার দায়েরকৃত অভিযোগ শনিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত গ্রহণ করেনি। এমনকি আব্দুল ওহাবের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার ছেলে আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে সহকারি উপপরিদর্শক তরুন অধিকারী হাজতে পাঠিয়েছে। বৃহস্পতিবার তার ছোট ছেলে আলমগীর ও জেল হাজতে থাকা আলঅউদ্দিন এক সাথে জামিনে মুক্ত হয়েছে। তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেন। তবে কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক হাসানুজ্জামান তাকে দেখতে শনিবার দুপুর ১২টায় হাসপাতালে আ বে বলেও সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আসেননি।

মারকা গ্রামের শাহজাগান গাজী, রাবেয়া খাতুন, জনাব আলীসহ কয়েকজন জানান, অহেদ ঢালীর উপর যারা সে;িন এসিড ছুঁড়েছিল আবার তারাই পুলিশকে ম্যানেজ করে আবারো গামলা চালিয়েছে। অথচ মামলা খেয়েছে অহেদ ঢালীর পরিবারের সদস্যরা।

শুক্রবার দুপুরে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেয়ে দেখা গেছে অহেদ ঢালীর ডান গালে কাটা জায়গায় সেলাই দেওয়া হয়েছে। লেঅহার রড দিয়ে ফাঁটিয়ে দেওয়া ডান হাঁটুর উপরে নয়টি সেলাই করা হয়েছে। মেরুদণ্ডে আঘাতের জন্য অহেদ ঢালীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে এক্স-রে করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্ত্রী মোমেনা বাম হাতের এক্স-রে করার পর হাড় ভেঙে গেছে বলে প্লেট দেখালেন। পুত্রবধু ফাহিমার মাথার মাছখানে ভারী জিনিস দিয়ে আঘাতের ফলে ১৩টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে উপস্থিত থাকা আলমগীর হোসেন তার বুকে ও পিঠে কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন দেখালেন। মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা প্রতিপক্ষের রাশিদা ও হীরা সাংবাদিকদের দেখে তড়িঘড়ি বেরিয়ে যেয়ে নীচে অবস্থানকারি ওহাব ঢালীর সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। এ সময় সেবিকা হালিমা খাতুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি ওহাব ঢালী, ওদুদ ঢালী, রশিদা, হীরা, লিটন এর শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন আছে বলে জানাতে পারেননি। তবে কেন রাশিদা ও হীরা ভর্তি আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি কর্তৃপক্ষের এক্তিয়ার।

হাসপাতালের মাঠে দেখা হওয়া ওহাব ঢালী ও রাশিদা খাতুন বলেন, মার তো কম হয়েছে, আলাউদ্দিনকে জেলে পাঠিয়েছি। অহেদকে ধরার জন্য পুলিশকে ম্যানেজ করেছি। তাকে ধরা শুধু সময়ের ব্যাপার। ইচ্ছা করলেই অহেদ থানায় মামলা করতে পারবে না। পুলিশ ও সাংবাদিকরা তার পাশে রয়েছে।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার সহকারি উপপরিদর্শক তরুন অধিকারী বলেন, তিনি সেকেণ্ড অফিসার হাসানুজ্জামানের নির্দেশে অহেদ ঢালীর বাড়িতে যেয়ে ঘর নির্মাণ বন্ধ করতে বলে পরদিন থানায় অঅসতে বলেছিলেন উভয়পক্ষকে। কিন্তু অহেদ ঢালীর ছেলেরা তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। অদুদ ঢালীর মামলায় আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে অহেদ ঢালী ও তার পরিবারের সদস্যরা জখম হয়েছিল কিনা তা তার জানা নেই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তি গোলাম মোস্তফা শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি তার স্মরণে নেই। অভিযোগকারি তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে ঘটনার সত্যতা পেলে অবশ্যই মামলা রেকর্ড করা হবে।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test